শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

হুমকির মুখে বাংলাদেশের টিভি চ্যানেল

হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ

হুমকির মুখে বাংলাদেশের টিভি চ্যানেল

গণমাধ্যম বা মিডিয়া হলো সমাজ ও রাষ্ট্রের দর্পণ। মিডিয়ার মাধ্যমে সমাজ ও রাষ্ট্রের চালচিত্রসহ বিনোদন জগতের সব উপকরণের সঙ্গে আমরা পরিচিত হই। পৃথিবীর কোথায়, কখন কী ঘটছে সে খবরাখবর নিমেষেই আমাদের কাছে পৌঁছে দেয় গণমাধ্যম। আধুনিক মিডিয়ার কল্যাণেই আজ দেশে দেশে সময়ের বাঁকে বাঁকে পাল্টে গেছে যুগ, প্রসারিত করেছে মানুষের চিন্তাজগতের ভাবনা, এগিয়েছে সভ্যতা। মানুষকে নির্মল বিনোদন দেওয়ার পাশাপাশি রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনে সংঘটিত সব ঘটনার যৌক্তিক ও অর্থবহ রূপ দেওয়ার নিরলস কাজ করে যাচ্ছে গণমাধ্যম। আমাদের জানাশোনার পরিধিকে যেমন করেছে বিস্তৃত তেমন পরিশীলিত ও সংবেদনশীল চিন্তার খোরাকও বর্তমান যুগের মিডিয়া। তাই বলা যায়, আমাদের জীবনের আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে আছে মিডিয়া জগৎ। আবার মিডিয়ার স্বত্বাধিকারী বা মালিকসহ-কলাকুশলীরা এ মিডিয়াগুলো সুচারুরূপে পরিচালনা করছেন বলেই আমরা আজ সুষ্ঠু ও নির্মল বিনোদন পেয়ে থাকি। এমনকি সার্বিক মানবাধিকার রক্ষার ঘনিষ্ঠ ও শক্তিশালী সহচর হচ্ছে গণমাধ্যম।

এ প্রসঙ্গে বলা যায়, মিডিয়া বা স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল পরিচালনার জন্য যে বিপুল অর্থ ব্যয় হয় তা আসে বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপন থেকে। আমাদের এ ছোট দেশের বিজ্ঞাপনের বাজার খুব বেশি বড় নয় এবং এ বিজ্ঞাপন বাজার দিয়ে প্রায় ২৪টি চ্যানেলকে চলতে হচ্ছে। নতুন আরও কয়েকটি স্যাটেলাইট চ্যানেলও শুরু হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। স্বল্প পরিসরের এ বিজ্ঞাপন বাজারে দেশীয় স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোকে প্রতিযোগিতায় কোনোভাবে টিকে থাকতে হচ্ছে। আগে যেখানে ৩-৪টি টেলিভিশন চ্যানেল ছিল সে স্থলে ২ ডজন টিভি চ্যানেল চালু হওয়ায় প্রতিযোগিতার কারণে অনেক কম রেট নিয়ে এ স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো বিজ্ঞাপন প্রচার করতে বাধ্য হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পণ্যের বিজ্ঞাপন যদি অনৈতিকভাবে বিদেশি চ্যানেলগুলোয় চলে যায় তাহলে বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলো নিদারুণ আর্থিক সংকটে পড়বে। আমাদের পাশের দেশ ভারত একটা বিশাল দেশ এবং পণ্যের বিজ্ঞাপন বাজারও অনেক বড়। সেখানে বিজ্ঞাপন প্রচারের টাকার হারও অনেক বেশি। সে কারণে তারা ভালো ভালো অনুষ্ঠান নির্মাণ করতে পারে। কিন্তু আমাদের বিজ্ঞাপনের বাজার ছোট হওয়ায় ভালো অনুষ্ঠান নির্মাণ কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি টিভি চ্যানেলের সঙ্গে মালিক ছাড়াও সাংবাদিক, ক্যামেরাপারসন, অভিনয়শিল্পী, নাট্যকর্মী, অনুষ্ঠান নির্মাতা, নাট্যনির্মাতা, পরিচালক, প্রযোজক, বিজ্ঞাপন নির্মাতা, ব্রডকাস্টার, বিভিন্ন ধরনের টেকনিক্যাল-নন-টেকনিক্যাল কলাকুশলী যুক্ত থাকেন এবং তাদের সবার আয়ের সংস্থানও এ টিভি চ্যানেলের বিজ্ঞাপনদাতা থেকে প্রাপ্ত অর্থের মাধ্যমে হয়ে থাকে। তাই এ বিজ্ঞাপনের বাজার যদি কোনো শুভঙ্করের ফাঁকির মাধ্যমে বিদেশি চ্যানেলগুলোর কাছে চলে যায় তাহলে এর সঙ্গে যুক্ত মালিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সবাই কর্মহীন হয়ে পড়বেন। গুটিকয় ব্যক্তির উদ্যোগে পরিচালিত এসব কোম্পানির মাধ্যমে দেশীয় বিজ্ঞাপনের বাজার বিদেশি টিভি চ্যানেলগুলো নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে সম্প্রতি ‘মিডিয়া ইউনিট’ নামে নতুন সংগঠন আত্মপ্রকাশ করেছে। ৫ নভেম্বর টেলিভিশন মালিক, শিল্পী ও কলাকুশলীদের সমন্বয়ে নতুন এ সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। একই দিন সংগঠনটি ঢাকা ক্লাবে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে নভেম্বরের মধ্যে বিদেশি চ্যানেলে দেশীয় বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ এবং বাংলাদেশে বিদেশি চ্যানেল প্রচারের জন্য পাশের দেশের মতো যৌক্তিক ডাউনলিংকিং ফি প্রদানসহ বেশ কয়েকটি দাবি সরকারের কাছে উত্থাপন করে। একইভাবে বিদেশি চ্যানেলে দেশীয় কোম্পানির বিজ্ঞাপন প্রচার এবং বাংলায় ডাবিংকৃত বিদেশি সিরিয়াল বন্ধসহ পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ফেডারেশন অব টেলিভিশন প্রফেশনাল অর্গানাইজেশন—এফটিপিও। তারা মনে করে, এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে কিছুদিনের মধ্যেই টিভি সাংবাদিক, শিল্পী ও কলাকুশলীরা বেকার হয়ে পড়বেন। যেখানে আগে ২৫ মিনিটের নাটক তৈরি করতে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা পাওয়া যেত সেখানে এখন ৭০-৮০ হাজার টাকার মধ্যে নাটক নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে শিল্পীসহ সংশ্লিষ্টদের আয় ক্রমান্বয়ে কমে যাচ্ছে।

 

 

অধিকন্তু দেখা যাচ্ছে, আমাদের দেশের দর্শকরা ভারতীয় টিভি চ্যানেলগুলো দেখতে পান কিন্তু ভারতের দর্শকরা আমাদের দেশের টিভি চ্যানেলগুলো দেখার সুযোগ পান না। আমাদের দেশে চ্যানেল ডাউনলিংকিংয়ের জন্য বছরপ্রতি ১.৫ লাখ টাকা প্রদান করলেই হয়। কিন্তু ভারতে কোনো বিদেশি টেলিভিশন চ্যানেল ডাউনলিংকিং করতে হলে নির্দিষ্ট নেট মূল্য প্রদান এবং ভারতীয় কোম্পানি আইন-১৯৫৬ অনুসারে নিবন্ধিত একটি কোম্পানির মাধ্যমে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হয়। আবেদনকারী কোম্পানিটির হয় চ্যানেলটির মালিকানা থাকতে হবে অথবা চ্যানেলটির একচেটিয়া বিপণন বিতরণ অধিকার থাকতে হবে। আবেদনকারী কোম্পানির প্রথম টেলিভিশন চ্যানেল ডাউনলিংকিংয়ের জন্য ৫ কোটি ভারতীয় রুপি এবং প্রতিটি অতিরিক্ত চ্যানেল ডাউনলিংকিংয়ের জন্য ২.৫ কোটি রুপি ন্যূনতম নেট মূল্য থাকতে হয়। আবার ডাউনলিংকিং করা চ্যানেলটি যে দেশ থেকে প্রেরিত হবে সেই দেশের অনুমতিদানকারী কর্তৃপক্ষের সম্প্রচার অনুমতিপত্র থাকতে হবে। চ্যানেল ডাউনলিংকিংয়ের অনুমতি মঞ্জুরের সময় ১০ লাখ ভারতীয় রুপি ফি দিতে হয়। এ ছাড়া নিবন্ধনের অনুমতির জন্য ফি হিসেবে ভারত থেকে প্রতিটি আপলিংকিং করা চ্যানেল ডাউনলিংকিংয়ের জন্য বছরে ৫ লাখ ভারতীয় রুপি এবং প্রতিটি বিদেশ থেকে আপলিংকিং করা চ্যানেল ডাউনলিংকিংয়ের জন্য বছরপ্রতি ১৫ লাখ ভারতীয় রুপি দিতে হয়। ১৪ জুন, ২০১২ সালে ভারতবর্ষে বাংলাদেশি টেলিভিশন চ্যানেল ডাউনলিংকিং বিষয়ে ভারতীয় হাইকমিশন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত তথ্য প্রদান করে। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, ভারত সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার নীতিমালা অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে টিভি চ্যানেল ডাউনলিংকিং করার ক্ষেত্রে ভারতে কোনো আইনগত বাধা নেই, বরং ওই নীতিমালার আলোকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সর্বতোভাবে সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত। তবে এখানে ধর্তব্যের বিষয় হলো, যেখানে তাদের অভ্যন্তরীণ চ্যানেল ডাউনলিংকিংয়ের জন্য বছরপ্রতি ৫ লাখ ভারতীয় রুপি প্রদান করতে হয়, সেখানে বিদেশি চ্যানেল ডাউনলিংকিংয়ের জন্য ১৫ লাখ ভারতীয় রুপি প্রদান করতে হয়, যা ৩ গুণ বেশি। অথচ এ ক্ষেত্রে আমাদের দেশে বিদেশি চ্যানেল ডাউনলিংকিংয়ের জন্য বছরপ্রতি ১.৫ লাখ টাকা প্রদান করতে হয়; যা তুলনামূলকভাবে যৌক্তিক নয়। এ ক্ষেত্রে বিদেশি টিভি চ্যানেল ডাউনলিংকিংয়ের বিষয়ে ভারতের মতো পলিসি নেওয়া আবশ্যক। আবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ বিভাগের গাইডলাইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট ক্ষমতাপ্রাপ্ত ডিলার বা এজেন্সির মাধ্যমে বিদেশি টিভি চ্যানেলগুলোয় বাংলাদেশি পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য অবাধ সুযোগ দেওয়া হয়েছে; যার ফলে নানা ফাঁক-ফোকরের মাধ্যমে বাংলাদেশের পণ্যের বিজ্ঞাপন বিদেশি টিভি চ্যানেলে প্রচারের নামে প্রচুর অর্থ বাংলাদেশ থেকে অন্য দেশে চলে যাচ্ছে।

মিডিয়া ইউনিটি জানায়, ভারতের স্টার জলসায় বাংলা সিরিয়াল প্রচারের বিরতিতে বাংলাদেশি যেসব পণ্যের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় তা শুধু বাংলাদেশের দর্শকরা দেখতে পান, ভারতীয় দর্শকরা এই বাংলাদেশি পণ্যের বিজ্ঞাপন দেখতে পান না। ভারতীয় দর্শকরা দেখতে পান শুধু ভারতীয় পণ্যের বিজ্ঞাপন। এক ধরনের অসাধু কৌশলের মাধ্যমে ভারতীয় টিভি চ্যানেল এ চালাকিগুলো করে আসছে। বিটিভিতে প্রচারিত হুমায়ূন আহমেদের ‘আজ রবিবার’ সিরিয়ালটি বর্তমানে হিন্দি ভার্সনে ভারতের স্টার প্লাসে প্রচার হচ্ছে। কিন্তু হিন্দি ভাষায় ডাবিং করা হলেও অভিযোগ রয়েছে ‘আজ রবিবার’ সিরিয়ালটি ভারতবর্ষে দেখা যায় না। বিজ্ঞাপনের নামে অর্থ নেওয়ার জন্যই সিরিয়ালটি শুধু বাংলাদেশের দর্শকদের জন্য প্রচার হচ্ছে। অন্যদিকে তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশের বাংলায় ডাবিংকৃত নাটক, সিরিয়াল, চলচ্চিত্র আমাদের টিভি চ্যানেলগুলোয় প্রচার হতে দেখা যায়। অতি অল্প টাকায় বিদেশ থেকে ডাবিংকৃত এসব অনুষ্ঠান বাংলাদেশি চ্যানেলগুলোয় প্রচার হওয়ায় আমাদের নিজস্ব নাটক, সিরিয়াল, সিনেমা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না। ভিন্ন সংস্কৃতির আগ্রাসনে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির বিশাল পরিমণ্ডল যাতে হারিয়ে না যায় সেদিকে সবার সচেতন হওয়ার সময় এসেছে। যদিও বর্তমান বৈশ্বিক যুগে কোনো কিছুকে আজ আটকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। পৃথিবীর সব প্রান্ত থেকে সবাইকে সবকিছু অবলোকনের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে এই গণমাধ্যম। তদুপরি সংস্কৃতিচর্চার ক্ষেত্রে কোনো প্রকার বৈষম্য ও অসম প্রতিযোগিতা থাকা উচিত নয়। যা আজ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দেখা যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সব ধরনের বৈষম্যের অবসান হওয়া জরুরি বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। ঘরে বসে ভারতীয় টিভি চ্যানেল যথাক্রমে স্টার প্লাস, স্টার জলসা ও জি বাংলা চ্যানেলে প্রচারিত অনুষ্ঠান দেখে বাংলাদেশের সামাজিক অপরাধপ্রবণতা যেমন আত্মহত্যা, পরকীয়া, তালাক ইত্যাকার ঘটনা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে; যার ফলে সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়সহ সামাজিক অস্থিরতাও মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। তাই আমাদের সরকারসহ সব পক্ষকে এ বিষয়টি গভীরভাবে ভাবতে হবে।

যদি পণ্য প্রমোশনের নামে বিদেশে অর্থ প্রেরণের সুযোগ নিয়ে একশ্রেণির মুনাফালোভী হাতিয়ে নেয় হাজার হাজার কোটি টাকা, তাহলে বিদেশে পাচার হবে বিপুল অর্থ। বঞ্চিত হবেন টেলিভিশন মালিক, ডিরেক্টর, শিল্পী, ক্যামেরাপারসনসহ সংশ্লিষ্ট কলাকুশলীরা। এমন অবস্থা চললে ফুটবল কিংবা ক্রিকেট খেলার মতো শিল্পীরা চুক্তির বেড়াজালে বন্দী হতে যাচ্ছেন খুব শিগগির। দেশীয় শিল্প সংরক্ষণ নীতিমালার অপর্যাপ্ততার কারণে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের শিকার হবে দেশীয় সংস্কৃতি ও সংস্কৃতি পরিচর্যার ক্ষেত্রগুলো। এর প্রভাব একদিকে যেমন অর্থনীতিতে পড়ছে, তেমন পড়ছে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও। তাই এখনই সময় সচেতন হওয়ার, সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়নের। এ আগ্রাসন এখনই রুখে দেওয়া না গেলে দেশের স্যাটেলাইট চ্যানেল হুমকির মুখে পড়বে। প্রতি মিনিট বিজ্ঞাপন ৩০ হাজার টাকার স্থলে এখন ৫ হাজার টাকায় নেমে এসেছে। এর ফলে করুণ দশায় নিপতিত হচ্ছে দেশের টেলিভিশন ও নির্মাণ শিল্প। অভিযোগ রয়েছে, পণ্য প্রমোশনের জন্য বিদেশে অর্থ প্রেরণে নীতিমালা বা গাইডলাইন থাকলেও তা একদিকে যেমন যথেষ্ট নয়, তেমন তা মানাও হচ্ছে না সব ক্ষেত্রে। আবার চলচ্চিত্রে যৌথ প্রযোজনার নামে সিনেমা বানিয়ে যেভাবে ভারতীয় শিল্পীদের প্রমোট করা হচ্ছে সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের শিল্পীদের অবস্থা কী হবে? একবার ভেবে দেখেছেন কি বাংলাদেশের এফডিসিতে এখন আর শুটিং হয় না। আশার দিক হচ্ছে ইতিমধ্যে এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান ড. মাহফুজুর রহমান ঘোষণা দিয়েছেন তার টিভিতে কোনো বিদেশি ডাবিংকৃত অনুষ্ঠান প্রচার করা হবে না। আমরা তার এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।

আমাদের জীবনাচরণে একটা বিষয় সব সময় প্রত্যক্ষ করি তা হলো, আমরা বাসায় ঢুকে প্রথমেই টিভিটা অন করি অর্থাৎ এই গণমাধ্যমটি আমাদের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে। তাই এই শিল্পকে কোনোক্রমেই ধ্বংস হতে দেওয়া যাবে না। হাজার হাজার মানুষের জীবন ও জীবিকা এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েছে। কৃষিপণ্য উৎপাদন, জ্বালানি তেল বিপণন, বিদ্যুৎ উৎপাদন, চামড়া ও গার্মেন্ট শিল্প উন্নয়নে সরকার যেভাবে ভর্তুকি ও ইনসেনটিভ দিয়ে থাকে, গণমাধ্যম বিকশিত হওয়ার জন্য সে ধরনের ইনসেনটিভ দিতে দেখা যায়নি। অথচ স্বাধীনতার ৪৫ বছরে নিজস্ব সক্ষমতায়, উদ্যোগে গণমাধ্যম শিল্পের যে ব্যাপক প্রসার ও বিকাশ হয়েছে, সে অনুযায়ী সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ততটা সম্প্রসারিত হয়নি। গণমাধ্যমের মালিক, সাংবাদিক, নাট্যনির্মাতা, শিল্পী, কলাকুশলীর স্বার্থ সুরক্ষায় সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রণয়ন করতে হবে সুষ্ঠু নীতিমালা। আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে পণ্য প্রমোশনের নামে যেন অর্থ পাচার না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ল্যান্ডিং ফি আদায়ের ব্যবস্থা থাকতে হবে। ডাবিংকৃত সিনেমা, সিরিয়াল ও প্রোগ্রাম প্রদর্শনী বন্ধ করতে হবে। সবাইকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার আগেই, এখনই সময় অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর। এ ক্ষেত্রে নবগঠিত মিডিয়া ইউনিটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সার্বিক বিষয়টি অবহিত করে টেলিভিশন, সাংবাদিক, শিল্পী ও কলাকুশলীদের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

লেখক : মিডিয়াকর্মী ও চেয়ারম্যান ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি

     ই-মেইল : [email protected]

সর্বশেষ খবর