মঙ্গলবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

পরধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা পোষণকারীই প্রকৃত ইমানদার

মুফতি মোহাম্মদ এহছানুল হক মুজাদ্দেদী

পরধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা পোষণকারীই প্রকৃত ইমানদার

প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, ‘অন্যায়ভাবে কোনো অমুসলিমকে হত্যাকারী জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না। অথচ ৪০ বছরের রাস্তার দূরত্ব থেকেই ওই ঘ্রাণ পাওয়া যাবে।’ (বুখারি : ৩১৬৬।) অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘যে ব্যক্তি কোনো অমুসলিকে অন্যায়ভাবে হত্যা করবে আল্লাহতায়ালা তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন।’ (নাসায়ী : ৪৭৪৭।)

সাম্প্রতিক সময়ে মন্দির এবং ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলার ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েই চলছে। ধর্মগুরুদের হত্যার ঘটনাও যেন ধারাবাহিক শিরোনামের পরিণত হয়েছে আমাদের জন্য। যখনই এমন ঘটনা ঘটে এর জন্য ইসলাম এবং মুসলমানদের দায়ী করা হয়। অথচ এসব ঘটনার সঙ্গে ইসলাম এবং প্রকৃত মুসলমানের দূরতম সম্পর্কও নেই। কারণ ইসলামের মূল উৎস কোরআন এবং হাদিস পরধর্মের মানুষকে আপনের চেয়েও বেশি শ্রদ্ধা ও সম্মান করতে শিখিয়েছে। আমরা দেখেছি আমাদের নবী (সা.) এর আপনজনের অনেকেই ছিল ইসলামের কট্টর দুশমন। তথাপিও নবী (সা.) তাদের প্রতি নির্যাতন তো দূরের কথা কখনো প্রতিবাদও করেননি। বরং কোনো বিরোধী যখন অসুস্থ হতো তখন রসুল (সা.) তাকে দেখতে যেতেন। রসুলের আন্তরিকতায় ওই বিরোধী কালেমার পতাকাতলে আশ্রয় নিত। এই যখন মুসলমানের নবীর চরিত্র, তাহলে তারা কীভাবে মন্দিরে হামলা করতে পারে? একজন প্রকৃত মুসলমানের পক্ষে মন্দির ভাঙা তো দূরের কথা মন্দির ভাঙার চিন্তা করাও সম্ভব নয়। কারণ, ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘যারা মানুষকে সাম্প্রদায়িকতার দিকে ডাকে, সাম্প্রদায়িকতার জন্য যুদ্ধ করে, সংগ্রাম করে এবং জীবন উৎসর্গ করে তারা আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (আবু দাউদ : ৫১২৩।)

সাম্প্রদায়িকতার ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে পবিত্র কোরআন। আল্লাহ বলেন, ‘ধর্মের ব্যাপারে জোরজবরদস্তি নেই। ভ্রান্ত মত ও পথকে সঠিক মত ও পথ থেকে করে আলাদা করে দেওয়া হয়েছে।’ (বাকারাহ, আয়াত, ২৫৬।) ‘তোমাদের ধর্ম তোমাদের জন্য, আমাদের ধর্ম আমাদের জন্য। (কাফিরুন, আয়াত, ৫।) একে অন্যের ধর্ম পালন করতে গিয়ে কেউ কোনরূপ সীমালঙ্ঘন কিংবা বাড়াবাড়ি করবে না। অন্য কেউ যদি ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করেও ফেলে তবে ভুলেও যেন কোনো ইমানদার এ ধরনের হীন ও জঘন্য কাজের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত না করে। এ বিষয়টিই নসিহতস্বরূপ মুমিনদের উদ্দেশে আল্লাহ বলছেন, ‘হে ইমানদারগণ! তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যেসব দেব-দেবীর পূজা-উপাসনা করে, তোমরা তাদের গালি দিও না। যাতে করে তারা শিরক থেকে আরও অগ্রসর হয়ে অজ্ঞতাবশত আল্লাহকে গালি দিয়ে না বসে।’ (আনআ’ম আয়াত, ১০৮।) যেখানে অন্য ধর্মের দেবতাকে গালি দেওয়া নিষিদ্ধ সেখানে মন্দির ভাংচুর ও মানুষ হত্যা কীভাবে বৈধ হতে পারে? যারা এমনটি করছেন, তাদের পরিচয় আর যাই হোক তারা মুসলমান নয়। একজন প্রকৃত মুসলমান কখনোই ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের অনুভূতিতে আঘাত আসে এমন কোনো কাজ করতে পারে না। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলমান যদি ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের অধিকার ক্ষুণ্ন  করে কিংবা তাদের ওপর জুলুম করে, তবে কেয়ামতের দিন আমি মুহাম্মাদ ওই মুসলমানের বিরুদ্ধে আল্লাহর আদালতে লড়াই করব। (আবু দাউদ : ৩০৫২।)  রসুল (সা.) ও খোলাফয়ে রাশেদীনের চিরচরিত নিয়ম ছিল, যখন কোনো সেনাবাহিনী প্রেরণ করার প্রয়োজন হতো তারা বিভিন্ন নসিহতের পাশাপাশি এ নসিহতটি অবশ্যই করতেন যে, যুদ্ধকালীন বা যুদ্ধের পর বিজয়ের আনন্দে কিংবা পরাজয়ের দুঃখে ও ক্ষোভে কোনো মন্দির, গির্জা বা উপাসনালয় ভেঙে ফেলবে না। (মুসান্নাফ আবী শায়বা : ৩৩৮০৪।)

লেখক : খতিব, মনিপুর বাইতুর রওশন জামে মসজিদ মিরপুর, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর