শনিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশনা

মানবাধিকার রক্ষায় অবদান রাখবে

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হাতে আটকাবস্থায় কেউ যাতে নির্যাতন ও অপমৃত্যুর শিকার না হয় তা নিশ্চিত করারই রায় দিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। বিনা পরোয়ানায় ৫৪ ধারায় গ্রেফতার ও পুলিশি রিমান্ডের প্রশ্নে ১৩ বছর আগে দেওয়া হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে আপিল বিভাগের যে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে তাতে পুলিশ ও নিম্ন আদালতের বিচারকদের জন্য বেশ কিছু নির্দেশনা মানার কথা বলা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য দেওয়া ১০ দফা নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতারের পর অবিলম্বে একটি মেমোরেন্ডাম তৈরি এবং তাতে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির স্বাক্ষর গ্রহণ করতে হবে। মেমোরেন্ডামে গ্রেফতারের তারিখ এবং সময় উল্লেখ থাকতে হবে। কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করলে ওই ব্যক্তির নিকটাত্মীয় বা কোনো বন্ধুকে তা জানাতে হবে। গ্রেফতারের সময় ও স্থান এবং কোথায় আটক রাখা হয়েছে সে বিষয়টিও জানাতে হবে। আটককৃত ব্যক্তির নিকটাত্মীয় বা বন্ধুর কাছে অভিযোগকারীর নাম ও অন্যান্য তথ্য প্রকাশ করতে হবে। বিচারকদের জন্য দেওয়া নির্দেশনায় বলা হয়েছে, গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৭(২) ধারা মোতাবেক কেস ডায়েরি ছাড়াই উপস্থাপন করা হলে ম্যাজিস্ট্রেট, আদালত বা ট্রাইব্যুনাল ওই ব্যক্তিকে ধারা ১৬৯ অনুযায়ী মুক্তি দেবেন। আগে থেকে হেফাজতে আছে এমন ব্যক্তিকে সুনির্দিষ্ট মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করা হলে ওই ব্যক্তিকে যদি মামলার ডায়েরিসহ আদালতে হাজির করা না হয় এবং গ্রেফতারের আবেদন যদি দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত না হয় এবং যদি ভিত্তিহীন হয়, তবে আদালত আবেদন প্রত্যাখ্যান করবে। বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে আটক ব্যক্তির ওপর নির্যাতন এবং মৃত্যুর ঘটনা ঐতিহ্যের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানি দুঃশাসনে এ ধরনের ঘটনা অহরহ ঘটেছে। স্বাধীনতার পরও সে খারাপ নজির থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।  গ্রেফতার ও জিজ্ঞাসাবাদ সম্পর্কে সর্বোচ্চ আদালতের বেঁধে দেওয়া নীতিমালা সংশ্লিষ্টদের বেপরোয়া আচরণে বাদ সাধবে বলে আশা করা যায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সুনাম পুনর্গঠনে সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা যথাযথভাবে পালনের উদ্যোগ নেওয়া হবে এমনটিই কাম্য।

সর্বশেষ খবর