শুক্রবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

মঙ্গল শোভাযাত্রার স্বীকৃতি

বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনার জয়

বাংলা নববর্ষ বরণের বর্ণিল মঙ্গল শোভাযাত্রা বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবায় জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেস্কোর ইন্টানজিবল কালচারাল হেরিটেজবিষয়ক আন্তঃসরকার কমিটির একাদশতম অধিবেশনে এ স্বীকৃতি দেওয়া হয়। বাঙালির নববর্ষ আবহনের অন্যতম প্রতীক মঙ্গল শোভাযাত্রার বৈশ্বিক স্বীকৃতির মাধ্যমে প্রকারান্তরে বাঙালির অসাম্প্রদায়িক ঐতিহ্যকেই স্বীকার করা হলো। অনুভবযোগ্য মানবীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় মঙ্গল শোভাযাত্রাকে অন্তর্ভুক্ত করার ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয় ইউনেস্কোর আদ্দিস আবাবা অধিবেশনে দুই ঘণ্টাব্যাপী বিতর্ক শেষে। ইউনেস্কোর এ ইতিবাচক সিদ্ধান্তে ধর্মনিরপেক্ষ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ হিসেবে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও জোরালো হবে বলে আশা করা হচ্ছে। স্মর্তব্য, ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় মঙ্গল শোভাযাত্রার অন্তর্ভুক্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল দুই বছর আগে। বাংলা একাডেমি এ বিষয়ে একটি মনোনয়ন নথি তৈরি করার পর সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় তা ইউনেস্কোতে উপস্থাপন করে। পরে কয়েক দফা সংশোধনের পর ইউনেস্কোর সংশ্লিষ্ট কমিটি তা অনুমোদন করে। ইউনেস্কো গত বুধবার তার ওয়েবসাইটে মানবীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে মঙ্গল শোভাযাত্রার তথ্য তুলে ধরার পাশাপাশি এর ইতিহাস ও ছবি প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়, মঙ্গল শোভাযাত্রা উৎসব বাংলাদেশের জনগণের লোকজ ঐতিহ্যের প্রতীক। এটি অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণের লড়াইয়ে সাহস ও শক্তির এবং সত্য ও ন্যায়কে সমর্থন জানানোর নিদর্শন। এটি বর্ণ, মত, ধর্ম, লিঙ্গ বা বয়স নির্বিশেষে জনগণকে একতাবদ্ধ করার এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি সহমর্মিতার প্রতীক। অশুভ শক্তিকে তাড়িয়ে প্রগতিশীলতাকে বিকাশের সুযোগ দেওয়াই এ শোভাযাত্রার লক্ষ্য। বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় বাংলাদেশের নববর্ষ আবহনের অন্যতম মাধ্যম, মঙ্গল শোভাযাত্রার অন্তর্ভুক্তি বাঙালি সংস্কৃতির জন্য একটি আশাজাগানিয়া ঘটনা। এ স্বীকৃতি দেশে বিদেশে অবস্থানরত ৩০ কোটি বাঙালিকে উৎসাহিত করবে। অসাম্প্রদায়িক জাতি হিসেবে বাঙালির পরিচয় আরও উজ্জ্বল হবে বিশ্ব সমাজের কাছে। আশা করা যায়, স্বীকৃতির এ ঘটনা অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশে অবদান রাখবে।

সর্বশেষ খবর