মঙ্গলবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

নাসিরনগর বিড়ম্বনা

অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করুন

সাম্প্রদায়িকতাবাদী চক্রের হোতারা এলাকাবাসী ও পুলিশের সতর্ক প্রহরার মধ্যেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে এক হিন্দুধর্মাবলম্বীর বাড়িতে আগুন লাগিয়েছে। রাতব্যাপী পুলিশ ও গ্রামবাসীর প্রহরার পর ভোররাতে গ্রামবাসী ঘুমাতে যাওয়ার পর পরই রবিবার ভোরে অগ্নিসংযোগের ওই ঘটনা ঘটে। যে ঘরে আগুন লাগানো হয় সে ঘরে কেউ না থাকায় হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। হিন্দুধর্মাবলম্বীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির উদ্দেশ্যে যে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটানো হয়েছে সে বিষয়টি এলাকাবাসীর কাছেও স্পষ্ট। হিন্দুধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলার ঘটনার কলকাঠি নেড়েছে যে অশুভশক্তি তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় একের পর এক ষড়যন্ত্র চালানোর সাহস পাচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার যে অভিযোগ তোলা হয়েছিল তা ছিল সাম্প্রদায়িকতাবাদী অপশক্তির সাজানো নাটক। দেশে অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টির অসদুদ্দেশ্যে সামান্য অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন একজন জেলে কিশোরের ফেসবুক হ্যাক করে ধর্ম অবমাননাকর ছবি পোস্ট করা হয়।

তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার করে এ ধরনের অপরাধ যে দুনিয়ায় প্রায়ই সংঘটিত হয় তা একটি ওপেন সিক্রেট। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করার পরও হিন্দুধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘর, মন্দিরে একের পর এক হামলা চালানোর ঘটনা ছিল উদ্দেশ্যমূলক ও সুপরিকল্পিত। সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও উপাসনালয়ে ঘৃণ্য হামলার পেছনে একটি বিশেষ দলের অন্তঃকোন্দল দায়ী বলে ব্যাপকভাবে সন্দেহ করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রহরার মধ্যেও কীভাবে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের ঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে এবং এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের কোনো ব্যর্থতা আছে কিনা, তা উদ্ঘাটন হওয়া উচিত। দুর্বৃত্তরা পুলিশ প্রহরার মধ্যেও যা ইচ্ছা তাই করার স্বাধীনতা পাবে তা সভ্য সমাজে অচল। দেশের অসাম্প্রদায়িক সুনাম অক্ষুণ্ন রাখতে বিভেদকামী শক্তির থাবা ভাঙতে এগিয়ে আসতে হবে। ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে একসময় বলা হতো উপমহাদেশের সাংস্কৃতিক জগতের রাজধানী। তিতাসপারের সেই আলোকিত জনপদ যে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে তা দুর্ভাগ্যজনক। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সুনামের স্বার্থেই সাম্প্রদায়িকতাবাদী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জেলার সচেতন মানুষ রুখে দাঁড়াবে— আমরা এমনটিই দেখতে চাই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর