শুক্রবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

নামাজের অসিলায় আল্লাহ বান্দার গুনাহ মাফ করেন

আল্লামা মাহমূদুল হাসান

নামাজ আল্লাহতায়ালার এক মহান বিধান, যা তিনি সব উম্মতের ওপর ফরজ করেছেন। পূর্ববর্তী উম্মতগণের ওপরও নামাজের বিধান ছিল, তবে তাদের ওপর এমন পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ ছিল না। কারও ওপর শুধু ফজরের নামাজ, কারও ওপর জোহরের নামাজ, কারও ওপর আসরের নামাজ ফরজ ছিল। একসঙ্গে কারও ওপর পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ ছিল না। এ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজই বিভিন্ন উম্মতের ওপর ফরজ ছিল। আল্লাহতায়ালা অশেষ রহমত করে এই উম্মতের ওপর পূর্বের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ একসঙ্গে ফরজ করেছেন। এটা এ উম্মতের বৈশিষ্ট্য ছাড়া অন্য কিছু নয়। আর নামাজ হলো সর্বোত্তম ইবাদত; ঈমানের পরই যার স্থান। একদা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলো, সর্বোত্তম আমল কি? তদুত্তরে তিনি বললেন, আল্লাহতায়ালার প্রতি ঈমান আনা। এরপর জিজ্ঞাসা করা হলো— অতঃপর সর্বোত্তম আমল কি? তিনি বললেন, নামাজ পড়া।

নামাজের তাছির বা ক্রিয়া কি? তা লক্ষ্য করুন! আমরা জানি, বাতাস লাগলে আমাদের শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যায়। অনুরূপভাবে নামাজের মধ্যে এক ধরনের ক্রিয়া রাখা হয়েছে। এই ক্রিয়া বা তাছির হলো, যখন কোনো ব্যক্তি নিয়মতান্ত্রিকভাবে নামাজ পড়তে থাকে, তখন আল্লাহতায়ালা তার অসিলায় ওই ব্যক্তির জাহের ও বাতেনকে গোনাহমুক্ত করে দেন। ফলে তার শরীর গোনাহমুক্ত হয়ে যায়, অন্য গোনাহ মুক্ত হয়ে যায়, চোখ গোনাহমুক্ত হয়ে যায়, চিন্তাধারা গোনাহমুক্ত হয়ে যায়। ফলে সে ব্যক্তির জন্য নেক কাজের একটি পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে যায়। সেই পরিবেশের অন্যান্য লোকেরাও নাজা পড়তে শুরু করে। এমনিভাবে সেই পরিবেশই গোনাহমুক্ত হয়ে যায়। আর মানস যখন গোনাহমুক্ত হয়ে যায় এবং পরিবেশও গোনাহমুক্ত হয়ে যায়, তখন তার জন্য অন্য নেক কাজ করাও সহজ হয়ে যায়। তখন সম্পদ তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে না। এই জন্যই বলা হয়েছে, আগে নামাজ পড়, নামাজ পড়ে তোমার অন্তরকে গোনাহমুক্ত কর, নামাজ পড়ে তোমার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে গোনাহমুক্ত কর, নামাজ পড়ে তোমার চিন্তা চেতনাকে গুণাহমুক্ত কর।

খলিফাতুল মুসলিমীন হরজরত ওমর (রা.) খলিফা হওয়ার পরই তার গভর্নরদের প্রতি প্রথম যে ফরমান পাঠিয়েছিলেন, তাতে লেখা ছিল নামাজের প্রতি খেয়াল রাখবে এবং তা সময়মতো সঠিক ও সুন্দরভাবে আদায় করবে। নামাজ কাজা করবে না। জেনে রেখ যে ব্যক্তি নামাজ কাজা করে কিংবা নামাজ পড়ে না, সে অন্য কোনো বিষয় সঠিক সুন্দরভাবে আদায় করতে পারে না। তিনি আরও বলেছেন, যে ব্যক্তি নামাজ ঠিকমতো আদায় করে না, তাকে কোনো বিষয়ে বিশ্বাস কর না। চাই সে বাহ্যিকভাবে যত বড় বুজুর্গই দেখা যাক না কেন, কিংবা যত হজ-ওমরাহ ও দান-খয়রাত করুক না কেন।  তার এসব ইবাদতের তেমন কোনো মূল্য নেই। কারণ, আল্লাহর আবদিয়্যত ও দাসত্ব প্রকাশের সবচেয়ে বড় আমল হলো নামাজ। যে ব্যক্তি নামাজের গুরুত্ব দেয় না, তাকে অন্য কোনো বিষয়ে বিশ্বাস করা যায় না।

লেখক : খতিব, গুলশান সেন্ট্রাল জামে মসজিদ

সর্বশেষ খবর