প্রতি বছরই কমছে কৃষিজমি। অপরিকল্পিতভাবে বাসভবন ও স্থাপনা নির্মাণের পাশাপাশি নদীভাঙনেও চাষযোগ্য জমি হ্রাস পাচ্ছে। পরিকল্পনাহীন নগরায়ণের কারণেও ক্রমান্বয়ে কমছে কৃষিজমি। চিংড়ি চাষ ও ইটের ভাটা কেড়ে নিচ্ছে হাজার হাজার একর কৃষিজমির অস্তিত্ব। গত ৪৫ বছরে ঘরবাড়ি ও স্থাপনা নির্মাণে দেশের প্রায় অর্ধেক কৃষিজমি ব্যয় হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বছরে যে পরিমাণ কৃষিজমি কমছে, তার অর্ধেকই চলে যাচ্ছে অনুৎপাদনশীল খাতে। এ অবস্থায় কৃষিজমির অন্য খাতে ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের তাগিদ দিয়েছেন তারা। কৃষি জমি সংরক্ষণে আইন থাকলেও তা প্রয়োগের কার্যকর ব্যবস্থা না থাকায় কৃষি জমি আশঙ্কাজনক হারে কমছে। এ অবস্থার অবসানে উর্বর ও কৃষি উপযোগী জমির ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে সক্ষম এমন আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে বারবার তাগিদ দেওয়া হলেও সরকারের পক্ষ থেকে গ্রহণযোগ্য কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ‘জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতি-২০১০’ এবং ‘কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি জোনিং আইন-২০১০’ অনুযায়ী কোনো কৃষিজমি ভরাট করে বাড়িঘর, শিল্পকারখানা, ইটভাটা বা অন্য কোনো অকৃষি স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না এমন একটি আইন থাকলেও এর শাস্তির বিষয়টি স্পষ্ট নয়। ভূমি জরিপ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, ১৯৭১ সালে দেশে আবাদি জমির পরিমাণ ছিল ২ কোটি ১৭ লাখ হেক্টর; ২০০৩ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৭০ লাখ ৮৭ হাজার হেক্টর। গত এক যুগে জমির পরিমাণ যে আরও হ্রাস পেয়েছে তা সহজে অনুমেয়। বিভাগওয়ারি অকৃষি খাতে জমি চলে যাওয়ার প্রবণতা চট্টগ্রাম বিভাগে সবচেয়ে বেশি। এ বিভাগে প্রতি বছর ১৭ হাজার ৯৬৮ হেক্টর জমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। এ ছাড়া রাজশাহী বিভাগে ১৫ হাজার ৯৪৫, ঢাকায় ১৫ হাজার ১৩১, খুলনায় ১১ হাজার ৯৬, রংপুরে ৮ হাজার ৭৮১, বরিশালে ৬ হাজার ৬৬১ হেক্টর প্রতি বছর অকৃষি জমিতে পরিণত হচ্ছে। অকৃষি খাতে কৃষিজমির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে শহর-গ্রাম নির্বিশেষে বহুতল আবাসন প্রকল্প গ্রহণের কথা ভাবতে হবে। কৃষিজমিতে ইটের ভাটা কিংবা চিংড়ি চাষ যাতে না হয় সেদিকেও নজর দিতে হবে। দেশের সমুদ্র উপকূলে ক্রসবাঁধ দিয়ে ভূমি উদ্ধারের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। এ পদ্ধতিতে গত চার দশকে সমুদ্রপ্রান্ত থেকে এক হাজার বর্গকিলোমিটার জমি উদ্ধার করা হয়েছে। কৃষি জমির অপব্যবহার রোধে সুস্পষ্ট আইন প্রণয়নের কথাও ভেবে দেখা উচিত।
