মঙ্গলবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

ঘৃণা নয়, ভালোবাসা দিয়েই জয় করতে হয়

মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা

ঘৃণা নয়, ভালোবাসা দিয়েই জয় করতে হয়

ইদানীং ফেসবুকের নিউজফিডটা নানা উসকানিমূলক পোস্টে ভরে থাকে। কেউ আবার এগুলোকে বেশি বেশি শেয়ার করার আহ্বান জানায়। যার ফলে কিছুদিন আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঘটে গেল কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা। শুধু রসরাজের পোস্টই নয়, এরপর ফেসবুকে আরও একাধিক পোস্ট দেখা গেছে যেগুলোয় ফটোশপ কারসাজির মাধ্যমে কাবা শরিফকে বিভিন্নভাবে অবমাননা করার চেষ্টা হয়েছে। এ অপ্রীতিকর ঘটনাগুলোর জন্য কয়েক শ্রেণির লোক দায়ী রয়েছেন। এক. যিনি পোস্টটি করেছেন দুই. যারা এর সুযোগ নিয়ে সংখ্যালঘুদের বাড়ি লুটপাট করেছেন তিন. যারা এ পোস্টগুলোকে শেয়ার করে আল্লাহদ্রোহীদের এ কাজে আরও বেশি উদ্বুদ্ধ করছেন। কেউ আবার পাল্টা ফটোশপবাজিও করছেন। সেখানকার ওলামায়ে কেরাম অবশ্য এ ঘটনার শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করেছেন, এটা প্রতিটি মুমিনের দায়িত্বও বটে। কিন্তু এর পরে যা ঘটল তা কারা করেছে এবং কী উদ্দেশ্যে করেছে তা খুঁজে দেখা দরকার। কেননা কোনো আলেমই এ ধরনের ঘৃণ্য কাজে লিপ্ত হবেন না। কারণ তারাই বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ শান্তির ধর্ম ইসলামের ধারক-বাহক। তারাই মহাগ্রন্থ আল কোরআনের যথাযথ জ্ঞান রাখেন। কেননা ইসলাম অশান্তি ও উচ্ছৃঙ্খলতা কখনো পছন্দ করে না। এজন্য বর্তমানে ইসলামের প্রকৃত ধারক জাতির পথনির্দেশক আলেমরা ঘৃণার বদলে ঘৃণা ছড়ান না, বরং ভালোবাসা দিয়েই তা জয় করেন। যার ধারাবাহিকতায় নাসিরনগরে স্থানীয় হক্কানি আলেমরা ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দুদের বাড়িঘর পরিদর্শন করেন এবং সাহায্য-সহানুভূতিতে এগিয়ে আসেন। (সূত্র : আওয়ার ইসলাম ডট কম, ০৭/১১/১৬) ইসলামের এ সৌন্দর্য দেখে যুগে যুগে কোটি মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছে।

ইসলামের দৃষ্টিতে ভিন্ন ধর্মকে কটূক্তি করা : পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে : ‘(হে মুসলিমগণ!) তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের (তাদের বানানো প্রভুদের) ডাকে, তোমরা তাদের গালমন্দ করো না। কেননা পরিণামে তারা অজ্ঞতাবশত সীমালঙ্ঘন করে আল্লাহকেও গালমন্দ করবে। এ দুনিয়ায় তো আমি এভাবেই প্রত্যেক জাতির দৃষ্টিতে তাদের কার্যকলাপকে সুশোভন করে দিয়েছি। অতঃপর তাদের নিজ প্রতিপালকের কাছেই ফিরে যেতে হবে। তখন তিনি তাদের তারা যা কিছু করত সে সম্পর্কে অবহিত করবেন।’ (সূরা আনআম, আয়াত ১০৮)। মূর্তিপূজারিরা যে প্রতিমাগুলোকে তাদের দেবতা/প্রভু বলে বিশ্বাস করে, যদিও ইসলামের দৃষ্টিতে এগুলোর কোনো ভিত্তি নেই, তথাপি এ আয়াতে মুসলিমদের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে, তারা যেন মুশরিকদের সামনে তাদের সম্পর্কে অশোভন শব্দ ব্যবহার না করে। এর কারণ বলা হয়েছে যে, তারা প্রতিউত্তরে আল্লাহর সঙ্গে বেয়াদবি করতে পারে। আর তারা যদি তা করে, তবে তোমরাই তার ‘কারণ’ হবে। আল্লাহর শানে নিজে বেয়াদবি করা যেমন নিষেধ, তেমন বেয়াদবির কারণ হওয়াও নিষেধ। কাবা শরিফ অবমাননা করে ফেসবুক পোস্টটি আসলেই রসরাজের ছিল কিনা এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কোনো কোনো মিডিয়ার মতে, এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সৃষ্ট একটি ষড়যন্ত্র মাত্র। যারাই করে থাকুক, সে যে ধর্মেরই হোক তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। যদি কোনো মুসলিম উদ্দেশ্যমূলকভাবে এ অপ্রীতিকর ঘটনার ক্ষেত্র সৃষ্টি করে থাকে তবে তাকেও শাস্তির আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।

সীমালঙ্ঘন থেকে বিরত থাকা :  আল কোরআনে এরশাদ হয়েছে : ‘তোমাদের মসজিদুল হারামে প্রবেশ করতে বাধা দিয়েছিল, এ কারণে কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি তোমাদের শত্রুতা যেন তোমাদের (তাদের প্রতি) সীমালঙ্ঘন করতে প্ররোচিত না করে।’ (সূরা মায়েদা, আয়াত ২)। হুদায়বিয়ার সন্ধির প্রাক্কালে মক্কার কাফিররা মহানবী (সা.) ও তার সাহাবিদের হারাম শরিফে প্রবেশে ও ওমরাহ আদায়ে বাধা দিয়েছিল। স্বাভাবিকভাবে এ কারণে মুসলিমদের মনে প্রচণ্ড দুঃখ ও ক্ষোভ ছিল। সম্ভাবনা ছিল এ দুঃখ ও ক্ষোভের কারণে কোনো মুসলিম শত্রুর প্রতি এমন কোনো আচরণ করে বসবে যা শরিয়ত অনুমোদন করে না। এ আয়াত তাই সাবধান করে দিচ্ছে যে, ইসলামে সব জিনিসের জন্যই সীমারেখা স্থিরকৃত রয়েছে। শত্রুর সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে সেই সীমারেখা লঙ্ঘন করা জায়েজ নয়।

প্রিয় বন্ধু! আমরা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। যে ধর্মেরই হই না কেন আমরা সবাই মানুষ, আমাদের সবার রক্তই লাল। আমাদের সবার সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা একজনই। তাই আসুন, আমরা সীমালঙ্ঘন থেকে বিরত থেকে সবাই মিলেমিশে থাকি। এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় আমাদের প্রত্যেকের ধর্ম যেমন কলঙ্কিত হয় তেমন দেশের উন্নয়নেও এর প্রভাব পড়ে, তাই এ ধরনের ঘৃণ্য কাজ থেকে আমরা সবাই বিরত থাকার চেষ্টা করি।  ঘৃণার জবাবে ঘৃণা নয়, ভালোবাসা দিয়ে একে অন্যকে বরণ করে নিই।  আল্লাহ আমাদের সবাইকে সহি বুঝ দান করুন।

     লেখক : প্রাবন্ধিক, গবেষক।

সর্বশেষ খবর