শনিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
বায়তুল মোকাররমের খুতবা

নারীদের পর্দা এবং ইভ জিটিং প্রতিরোধে ইসলামের নির্দেশনা

মুফতি এহসানুল হক জিলানী পেশ ইমাম, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ।

নারীদের পর্দা এবং ইভ জিটিং প্রতিরোধে ইসলামের নির্দেশনা

ইসলামে পর্দা ফরজ। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তাত্পর্যমণ্ডিত এবং বিজ্ঞানসম্মত। কোরআনে কারিমে বিষয়টির ওপর অত্যন্ত কঠোরভাবে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নির্দেশনা প্রদান করেছেন। সব মুসলিম নর-নারীর জন্য পর্দার বিধানটি মেনে চলা ইমানি দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে পালনীয়। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনের সূরা নূরের ৩১নং আয়াতে ইরশাদ করেন— ‘মুমিনদের বলুন : তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করে, এটাই তাদের জন্য অধিকতর পবিত্র। তারা যা কিছু করে আল্লাহ সে বিষয়ে অবহিত এবং মুমিন নারীদের বলুন তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। তারা যেন স্বাভাবিকভাবে যা প্রকাশিত তা ব্যতীত তাদের সৌন্দর্য মাথার কাপড় দিয়ে আবৃত করে।’

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ আরও ইরশাদ করেন— ‘হে নারীগণ, তোমরা তোমাদের ঘরের মধ্যে অবস্থান কর। পূর্ববর্তী অন্ধকার যুগের মতো সাজসজ্জা করে পরপুরুষের সম্মুখে বের হইও না। নামাজ আদায় কর, জাকাত দাও এবং আল্লাহ ও তার রসুলের আনুগত্য কর।’ (সূরা আহযাব : ৩৩)

হাদিস শরিফে রসুল আকরাম (সা.) ইরশাদ করেন— ‘নারী গোপনীয় সত্তা, যদি সে প্রকাশ্যে (হাটে-মাঠে) বের হয় তবে শয়তান উঁকিঝুঁকি দিয়ে তার দিকে তাকায়। যে নারী তার ঘরের মধ্যে অবস্থান করে সে আল্লাহর রহমতের অধিক নিকটবর্তী হয়।’ (তিরমিজি)

এসব আয়াত ও হাদিসের ভিত্তিতে মুসলিম উম্মাহ একমত যে, মাহরাম ছাড়া সব আত্মীয় ও অনাত্মীয় পুরুষের সামনে মুমিন নারীর পুরো দেহ আবৃত করে রাখা ফরজ। সম্মানিত হাজেরীন, আল-কোরআন হাদিসের এসব সুস্পষ্ট নির্দেশনা সম্পর্কে একশ্রেণির মুসলমানের ধারণাও ভ্রান্ত। তারা অজ্ঞতাবশত মনে করে থাকেন পর্দার বিশেষ কোনো বিধান নেই। এ বিষয়ে আলেম বা প্রচারকদের অভিমতকে তারা ধর্মান্ধতা ও বাড়াবাড়ি বলে উড়িয়ে দেন। কেউ আবার মনে করেন পর্দা করা ভালো তবে বেপর্দা চলাফেরা করাও কোনো কঠিন অপরাধ নয়। এমনকি বলে থাকেন পর্দা নিজের কাছে, মনের পর্দা বড় পর্দা। এসব ধারণা আল্লাহর কোরআন ও রসুল (সা.)-এর হাদিসকে অস্বীকার ও অবিশ্বাস ছাড়া আর কিছুই নয়।

সম্মানিত হাজেরীন, ইহুদি নাসারাদের অন্ধ অনুকরণ আমাদের ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। অশালীন ও অশ্লীল জীবনযাপনের কারণে পাশ্চাত্যের মানুষ তাদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনের  প্রশান্তি হারিয়েছে। একই কারণে তাদের পারিবারিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে। অতএব, মুসলিম নর-নারীর সতর্ক হওয়া জরুরি এবং ভ্রান্ত পথ ও মতকে পরিহার করে শান্তি ও নৈতিকতার পথ তথা ইসলামের নির্দেশিত পথ ও মতকে অপরিহার্য মনে করা উচিত।

একটি কথা মনে রাখা দরকার, পর্দা অর্থ অবরুদ্ধ জীবনযাপন নয়। মুসলিম নারীগণ শালীন পোশাকে দেহ আবৃত করে চলাফেরা করতে শরিয়তে কোনো বাধা নেই। মুসলিম মহিলারা রসুল (সা.) ও খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগ থেকেই ইসলামী পোশাক ও শালীনতাসহ ধর্মীয়, পারিবারিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতেন। বর্তমান ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোতে হাজার হাজার অমুসলিম যুবতী ইসলাম গ্রহণ করে স্কার্ফ পরিধান করে পুরো দেহ আবৃত করে চলাফেরা করেন। তারা সবাই স্বীকার করছেন— ইসলামী পর্দাই নারী প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। বেপর্দার মধ্যে রয়েছে মানসিক অস্থিরতা ও অশান্তি। পর্দা পালনের মধ্যেই রয়েছে নারীর মানসিক তৃপ্তি, প্রশান্তি, আনন্দ ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা।

ইভ টিজিং একটি অত্যন্ত ঘৃণ্য ও নোংরা আচরণ। একজন অবোলা নারীকে উত্ত্যক্ত করা, কষ্ট দেওয়া বা লাঞ্ছিত করা জঘন্যতম অপরাধ ও ধৃষ্টতা। এটি কোনো সুস্থ বিবেকবান ও ভদ্র মানুষের কাজ নয়। একজন নারী, একটি নিরপরাধ মেয়ে, একটি কন্যাশিশু সে তো আমার মায়ের জাত, সে তো আমার বোন অথবা বোনের বা ভাইয়ের কন্যাশিশু। আজকে যদি তাকে উত্ত্যক্ত করা হয়, নির্যাতন করা হয়, এসিড নিক্ষেপ করা হয়, কুপিয়ে মারা হয়, কালকে আমার গর্ভধারিণী মা, সহোদর বোন অথবা কলিজার টুকরা কন্যা সন্তানটির ওপর এই ভয়ঙ্কর নির্যাতনটি সংঘটিত হতে পারে। বিষয়টি নিয়ে একটু ভাবলেই যারা সমাজে এই অপরাধগুলো করছে তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে আশা করা যায়।

আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন— ‘হে মানবকুল তোমরা শান্ত পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি কর না।’

আল্লাহ আরও বলেছেন— ‘আল্লাহ অসদাচরণকারীদের (সন্ত্রাসীদের) ভালোবাসেন না।’ সেহেতু আল্লাহ যাদের পছন্দ করেন না, ভালোবাসেন না তাদের ইহকালেও ধ্বংস অনিবার্য ও পরকালেও জাহান্নামের কঠিন শাস্তি অবধারিত। আল্লাহ সমাজের ভ্রান্ত ও পথহারা মানুষগুলোকে হেদায়েত দান করুন আর মা-বোনদের ইজ্জত-সম্ভ্রমকে হেফাজত করুন।  আমাদের সমাজ হোক সুন্দর আর পৃথিবী হোক নিরাপদ।  আমিন।

সর্বশেষ খবর