শনিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

নিভৃত সাঁওতাল পল্লীতে বিষাদের কালো ছায়া

লে. জে. মাহবুবুর রহমান (অব.)

নিভৃত সাঁওতাল পল্লীতে বিষাদের কালো ছায়া

রবীন্দ্রনাথ তার ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায় অসহায় উপেনের কথা লিখেছিলেন।

“শুধু বিঘে দুই ছিল মোর ভূই, আর সবে গেছে ঋণে

বাবু কহিলেন বুঝেছো উপেন এ জমি লইবো কিনে।

আমি কহিলাম তুমি ভূস্বামী ভূমির অন্ত নাই।

চেয়ে দেখ মোর আছে বড়জোর মরিবার মত ঠাঁই।

... রাজা কহিলেন, ‘ওটা দিতে হবে’। ...

কহিলেন শেষে ক্রুর হাসি হেসে ‘আচ্ছা সে দেখা যাবে’।”

গাইবান্ধার সাহেবগঞ্জ উপজেলার বাগদা ফার্ম এলাকার সব সাঁওতালের ওপর আজ উপেনের মতো এমনই করুণ ভাগ্য নেমে এসেছে। চিনিকলের সম্পত্তি বিতর্কে নিরীহ গরিব সাঁওতালদের হিন্দি ফিল্মি ঢঙে স্থানীয় রাজনীতির টাউট-গুণ্ডা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বেধড়ক লাঠিপেটা করেছে, রক্তপাত ঘটিয়েছে। গুলি করে তিন সাঁওতালকে হত্যা করেছে। অনেক সাঁওতালকে গুরুতরভাবে আহত করেছে। বাড়িঘরে আগুন দিয়েছে। সাঁওতাল পল্লী ভস্মীভূত করেছে। সেখানে বসবাসকারী প্রায় আড়াই হাজার মানুষ সবকিছু ফেলে প্রাণ নিয়ে পল্লী ছেড়ে গ্রাম ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। ঢাকা থেকে একটি তদন্ত দল আক্রান্ত এলাকা সফর করে জাতীয় প্রেসক্লাবে এ বিষয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন করেছে। সেখানেও এসব কথা বলা হয়েছে। টিভি চ্যানেলে দেখেছি বাস্তুচ্যুত  শত শত সাঁওতাল শিশু, বৃদ্ধা নারী, পুরুষ-মহিলা গির্জা চত্বরে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে। খাবার জুটছে না অনেকেরই। ১৬ নভেম্বর, ২০১৬ ডেইলি স্টারের প্রথম পৃষ্ঠায় দ্বীজেন সাঁওতালের ছবি প্রকাশিত হয়েছে। গুলিতে বিদ্ধ হয়ে তার বাঁ চোখ সম্পূর্ণ অন্ধ হয়ে গেছে। ডান চোখেও অনেক বড় ক্ষত। তা দিয়ে অনবরত রক্ত ও পুঁজ ঝরছে। তিনি শুধু বলছেন, ‘আমরা কি আমাদের বাপদাদার ভিটায় আর কখনো ফিরতে পারব না? সরকার কি আমাদের কোনো ব্যবস্থা করবে না? আমার যা হওয়ার তা হোক। আমার সন্তান, আমার স্ত্রী এদেরও কি এতটুকু ঠাঁই কোথাও মিলবে না? আমরা তো মানুষ। আদিনিবাসী, আদিবাসী। আমাদের সবকিছুই এখানে ছিল। এই জমি, বাড়িঘর সবই।’ ঢাকায় জাতীয় চক্ষু ইনস্টিটিউটে শয্যাশায়ী হাতকড়া পরা দ্বীজেন সাঁওতাল করুণ স্বরে অসহায়ের মতো কথাগুলো বলছিলেন। দ্বীজেনের ছোট বোন মার্থা টুডো একা ভাইয়ের শয্যাপাশে সারাক্ষণ ক্রন্দনরত। কিছু খায় না, কথা বলে না।

দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার চিরকালীন। এই সাঁওতালরা তো এ দেশে অভিবাসী হয়ে আসেনি। আজ তাদের অসহায়ত্বের সুযোগ আমরা নিচ্ছি। আমরা, ক্ষমতাবান আর তথাকথিত সভ্যসমাজের মানুষেরা। ভূমিপুত্র (ভূমিজ সন্তান) বলে নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে কোনো সম্প্রদায়ের মানুষকে যদি আদিবাসী বলি তাহলে তাদের মধ্যে বড় করে দৃশ্যমান হয়ে যারা আছে তারা এই সাঁওতাল নৃ-গোষ্ঠী। অথচ বাঙালি জাতিসত্তা গড়তে এ সাঁওতালদের অবদানের কথা আমরা বেমালুম ভুলে গেছি। এ সাঁওতালরাই বিদ্রোহ করেছে বার বার। বিদ্রোহ করেছে ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে। তাদের তারা কখনই মেনে নেয়নি। সাঁওতাল বিদ্রোহ হয়েছে রাজশাহীর নাচোলে, দিনাজপুরের বীরগঞ্জে, বোচাগঞ্জসহ আরও অনেক জায়গায়। তেভাগা আন্দোলনে ইলা মিত্র নেতৃত্ব দিয়েছেন। নেতৃত্ব দিয়েছেন দিনাজপুরের সংগ্রামী নেতা হাজী মোহাম্মদ দানেশ। হালে আমরা দেখেছি চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে বিদ্যুতের জন্য তারা শক্ত আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। সবার পাশাপাশি সাঁওতালরা তাদের ঐতিহ্যবাহী ধনুক নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ইতিহাসের পাতায় দেখি এরও অনেক আগে সুসংগঠিত ও ব্যাপক বিদ্রোহ হয় ১৮৫৫-৫৬ সালে। ইতিহাসে তা সাঁওতাল বিদ্রোহ নামে খ্যাত। সে বিদ্রোহ দমন করতে ব্রিটিশ সরকারকে কয়েক দফা সামরিক অভিযান পরিচালনা করতে হয়। পিরপলিতে সাঁওতালরা মেজর বারজের নেতৃত্বে পরিচালিত সামরিক অভিযানকে সম্পূর্ণভাবে পর্যুদস্ত করে। সেখানে সামরিক আইন জারি হয়।

 

 

আমি সাঁওতাল পল্লীর সন্তান। দিনাজপুরের বিরল উপজেলার জগত্পুর আমার গ্রাম। বিরল সাঁওতাল অধ্যুষিত অঞ্চল। আমার গ্রাম ঘিরে ব্যাপক এলাকাজুড়ে অনেক সাঁওতালের বসবাস। ছোটবেলায় আমি তাদের সঙ্গে বেড়ে উঠেছি, খেলেছি, সরকারি প্রাইমারি স্কুলে ক্লাস ফোর পর্যন্ত অনেকের সঙ্গে পড়েছি। মুক্তিযুদ্ধে সাঁওতালরা সবাই অংশগ্রহণ করেছিল। তীর-ধনুক হাতে সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিল। তাদের তীরের লক্ষ্য অব্যর্থ, নিশানায় কখনো ভুল হয় না। গ্রামে, বনে, জঙ্গলে দিকচিহ্নে ও দিকনির্দেশনায় তারা ছিল নির্ভুল, সব সময় সঠিক। দিনাজপুরে মুক্তিযুদ্ধের সূচনাও তারাই করেছিল। সাঁওতালরা অত্যন্ত অধিকারসচেতন এক নৃ-গোষ্ঠী। ইতিহাস বার বার তার প্রমাণ দেয়। ইংরেজ শাসকদের কাছে তারা মাথা নত করেনি। মাথা নত করেনি জমিদার, মহাজন ও পুলিশের কাছে। ইংরেজদের বিরুদ্ধে তারা বিদ্রোহ করেছে, যুদ্ধ করেছে, সাহেবদের হত্যা করেছে। সাঁওতালদের চরিত্র, বৈশিষ্ট্য, মন-মানসিকতা সম্পর্কে দুটি কথা বলার তাগিদ বোধ করছি। সাঁওতালরা প্রচণ্ডভাবে আত্মমর্যাদাসম্পন্ন। তারা মিথ্যা কথা বলতে জানে না, বলে না, বলানোও যায় না। যত অভাবই হোক তারা ভিক্ষা করে না। কারও কাছে ভিক্ষা চায় না। আমি জীবনে কোনো সাঁওতালকে রাস্তায় কখনো ভিক্ষা করতে দেখিনি। কেউ দেখেছে বললে আমি তা বিশ্বাস করব না। গোবিন্দগঞ্জের সাহেবগঞ্জ চিনিকলের জন্য অনেক জায়গাজুড়ে জমি অধিগ্রহণ হয় পাকিস্তান আমলে। সরকার অধিগ্রহণের জন্য পরিকল্পিতভাবে টার্গেট করে অশিক্ষিত সাঁওতাল অধ্যুষিত এলাকা। শর্ত ছিল, জমি শুধু আখ চাষের জন্য ব্যবহার হবে। অন্য কোনোভাবে ব্যবহার হবে না। চিনি মিল কর্তৃপক্ষ এ শর্ত লঙ্ঘন করে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী লোকের যোগসাজশে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে অধিকাংশ জমি তাদের নামে-বেনামে ইজারা দেয় এবং ইক্ষুর পরিবর্তে ধান, গম, তামাক, শর্ষে, ভুট্টা ইত্যাদির চাষ শুরু করে। কাঁচামাল ইক্ষুর অভাবে চিনিকলটি সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। মিল কর্তৃপক্ষ লে-অফ ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। এ অবস্থায় সাঁওতালরা স্বাভাবিকভাবেই বাড়িঘর তৈরি করে বসবাস শুরু করে। চিনিকল জমি উদ্ধার সংহতি কাউন্সিলের সহ-সভাপতি ফিলিপ বাস্কে সংবাদপত্রে এসব কথা বলেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল বারকাত ভূমির দলিল, পুরনো কাগজপত্র পর্যালোচনা করে বলেছেন, ‘জমি যে সাঁওতালদেরই তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কাগজে দেখা যায়, ১৯৬২ সালের ৭ জুলাই একটি চুক্তির মাধ্যমে চার মৌজার ১ হাজার ৮৪২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। চুক্তিপত্রের পঞ্চম ধারায় বলা আছে, চিনিকল ও আখ চাষের জন্য এই জমি নেওয়া হলো। কিন্তু কখনো যদি এই জমিতে এ ছাড়া (আখ চাষ ছাড়া) অন্য কিছু হয় তাহলে এটা মূল মালিকদের কাছে ফেরত দেওয়া হবে।’ কিন্তু তার আগেই ২০০৪ সালে চিনিকল লে-অফ ঘোষণা করা হয়। অধিগ্রহণের সময় ক্ষতিপূরণ সম্পর্কে অধ্যাপক বারকাত বলেন, অধিগ্রহণের সময় ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছিল এমন কোনো তথ্য তিনি এখনো কোনো কাগজপত্র, পুরনো নথিতে পাননি। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অধিগ্রহণের শর্তই ছিল ইক্ষু চাষ না হলে জমি ফেরত দেওয়া হবে (প্রথম আলো, ১৫ নভেম্বর ২০১৬ পৃষ্ঠা ৪)।

আদিবাসের প্রিয় মানুষগুলোর দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণা আমাকেও সমভাবে ব্যথিত করে তুলেছে। আমি বাংলাদেশের সন্তান। তারাও। আরব দেশ থেকে আমার কোনো পূর্বপুুরুষ বাংলাদেশে আসেননি। তারা কেউ মোগল, পাঠান নয়, নয় শেখ, সৈয়দ, খান বা মির্জা। আমার গর্ব আমি এ মাটিরই সন্তান। তেমনি আমার পূর্বপুরুষরা ও বহু দূরবর্তী পুরুষরা। ইতিহাস বলে, বাঙালি একটি সংকর জাতিসত্তায় বিদ্যমান। আমার ধমনিতে প্রবাহিত অনেক জাতিসত্তার রক্ত। আদিবাসী মানুষের সম্পৃক্ততা এ সংকর জাতিসত্তায় অস্বীকার করব কেমন করে? আমি মিথ্যা অহমিকায়, মিথ্যা জাত্যভিমানে ভুগতে চাই না।

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাঁওতাল, দিনাজপুরের খানসামা, বিরল উপজেলার সাঁওতাল, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার সাঁওতাল, বগুড়ার সাঁওতাল সবাই আজ এক প্রান্তসীমায় উপনীত নৃ-গোষ্ঠী। ক্ষয়ে ক্ষয়ে ধুঁকে ধুঁকে নিঃশেষ হতে চলেছে। অনাহারে, অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে। বনের মানুষ পরিবেশ হারিয়ে ফেলেছে। বন উজাড় হয়ে গেছে। তেমনি বন্য পশুপাখিরাও। আজ সাঁওতালরা একটি ধ্বংসোন্মুখ ক্ষুদ্র জাতিসত্তা। আর আমরা এতদিনের, হাজার বছরের একসঙ্গে থাকা মানুষকে ধ্বংসোন্মুখ হতে দেখছি। তাদের বিনাশ ত্বরান্বিত করতে উঠেপড়ে লেগেছি। কিন্তু কেন? আমেরিকার রেড ইন্ডিয়ানরা নিঃশেষ হয়ে গেছে। শ্বেতাঙ্গরা তাদের হাজারে হাজারে হত্যা করেছে। তারা এখন ইতিহাসের গবেষণার বিষয়বস্তু, জাদুঘরে রক্ষিত মাত্র। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডেও আদিবাসীরা নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে।

আমি জানি না পশ্চিম বাংলার সাঁওতাল পরগনার সাঁওতালরা কি সংখ্যায় কি প্রাচুর্যে আজ বিদ্যমান। জাতীয় জীবনে, সমাজ জীবনে তারা কতটুকু দৃশ্যমান। তারাও কি প্রান্তসীমায়? সময়ের খাতায়? ২১ ফেব্রুয়ারি মহান ভাষা দিবস। বাঙালিরা মায়ের ভাষার মর্যাদা রক্ষায় ঢাকার রাজপথে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিল। ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করেছিল, জাতিসত্তার বিকাশ ঘটিয়েছিল। দেশ স্বাধীন করেছিল। ২১ ফেব্রুয়ারিকে বাংলার দামাল ছেলেরাই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। গোটা বিশ্বে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দিবসটি মর্যাদাসহকারে পালিত হয়। সাঁওতালদের মাতৃভাষার স্বীকৃতি আমরা কি বাংলাদেশে দিয়েছি? দিতে পেরেছি? সাঁওতাল ভাষার প্রতিষ্ঠা ঘটাতে কোনো ভূমিকা রেখেছি? তাহলে কিসের এই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস? কিসের জন্য সালাম, বরকতের আত্মাহুতি ও রক্তদান আর তা নিয়ে আমাদের এত অহংকার, এত গর্ব।

সাঁওতালদের কৃষ্টি, সংস্কৃতির বিকাশ সাধন সরকারের ও প্রতিটি মানুষের জাতীয় দায়িত্ব, নৈতিক কর্তব্য। আসুন সাঁওতালদের ক্ষুদ্র জাতিসত্তাকে শ্রদ্ধা করি। উত্তর বাংলার আদিমানুষের পাশে দাঁড়াই। একটি মাথা উঁচু করে থাকা জাত্যভিমানী নৃ-গোষ্ঠীকে সালাম করি। শুভেচ্ছা জানাই। মানবতার ডাকে সাড়া দিই। সাঁওতাল? ওরা কালো? ওরাও তো মানুষ। আমিও তো কালো। আমিও তো মানুষ। গর্বিত স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষ। সাংবিধানিক অধিকারসম্পন্ন পূর্ণ নাগরিকত্ব নিয়ে মানুষ। তারাও। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন—

‘যারে তুমি নিচে ফেল সে তোমারে বাঁধিবে যে নিচে

পশ্চাতে ফেলিছ যারে সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে।’

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে স্মরণ করি। স্মরণ করি তার ‘বিদ্রোহী’ কবিতার অমর অগ্নিঝরা লাইনগুলো—

‘চির বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত আমি সেই দিন হব শান্ত

যবে উত্পীড়িতের ক্রন্দন রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না।

অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ ভূমে রণিবে না।’

গাইবান্ধার সাঁওতাল পল্লীগুলোয় উত্পীড়িতের ক্রন্দন রোলে আজ আকাশ-বাতাস দলিত-মথিত। নজরুল তুমি কোথায়? কোথায় তোমার শপথ নেওয়া কথাগুলো? তোমার জাতি আজ প্রতিবাদে ফেটে পড়ে না কেন?

     লেখক : সাবেক সেনাপ্রধান।

সর্বশেষ খবর