শুক্রবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ইমান এবং আমল

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

ইমান এবং আমল

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অস্তিত্ব এবং প্রাসঙ্গিক কিছু বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার নাম ইমান। আরবি ‘ইমান’ শব্দের অর্থ হলো ‘বিশ্বাস স্থাপন করা’। ইমানের সংজ্ঞা স্বয়ং রসুল (সা.) দিয়েছেন, ফেরেশতা জিবরাইল (আ.) মানবাকৃতিতে রসুল (সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইয়া মুহাম্মাদ ফা আখবারনি আনিল ইমান’- অর্থাৎ হে মুহাম্মদ (সা.) আমাকে ইমান সম্পর্কে বলুন। রসুল (সা.) বললেন, ‘আন তুমিনু বিল্লাহি ওয়া মালাইকাতিহি ওয়া কুতুবিহি ওয়া রুসুলিহি ওয়াল ইয়াওমিল আখিরি, ওয়া তুমিনু বিল কদরি খয়রিহি ওয়া শাররিহি’- অর্থাৎ ‘ইমান হলো এই যে,  তুমি আল্লাহর ওপর, তাঁর ফেরেশতাদের ওপর, তার প্রেরিত কিতাব ও রসুলদের ওপর এবং পরকালের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করবে। আরও বিশ্বাস করবে তাকদিরের ভালো এবং মন্দের ওপর। তবেই তুমি মুমিন হতে পারবে। (বুখারি ও মুসলিম।)

ইমানের সঙ্গেই ওতপ্রোতভাবে জড়িত যে বিষয়টি তা হলো আমল। আমল শব্দের অর্থ কাজ করা। যে কোনো কাজকেই আরবিতে আমল বলে। কোনো বিশ্বাসকে কাজে পরিণত করার নামও আমল। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে ইমানের বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করার নামও আমল। আমল দুই প্রকার। ভালো আমল, খারাপ আমল। ভালো আমল ইমানদারদের বৈশিষ্ট্য। আর খারাপ আমল পাপীদের বৈশিষ্ট্য। তাই আল্লাহতায়ালা ভালো আমল এবং ইমানকে একই আয়াতে রেখেছেন। পবিত্র কোরআনের যেখানে ইমানের কথা এসেছে সেখানে আমলের কথাও এসেছে। যেমন সূরা আসরে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘সময়ের শপথ। প্রত্যেক মানুষই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। তবে যারা ইমান আনে, নেক আমল করে, সত্যের পথে দাওয়াত দেয় এবং পরস্পরকে ধৈর্যের উপদেশ দেয় তারা ক্ষতি থেকে মুক্ত।’ (সূরা আসর : ১-৩।) সূরা তীনে আল্লাহতায়ালা বলেছেন— ‘আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি সবচেয়ে সুন্দর আকৃতিতে। তারপর বদ আমলের কারণে তাকে পৌঁছে দেই সবচেয়ে নিকৃষ্ট অবস্থায়। তবে তাদের নয়, যারা ইমান আনে এবং নেক আমল করে। তাদের জন্য তো রয়েছে এমন পুরস্কার, যা কখনো শেষ হবে না।’ (সূরা তীন : ৫-৭।)

ইমানের সঙ্গে আমলকে সম্পৃক্ত করে দুনিয়াখ্যাত আলেমরা ইমানের সংজ্ঞায় বলেছেন, ‘আল ইমানু হুওয়া তাসদিক বিল জিনান, ইকরার বিল লিসান ওয়া আমল বিল আরকান’ অর্থাৎ ইমান হলো অন্তরে বিশ্বাস করা, মুখে স্বীকার করা এবং কাজে পরিণত করা। ইমান এবং আমল পরস্পর সম্পর্কযুক্ত হলেও ইমানের মর্যাদা বেশি। আমলহীন ইমানের দামও আল্লাহর কাছে অনেক; কিন্তু ইমানহীন আমলের দাম আল্লাহর কাছে কানাকড়িও নেই। এ সম্পর্কে রসুল (সা.) সুন্দর একটি ঘটনা বলেছেন। কেয়ামতের দিন একজন ইমানদার ব্যক্তি ভয়ে কাঁপতে থাকবে। আল্লাহ জিজ্ঞাসা করবেন, বান্দা তোমার কী হয়েছে? সে বলবে, আল্লাহ আমার আমলনামার ৯৯টি খাতাই গুনাহে পূর্ণ। একটি খাতায় ছোট্ট একটি নেকি দেখতে পাচ্ছি। আল্লাহ বলবেন, তোমার সেই নেকিটি কী? বান্দা বলবে, হে আল্লাহ! আমি ইমানের কালেমা পড়েছি এবং কখনো শিরক করিনি। আল্লাহ বলবেন, এ একটি নেকিই তোমার সব গুনাহের বিরুদ্ধে যথেষ্ট হবে।

যাদের ইমান এবং আমল সঠিক রয়েছে আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে তাদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ রয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘যারা ইমান এনেছে এবং ভালো আমল করেছে তাদের জান্নাতের সুসংবাদ দিন। (সূরা বাকারাহ : ২৫।) অন্যত্র আল্লাহ বলেন— ‘যারা ইমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে তারাই অনন্তকালের জন্য জান্নাতের অধিবাসী হবে।’ (সূরা বাকারা : ৮২।)

পরকালীন নাজাত এবং মুক্তির জন্য ইমানের সঙ্গে আমলও প্রয়োজন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী! আপনি আপনজনদের সতর্ক করুন’; তখন নবী (সা.) পরিবারের লোকদের ডেকে বললেন, হে নবী পরিবারের সদস্যরা! আমলের মাধ্যমে নিজেদের জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও। আমি নিজে তোমাদের জন্য কিছুই করতে পারব না। অন্যত্র নবী (সা.) বলেছেন, যার আমল তাকে পিছিয়ে দেবে তার বংশমর্যাদা তাকে এগিয়ে নেবে না। (মুসনাদে আহমাদ।) সুতরাং আমল এবং ইমান এ দুটোকেই সমান গুরুত্ব দিতে হবে।  মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সহি আমল করে খাঁটি মুমিন হওয়ার তৌফিক দান করুন।

আজকের দুনিয়ার দিকে তাকালে ইমান এবং আমলওয়ালা মুসলমান কতজন খুঁজে পাওয়া যাবে?  হে মুসলমান আসুন আমরা ইমান এবং আমলের জিন্দেগি ধারণ করি। আমরা মুসলমান এই বিশ্বাস রেখে আখেরাতে কিন্তু পার পাওয়া যাবে না।  বিশ্বাসের প্রতিফলন থাকতে হবে জীবনজুড়ে।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসিসরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব

www.selimazadi.com

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর