শনিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

আরাকানের রোহিঙ্গা সমস্যা

অভিযান নয়, আস্থার সম্পর্কই কাম্য

মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে সেনা অভিযানের ঘটনা বাংলাদেশের জন্যও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। অভিযানের হাত থেকে বাঁচতে রোহিঙ্গারা তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে দলে দলে পালাচ্ছেন। অনেকেই বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছেন। বিজিবি সদস্যরা মিয়ানমার সীমান্তে তীক্ষ নজর রাখলেও অনুপ্রবেশ ঠেকানোর ক্ষেত্রে কতটা সাফল্য অর্জিত হবে, তা নিশ্চিত নয়। সমস্যাটা মানবিক হলেও দুটি কারণে বাংলাদেশের পক্ষে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। কারণ বাংলাদেশে আগে থেকেই অন্তত ৫ লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন। ঘনবসতির এই দেশের জন্য তারা ইতিমধ্যে জাজ্বল্যমান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। অবৈধভাবে অবস্থানই শুধু নয়, আইনশৃঙ্খলার জন্যও তারা বিড়ম্বনা সৃষ্টি করছেন। রোহিঙ্গাদের এক ক্ষুদ্র অংশ জঙ্গিবাদ ও চরমপন্থার সঙ্গে জড়িত থাকায় তারা যেমন দেশের আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার জন্য সমস্যা সৃষ্টি করছেন, তেমনই মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে অস্বস্তি ডেকে আনছেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারের আরাকানে সেনা অভিযানে উদ্বেগ প্রকাশ করেই দায় মিটিয়েছে, যা সত্যিকার অর্থেই দুর্ভাগ্যজনক। রোহিঙ্গাদের অস্তিত্ব রক্ষায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সক্রিয় হলে একদিকে যেমন জাতিগত সংঘাতের ইতি ঘটানো সম্ভব, তেমন বাংলাদেশও রক্ষা পাবে অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যা থেকে। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনা অভিযান শুধু অমানবিক নয়, অবিবেচনাপ্রসূত বললেও কম বলা হবে। আমরা রোহিঙ্গাদের এক ক্ষুদ্র অংশের জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদচর্চার বিরোধী, তবে সুনিশ্চিতভাবে বলা যায় সাধারণ রোহিঙ্গাদের সঙ্গে তাদের দূরতম সম্পর্কও নেই। উগ্রবাদীদের দমনের নামে সাধারণ রোহিঙ্গাদের জানমাল-সম্ভ্রমের ওপর হামলা মিয়ানমারের ভাবমূর্তিতেও কলঙ্ক লেপন করছে। মিয়ানমারের জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে কাণ্ডজ্ঞানহীন অভিযানের অবসান হওয়া উচিত। উগ্রবাদীদের পায়ের তলার মাটি কেড়ে নিতে সাধারণ রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মিয়ানমার সরকার আস্থার সম্পর্ক গড়ে তুলবে, এমনটিই প্রত্যাশিত। সেটিই সমস্যা সমাধানের উত্তম উপায়।

সর্বশেষ খবর