মঙ্গলবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

হুজুর ভাসানীর স্মরণসভা, আদিবাসীদের ওপর কেন এমন নির্যাতন?

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

হুজুর ভাসানীর স্মরণসভা, আদিবাসীদের ওপর কেন এমন নির্যাতন?

জীবনে দুজনকে কাঁধে বয়ে কবরে নেওয়ার বড় স্বাদ ছিল। একজন বঙ্গবন্ধু, অন্যজন হুজুর মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। কারও কফিন বইতে পারিনি, কারও কবরে মাটি দিতে পারিনি। ১৯৭৬ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিরোধ যুদ্ধে আমি যেদিন দূর্গাপুর বাঘমারা সীমান্তের রংরায় সেদিন বিবিসির সান্ধ্য অধিবেশনে হুজুর মওলানা ভাসানীর মৃত্যু সংবাদ পাই। জীবনে সবচেয়ে এলোমেলো হয়েছিলাম বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু সংবাদে। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর সংবাদ ছিল আমার কাছে অপ্রত্যাশিত অচিন্ত্যনীয়। হুজুর হাসপাতালে ছিলেন। তার বয়স হয়েছিল। সবই জানা ছিল। কিন্তু তিনি ওভাবে চলে যাবেন ভাবতে পারিনি। প্রিয়জনকে কেউ ছাড়তে চায় না, আমিও ছাড়তে চাইনি হুজুর মওলানা ভাসানীকে। সেই কবে ’৭৬ আর ২০১৬-৪০ বছরের ব্যবধান। দেশে ফিরেছিলাম ’৯০ সালে। পরের বছর জেল জুলুমে কেটেছে। তারপর থেকে নিয়মিত ১৭ নভেম্বর হুজুর মওলানা ভাসানীর মৃত্যুদিনে তার মাজারে যাই। ধীরে ধীরে তার প্রতি কেমন যেন সবার আগ্রহ কমে যাচ্ছে। আগে মন্ত্রী আসত, প্রধানমন্ত্রী আসতেন এখন কেউ আসে না। মন্ত্রী, এমপি, এসপি, ডিসি, তার নামে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি না, না না না। হুজুর মওলানা ভাসানীর ক্ষেত্রে নার যেন শেষ নেই।

এমনতর অবহেলা দেখে মনটা খারাপ হয়ে যায়। বীজ থেকে যেমন বৃক্ষ জন্মে তেমনি হুজুর মওলানা ভাসানীর রাজনীতি থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু জন্মেছিলেন, তিনি বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের কারণে আমি কাদের সিদ্দিকী, ওদিকে জিয়াউর রহমান। এগুলো সবই হুজুর মওলানা ভাসানীর অঙ্কুরিত রাজনীতির সৃষ্টি। হুজুর মওলানা ভাসানী না জন্মালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নেতা হতেন না। তিনি নেতা না হলে বাংলাদেশ হত না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হুজুর মওলানা ভাসানীর আবিষ্কার আর আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। সবই লতায় পাতায় জড়িত। কাউকে বাদ দিয়ে কেউ না। বহুদিন পর গত ১৭ নভেম্বর বৃহস্পতিবার এই প্রথম টাঙ্গাইল শহীদ মিনারে হুজুর মওলানা ভাসানীর উপর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সর্বদলীয় স্মরণসভা হল। টাঙ্গাইল চিরকালই জ্ঞানী গুনী সংগ্রামীদের জায়গা। এখানে যেমন শক্তি আছে তেমনি বিভক্তিও আছে। কিন্তু শত ত্রুটি বিচ্যুতির পরও হুজুর মওলানা ভাসানীকে স্মরণ করতে গিয়ে বহুদিন পর সবাই এক মিলন মেলায় শরিক হয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, কমিউনিষ্ট পার্টি কেউ বাদ ছিলেন না। আওয়ামী লীগ সভাপতি, প্রবীণ জননেতা ফজলুর রহমান খান ফারুক, প্রবীণ রাজনীতিক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা বুলবুল খান মাহাবুব, হামিদুল হক মোহন, ছালাম চাকলাদার, অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা, এনামুল করিম শহীদ, হাবিবুর রহমান তালুকদার বীর প্রতীক, অ্যাডভোকেট হাসান আলী রেজা, অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম, হাসমত নেতা, বাবুল সিদ্দিকী আরও অনেকে। সত্যিই সে এক মহামিলন। আমরা যদি আমাদের অতীত মূল্যায়ন করতে পারি তাহলে অবশ্যই বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ নিষ্কণ্ঠক শক্তিশালী হবে। সেই শুভ সূচনা আমার জন্মভূমি টাঙ্গাইল থেকে শুরু হলে তাহলে সেটাই হবে আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ আনন্দ ও গৌরব।

পাখা নেই তাও মানুষ পাখির মতো। পাখা থাকলে কি যে হত কল্পনা করতে পারি না। দেশে এক সুগভীর ষড়যন্ত্র চলছে। অবশ্যই সেটা জনসমর্থনহীন সরকারকে অস্থিতিশীল করা এবং দেশকে অকার্যকর করার দূরভিসন্ধি বা অপচেষ্টা হিসেবে। নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর যে জুলুম অত্যাচার আর নির্মমতা দেখেছি তা বর্ণনা করা যায় না। থানার ১০০ হাতের মধ্যে মন্দির ভেঙেছে, ২ ঘণ্টা পুলিশ যেতে পারেনি। আবার গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল পল্লীতে কি যে অবর্ণনীয় অত্যাচার, চোখে দেখলেও অনেকে হৃদয়ে ধারণ করতে পারবে না। সেটা লিখে আর কতটুকু বুঝানো যাবে। আমি জাত লেখক নই, আমার লেখায় রং নেই। সাদামাটা দুচার কথা যা লিখি পাঠক ভালোবেসে দয়া করে গ্রহণ করেন বলে লিখি।

বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলক আ স ম আবদুর রব কদিন আগে বলেছিলেন, ‘কাদির, গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালদের দেখতে যাওয়া, তাদের কথা শুনতে যাওয়া উচিত। আমরা ২০ তারিখে যাব। তুমি কি যাবে?’ কথা দিয়েছিলাম তাই গিয়েছিলাম। সকালে টাঙ্গাইল থেকে রওনা হয়ে আ স ম আবদুর রবের ৩ ঘণ্টা আগে সাঁওতাল পল্লীতে পৌঁছেছিলাম। শত শত ছিন্নমূল মানুষদের দেখে হৃদয় খান খান হয়ে গিয়েছিল। জাসদের সাজানো মঞ্চ দখল করে তখন আওয়ামী লীগ মিটিং করছিল। সেখানে প্রধান ছিলেন প্রাক্তন এমপি এক সময় এলজিআরডির প্রধান ইঞ্জিনিয়ার মনোয়ার হোসেন। কম্বল, কাপড়-চোপড় দান করার কথা বলছিলেন। লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছিল। এ যেন গরু মেরে জুতা দান। তারা ভালো ভাবে মিটিং করতে পারুক এজন্যে মনোয়ারের পাশে বসেছিলাম। তিনি কোনো দিন রাজনীতি করেননি, তাই তার বক্তৃতায় জোর ছিল না। মানুষ ছিল উতালা তাই উঠে গিয়ে এক ভাঙা বাড়ির উঠানে পাটি বিছিয়ে বসেছিলাম। সাংবাদিকরা ছাড়ছিল না। নানা প্রশ্ন, সাধ্যমতো উত্তরও দিয়েছি। কেন যেন সূর্য আমায় ধাওয়া করছিল। তাই সেখান থেকে একটু দূরে একটা পরিত্যাক্ত খেতে পাটি বিছিয়ে শুয়েছিলাম। মাঝে মাঝে চমৎকার বাতাস বয়ছিল। মন প্রাণ হৃদয় জুড়িয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু আশপাশে লোকজন পায়খানা করায় মাঝে মাঝে দুর্গন্ধ এসে বিরক্ত করছিল। তবু ভালো লাগছিল দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের পাশে। ঘণ্টা দুই শুয়ে থেকে এক গির্জার পাশে জোহরের নামাজ আদায় করে অসংখ্য দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের মাঝে বসেছিলাম। বক্তার পর বক্তা। ৩টা কয়েক মিনিটে আ স ম আবদুর রব এলেন। আ স ম আবদুর রব এলে দুকথা বলে বিদায় নিয়েছিলাম। বলেছিলাম, সাড়ে ৩-৪ ঘণ্টা আপনার জন্য অপেক্ষা করেছি। হুজুর মওলানা ভাসানী, পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাড়া আর খুব বেশি মানুষের জন্য আমি ওভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করিনি। দুখি মানুষের পাশে থাকবেন আমার এই অপেক্ষার মর্যাদা রাখবেন। খুব ক্ষুধা লাগায় গোবিন্দগঞ্জ মোড়ে মায়ামনিতে খেতে গিয়েছিলাম। সাধারণ হোটেল। একটা লাল আটার রুটি খেয়েছি। সবজি তরকারি ছাড়াও খেতে পারতাম। মনে হয়েছে এ যেন আমার মার হাতে বানানো।

 

 

গোবিন্দগঞ্জ থানার অন্তর্গত রামপুর, সাপমারা, মাদারপুর, নরেঙ্গাবাদ, চকরহিমাপুর এলাকা ১৯৬২ সালে রংপুর মহিমাগঞ্জ সুগার মিলের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়। পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক সরকারের সঙ্গে করপোরেশনের চুক্তি হয়। ১৮৪২.৩০ একর অধিগ্রহণকৃত জমি চিনি কলের জন্যে শুধুমাত্র আখ চাষে ব্যবহার হবে। অধিগ্রহণের পর কোনোদিন ১৮৪২.৩০ একর জমির মধ্যে ৫০০-৭০০ একরের বেশি আখ চাষ করা হয়নি। এলাকার স্বার্থান্বেষীরা লিজ নিয়ে অন্য শস্য আবাদ করে লাভবান হয়েছে। কিন্তু জমির মালিকরা হয়েছে সব সময় নির্যাতিত। কোনো কিছু না জেনে টাইটুই পড়া শিল্প সচিব সেদিন যেভাবে বলেছেন, ‘সরকারি জমি সরকার দখলমুক্ত করেছে’- তা আপত্তিকর। বরং শিল্পমন্ত্রী যথার্থ বলেছেন, ‘কোনো আওয়ামী লীগ বা আওয়ামী লীগের লোক গণবিরোধী কাজ করতে পারে না, ওরকম বলতে পারে না।’ করপোরেশনের কাছে কোনো কাগজপত্র নেই। জমি করপোরেশনের বাবার না। ওখানকার জমিজমা স্থানীয় আদিবাসীদের বাপ দাদার। সেখানে কমবেশি মুসলমানও আছে। ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চা নিয়ে আদিবাসীরা গাছের নিচে এটা ওটা রেধে খাচ্ছে। খোলা আকাশের নিচে রাতদিন কাটাচ্ছে সেটা কতটা যে অবর্ণনীয় বলার ভাষা নেই। বুক চিরে খান খান হয়ে যাচ্ছিল ওইসব দৃশ্য দেখে। যেখানে গুলি করে সাঁওতালদের মেরে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দিয়েছে সেখানে সুগার মিলের লোকজন কলের লাঙ্গল চালাচ্ছে, সরকারি টাকায় টিউবওয়েল গাড়ছে। মহামান্য হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন সাঁওতাল বা আদিবাসীদের ফসল অবাধে তাদের ঘরে তুলার সুযোগ করে দিতে। দেখে এলাম ধান পেকে ঝরে পড়ছে। এলাকায় কোনো আদিবাসী পুরুষ নেই। আর ৪-৫ দিন ওভাবে থাকলে খেতের ধান খেতেই ঝরবে। জানি না মহামান্য হাইকোর্ট গাইবান্ধার ডিসি, গোবিন্দগঞ্জের ওসি, ইউএনও কে হাইকোর্টে দাঁড় করাবেন কিনা। গত একযুগে হাইকোর্টের রায়ে দেশের মানুষ বড় বেশি আশান্বিত হয়েছে। তবে রায় বাস্তবায়ন করতে সুগার মিলের লোকজনদের যদি ঘটনাস্থল থেকে আপাতত তাড়িয়ে দেওয়া হতো, করপোরেশনের লোকজন ট্রাক্টর নিয়ে দাপাদাপি না করতে পারত, তারের বেড়া না দিতে পারত তাহলে এলাকায় শান্তি-স্বস্তি ফিরে আসত। শান্তি-স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে সরকার এবং আওয়ামী লীগও যদি প্রশংসিত ভূমিকা রাখে আমাদের সমর্থন ও সহযোগিতা পাবে। মোটকথা আমরা শান্তি চাই। পত্র-পত্রিকা, টিভি চ্যানেল এবং নিজ চোখে যা দেখলাম ৯৯ ভাগ দোষী আবুল কালাম আজাদ এমপি এবং তার দানব ইউপি চেয়ারম্যান বুলবুল। বিচারের মাধ্যমে এদের দুই জনেরই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। আদিবাসীদের নামে টাকা নিয়ে লুটে খেয়েছে, জমি দখল করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হতে চেয়েছে। সরকারি লোকজন যে যা বলছে সব অন্তঃসারশূন্য। কারণ জমি উদ্ধার কমিটির স্মারকের প্রেক্ষিতে ‘গাইবান্ধা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্বের গোপন শাখা ০৯/০৮/২০১৫ ইং প্রতিবেদনে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে ঐ জমি যেদিন কর্পোরেশন ইক্ষুর জন্যে ব্যবহার করবে না, সেই দিনই যাদের জমি তাদের হাতে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য।’ এটা ’৬২ সালের ৭ জুলাই পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক সরকার এবং পাকিস্তান ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি। এখন সরকারি লোকজন সাধারণত সাধারণ মানুষের স্বার্থ বিবেচনা করে কোনো প্রতিবেদন তৈরি করেন না। বেশিরভাগ সরকারের দিকে টানে। কিন্তু ২১/০৬/২০১৫ ইং তারিখের গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্বের প্রতিবেদন এক অসাধারণ দলিল। তাতে সবকিছু  দিবালোকের মতো ফুটে উঠেছে।

আমি জানি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার কোনো কথাই সহজভাবে নেন না। কিন্তু সর্বনাশের হাত থেকে বাঁচতে হলে অন্য কোনো চোখে না দেখে নিজে চোখে দেখুন এবং বিচার করুন। সেটাই ভালো হবে দেশের জন্য, আপনার জন্য।

সেলিনা হায়াৎ আইভী আবার নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন। বিএনপি জেলা পরিষদে অংশ নেবে না, সিটি করপোরেশনে নেবে। মানে নামাজ পড়বে অজু করবে না। এমন সরকার যেমন বিশ্ব দেখেনি, তেমনি এমন বিরোধী দলও কেউ কোনোদিন দেখেনি। নারায়ণগঞ্জ করপোরেশনের নির্বাচন এবার দেখার মতো ব্যাপার হবে। জননেত্রী শেখ হাসিনা আইভীকে মনোনয়ন দিয়েছেন। শামীম ওসমান যদি চুপ করে থাকে তাহলেও বিএনপির প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার পরাজিত হবে। আর যদি শামীম ওসমান আইভী রহমানের পাশে দাঁড়ায় তাহলে তৈমুর আলম খন্দকারের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে। ৬ মাস পর শামীম ওসমান হবে দেউলিয়া, আইভী রহমান হবে নারায়ণগঞ্জের মুকুটহীন সম্রাজ্ঞী। আর শামীম ওসমান যদি আলাদা প্রার্থী দেয়, রাতদিন এক করে ফেলে তাও তার প্রার্থীর বিজয়ী হওয়ার খুব একটা সম্ভাবনা আছে বলে মনে হয় না। তবে তার পতন আরও ত্বরান্বিত হবে। আইভী আর শামীম ওসমানের দ্বন্দ্বে মনে হয় আইভী এবার অনেকদূর এগিয়ে গেছে। আমার আইভী-শামীম বা বিএনপিকে নিয়ে কথা নয়, আমার নির্বাচন কমিশনকে নিয়ে কথা। এমন অযোগ্য অথর্ব নির্বাচন কমিশন কি বলব! ২-৩ দিন আগে শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছিল। সরকারি দল তাই তারা তাদের অধিকার মনে করে সার্কিট হাউসে বসে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আনোয়ার হোসেনের নাম ঘোষণা করেছিল। আইভী প্রার্থী হিসেবে সেখানে আবেদন করেননি। ওইদিনই সরকারি ভবন ব্যবহার করে নির্বাচনী নীতিমালা ভঙ্গ করেছেন বলে এমপি শামীম ওসমানকে নির্বাচন কমিশন সতর্ক করেন। বাপের বেটা নির্বাচন কমিশন একখান। কি ক্ষমতা! এক অথর্ব কমিশনার ডানে বামে মাথা ঝুঁকিয়ে দম্ভভরে নানা কথা বলছিলেন। দেখে আমার হাসি পাচ্ছিল। সার্কিট হাউস যেটা দেশের সব মানুষের ব্যবহারের জন্য। ভাড়া দিয়ে যে কেউ ব্যবহার করতে পারে, বাস করতে পারে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ভবন বা রাষ্ট্রপতি ভবনে যে কেউ যেতেও পারে না, বাস করতেও পারে না। জনাব লতিফ সিদ্দিকী পদত্যাগ করায় কালিহাতী আসন শূন্য হলে গণভবনে বসে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ আইভী রহমানের মনোনয়নও গণভবন থেকে দেওয়া হয়েছে। অথর্ব নির্বাচন কমিশনারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সতর্ক করার সাধ্য কি আছে? তা যদি না পারেন তাহলে এত লম্ফঝম্প কেন? বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, তার সারা জীবনের সাধ্য সাধনা নিরপেক্ষ সরকারি প্রভাবমুক্ত নির্বাচন। সেটা কি এখন হয়? এখন প্রতি পদে পদে সরকারি প্রভাবে নির্বাচন কলুষিত হচ্ছে।

ভারতের মহীয়সী নারী প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী এক নির্বাচনী মামলায় পরাজিত হয়ে প্রধানমন্ত্রিত্ব হারিয়েছিলেন। তারপর অনেক ঘটনা ঘটেছে। ভারতে জরুরি অবস্থা জারি হয়, শ্রী জয় প্রকাশ নারায়ণের নেতৃত্বে জনতা পার্টি গঠন করে কংগ্রেসকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। ইন্দিরা গান্ধীর প্রতিদ্বন্দ্বী শ্রী রাজ নারায়ণ এলাহাবাদ হাইকোর্টে নির্বাচনী মামলা করেছিলেন। অভিযোগ নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সরকারি প্রভাব খাটিয়েছেন। অনেক অভিযোগই খুব একটা ধোপে টিকেনি। কিন্তু আমেথি অথবা রায়বেরিলি আসনে এক সভায় পিডব্লিউটি’র এক ইঞ্জিনিয়ার সরকারি গাড়ি নিয়ে সভামঞ্চ তৈরিতে তদারকি করেছিলেন। সেটা প্রমাণ হওয়ায় হাইকোর্ট শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর সদস্যপদ বাতিল করেছিলেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী কোথাও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গেলে শুধু এক ডিপার্টমেন্ট নয়, সারা দেশের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী ঝাঁপিয়ে পড়েন। নির্বাচনের সময়ও তেমনটা করেন। তার জন্য কারও পদ হারাতে হয় না। বিচিত্র ব্যাপার! তাই নির্বাচন কমিশনকে বলি শামীম ওসমানকে সতর্ক করতে পারলেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে করতে পারবেন না। ওটা করতে মেরুদণ্ড লাগে। আল্লাহতায়ালা তেমন মেরুদণ্ড কাপুরুষদের দেন না।

গতকাল ছিল আমাদের গৌরব সশস্ত্র বাহিনী দিবস। পৃথিবীর সব দেশেই সশস্ত্র বাহিনী থাকে। দেশ থাকলে সশস্ত্র বাহিনী থাকবে। সাধারণত সশস্ত্র বাহিনী গঠিত হয় দেশের জন্মের পর। আগে দেশ তারপর সে দেশের নিরাপত্তা বাহিনী। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। আমাদের দেশ সশস্ত্র বাহিনীর জন্ম দেয়নি। আমরা সাধারণ মানুষ মুক্তিযোদ্ধা, সশস্ত্র বাহিনী সবাই মিলে দেশের জন্ম দিয়েছি। সেই অর্থে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী দেশের অন্যতম ধাত্রী। কয়েক বছর পর তাদের আমন্ত্রণে ঘাটাইল শহীদ সালাউদ্দিন সেনানিবাসে গিয়েছিলাম। আমার আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছিল ঢাকায়, আমি ছিলাম টাঙ্গাইলে। যাব কি করে? আবার যদি কার্ড ছাড়া ফিরিয়ে দেয়। না তেমন হয়নি। কর্নেল সাকিব বার বার ফোন করছিলেন। বলছিলেন, ‘না কার্ড লাগবে না। আপনার মতো বীরউত্তমকে পাওয়া সে তো আমাদের ভাগ্য।’ বেশ ভালো লেগেছে। দোয়া করি, তারা যেন দেশের সেবা করতে পারে, মানুষের সেবা করতে পারে।

লেখক : রাজনীতিক।

সর্বশেষ খবর