বুধবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

মিত্রবাহিনীর শহীদদের প্রতি সম্মাননা

কৃতজ্ঞ জাতির পরিচয় আরও মহিমান্বিত হবে

মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির সবচেয়ে স্মরণীয় ঘটনা। স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছে প্রকৃত অর্থে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতের আঁধারে বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, শুরু হয় গণহত্যা। এ প্রেক্ষাপটে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে দেশকে শত্রুমুক্ত করতে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বানও তিনি জানান জাতিকে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে মুক্তিবাহিনীর পক্ষে অস্ত্র ধরে ভারতের মিত্রবাহিনীর সদস্যরা। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে পাকিস্তানি দখলদাররা আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়। মুক্তিযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর ১৬৬৮ সদস্য শহীদ হয়েছেন। হানাদারদের মোকাবিলায় মুক্তিবাহিনীর পাশে দাঁড়িয়ে কাঁধে কাঁধ মিলে লড়েছেন মিত্রবাহিনীর সদস্যরা। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সদস্যদের রক্ত একাকার হয়ে সৃষ্টি হয়েছে রক্তের রাখী বন্ধন। আজকের বাংলাদেশ যেহেতু মহান মুক্তিযুদ্ধের ফসল, সেহেতু মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা বিদেশি বন্ধুদের সরকার ইতিমধ্যে সম্মাননা জানিয়েছে। যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী ভারতীয় সেনাবাহিনীর ১৬৬৮ সদস্যের স্বজনদের হাতে সোনার ক্রেস্ট ও পাঁচ লাখ ভারতীয় রুপির সমমানের অর্থ দিয়ে সরকারিভাবে তাদের সম্মাননা জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ প্রক্রিয়া শুরু হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগামী ডিসেম্বরে নয়াদিল্লি সফরের সময়। সাতজন শহীদ সেনার পরিবারের হাতে ক্রেস্ট ও অর্থ তুলে দেবেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই। পরে সুবিধাজনক প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনের পক্ষ থেকে বা অন্যান্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাকিদের সম্মাননা জানানো হবে। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর সদস্য হিসেবে নিহত হওয়া সেনাদের স্মৃতিরক্ষার্থে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় একটি স্মৃতিফলক স্থাপনেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মুক্তিযুদ্ধের সাড়ে চার দশক পর প্রতিবেশী বন্ধু দেশের সামরিক বাহিনীর নিহত সদস্যদের সম্মাননা জানানোর এ উদ্যোগের মাধ্যমে বাঙালিরা যে কৃতজ্ঞ জাতি সেই বিষয়টি প্রমাণ করা হলো।  মুক্তিযুদ্ধে শহীদ মিত্রবাহিনীর সদস্যদের সম্মাননা জানানোর এ উদ্যোগে প্রকারান্তরে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি জাতির অঙ্গীকারের বিষয়টি আবারও স্পষ্ট করা হলো।

সর্বশেষ খবর