মঙ্গলবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

রাজস্ব আয়ে নেতিবাচক প্রবণতা

কর ফাঁকি বন্ধের উদ্যোগ নিন

দেশের অর্থনীতি প্রতিবছরই বাড়বাড়ন্ত আকার ধারণ করছে। দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধিতেও তার ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। কিন্তু অর্থনীতির বাড়বাড়ন্ত অবস্থার সঙ্গে সংগতি রেখে বাড়ছে না রাজস্ব আয়। প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতার পাশাপাশি সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় রাজস্ব আয় থেকে আহরিত অর্থে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধির বদলে গত তিন বছরে তা কমে যাওয়ার বিষয়টি নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। অর্থ মন্ত্রণালয় প্রকাশিত অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০১৬ প্রতিবেদনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১২-১৩ অর্থবছরে রাজস্ব জিডিপি ছিল ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা কমে ৮ দশমিক ৯৮ শতাংশে নেমে এসেছে। একইভাবে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রাজস্ব জিডিপির প্রবৃদ্ধি কমে ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ ও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৯ দশমিক ২৮ শতাংশে নেমে এসেছে। সন্ত্রাসকবলিত পাকিস্তান এবং সার্কভুক্ত ছোট দুই দেশ ভুটান ও শ্রীলঙ্কার রাজস্ব আয়ও বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। দক্ষিণ এশিয়ার ৮ দেশের মধ্যে রাজস্ব আয়ে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। একমাত্র আফগানিস্তানের অবস্থান বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে। দেশের রাজস্ব আয় দেশজ উৎপাদনের সঙ্গে সংগতি রেখে বৃদ্ধি পাওয়ার বদলে হ্রাস পাওয়ার প্রধান কারণ রাজস্ব ফাঁকির প্রবণতা। বাংলাদেশকে বলা হয় রাজস্ব ফাঁকির দেশ। এ দেশে যে সংখ্যক মানুষ আয়কর দেন, আয়কর দেওয়ার যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও ফাঁকিবাজির আশ্রয় নেন, তার অন্তত তিনগুণ। বিনিয়োগের স্থবিরতাও রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব রাখছে। আমাদের দেশে আয়কর দেন মূলত ব্যবসায়ীরা। তাদের দিকে রাজস্ব বিভাগ নজর রাখলেও পেশাজীবীরা মূলত ধরাছোঁয়ার বাইরে। বাড়ি গাড়ির মালিক রাজনীতিকরাও রয়েছেন ফাঁকিবাজদের তালিকায়। দেশের রাজস্ব আয় বাড়াতে হলে আয়কর দেওয়ার যোগ্যতা রাখেন এমন সব নাগরিককে এর আওতায় আনতে হবে। কঠোরভাবে রুখতে হবে কর ফাঁকির প্রবণতা। পাশাপাশি আয়কর দিতে গিয়ে কেউ যাতে অযথা হয়রানির শিকার না হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। আয়কর দেওয়ার জটিলতা হ্রাসে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ কিছু ইতিবাচক পদ্ধতি নেওয়া হয়েছে। এটি প্রশংসার দাবিদার তবে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পেতে হলে এ ক্ষেত্রে আরও সংস্কার করতে হবে।

সর্বশেষ খবর