বুধবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

মুসলমানের মধ্যে আমানতদারি থাকতে হবে

মুফতি মুহাম্মদ আল আমিন

মুসলমানের মধ্যে আমানতদারি থাকতে হবে

একজন মুসলমানের মধ্যে যত গুণই থাকুক, যদি আমানতদারি না থাকে তাহলে তার ইমান পরিপূর্ণ নয়। যেমন কেউ নামাজ পড়ে, রোজা রাখে, হজ করে, জাকাত দেয়। কিন্তু তার মধ্যে আমানতদারি নেই। তাহলে সে কোনোভাবেই পরিপূর্ণ মুসলমান নয়। নামে মুসলমান হলেও প্রকৃত মুসলমানিত্ব তার মধ্যে নেই। একটা সময় ছিল যখন মুসলমানের পরিচয় দেওয়া হতো আমানতদার হিসেবে। অমুসলিমরাও মুসলমানের আমানতদারির ব্যাপারে বিশ্বাস করত। মুসলমানকে আমানতদার হিসেবে জানত। প্রিয় নবী (সা.)-এর কাছে আরবের মুশরিক ও মূর্তিপূজকরা স্বর্ণ-অলঙ্কার জমা রাখত। নিজেদের অস্থাবর ধন-সম্পদ আমানত রাখত। আবু জাহেল, আবু লাহাবদের কাছে রাখত না। তারা জানত, তাদের নেতারা আমানতদার নয়। মুহাম্মদ (সা.) আমানতদার। তাই নিজেদের নেতাদের কাছে না রেখে মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে রাখত। প্রিয় রসুল (সা.) এমন আমানতদার ছিলেন যে, যখন মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার সময় হয়েছে, তখন নিজের কাছে আমানত রাখা কাফেরদের স্বর্ণ-অলঙ্কার ও অন্যান্য সম্পদ হজরত আলী (রা.)কে বুঝিয়ে দিলেন এবং নির্দেশ দিলেন যার সম্পদ তার কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। অথচ যারা আমানত রেখেছে তাদের অত্যাচারেই রসুল (সা.)কে মক্কা ছাড়তে হয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ কারও কাছে আমানত রাখে; তবে যার কাছে আমানত রাখা হয়েছে তার কর্তব্য আমানতের হক যথাযথ আদায় করা; এবং তার প্রভু আল্লাহকে ভয় করে চলা। তোমরা কখনো সাক্ষ্য গোপন করিও না। যে সাক্ষ্য গোপন করে, তার মন পাপে কলুষিত হয়েছে। তোমরা যা কিছু কর সবই আল্লাহ ভালোভাবে জানেন’। সূরা : আল বাকারা : ২৮৩ । অপর আয়াতে এসেছে, ‘হে মুসলিমগণ! আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় আমানত তার হকদারদের হাতে ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন। আর লোকদের মধ্যে ফয়সালা করার সময় ‘আদল’ ও ন্যায়নীতি সহকারে ফয়সালা কর। আল্লাহ তোমাদের বড়ই উত্কৃষ্ট উপদেশ দান করেন। আর অবশ্যই আল্লাহ সবকিছু শোনেন ও দেখেন’। সূরা : নিসা : ৫৮। আমানতের খেয়ানত না করার জন্য আল্লাহপাক আরও বলেন, ‘হে ইমানদারগণ! জেনে বুঝে আল্লাহ ও রসুলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করিও না, নিজেদের আমানতসমূহের খেয়ানত করিও না। এবং জেনে রাখ, তোমাদের অর্থ-সম্পদ ও তোমাদের সন্তান-সন্ততি আসলে পরীক্ষার সামগ্রী। আর আল্লাহর কাছে প্রতিদান দেওয়ার জন্য অনেক কিছুই আছে’। সূরা : আনফাল : ২৭-২৮। হাদিসের কিতাবগুলোতে আমানতের ব্যাপারে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। বুখারি ও মুসলিম শরিফে এসেছে, যার আমানতদারি নেই তার ইমান নেই। যে অঙ্গীকার রক্ষা করে না তার ধর্ম নেই। আরও এসেছে, হজরত আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, রসুল (সা.) বলেছেন : মুনাফেকের চিহ্ন হলো তিনটি। যখন কথা বলবে মিথ্যা বলবে; যা ওয়াদা-চুক্তি করবে তার বিপরীত কাজ করবে এবং কোনো কিছু আমানত রাখলে তার খিয়ানত করবে (বুখারি ও মুসলিম)। মহান আল্লাহ আমাদের আমানতদার হওয়ার তৌফিক দান করুন।  আমিন।

লেখক : খতিব, সমিতি বাজার মসজিদ, নাখালপাড়া, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর