শিরোনাম
শুক্রবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

মুসলমান পরস্পর ভাই ভাই

মাওলানা সাদেক আহমদ সিদ্দিকী

একজন মানুষ আপন ভাইয়ের সঙ্গে যে রকম ব্যবহার করে থাকে, একজন মুসলমান আরেকজন মুসলমানের সঙ্গে ঠিক সে রকম ব্যবহারই করবে। কারণ, মুসলমান পরস্পর ভাই ভাই। কে কোন দেশের, কে কোন গোত্রের, কে কোন ভাষায় কথা বলে— এসব চিন্তার অবকাশ ইসলামে নেই। বরং এক মুসলমান আরেক মুসলমানের সাহায্যে এগিয়ে আসবে, একজন বিপদগ্রস্ত হলে অন্যজন তার বিপদ দূর করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবে, এটাই ইসলামের বিধান। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা সৎকর্ম কর তাহলে তোমরা সফলকাম হবে।’  (সূরা হজ্জ-৭৭)।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের প্রয়োজন পূরণে সচেষ্ট হবে, আল্লাহতায়ালা তার সমস্যার সমাধান করে দেবেন। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, মিয়ানমারের ফ্যাসিস্ট সরকার ও তাদের সেনাবাহিনী গত মধ্য অক্টোবর থেকে নতুন করে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর ব্যাপক আকারে সশস্ত্র হামলা শুরু করেছে। অং সান সু চি মিয়ানমারে ফ্যাসিস্ট সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাকে ‘গণতন্ত্রের মানস কন্যা’ বানিয়ে তার মাথায় নোবেল শান্তি পুরস্কারের মুকুট পরিয়েছিল। তখনো লক্ষ্য করার বিষয় এটাই ছিল যে সু চি সে সময় সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে আন্দোলন করলেও রাখাইন রাজ্যে ও মিয়ানমারের অন্যত্র রোহিঙ্গাদের ওপর যে অমানুষিক নির্যাতন তারা করত, তার কোনো সমালোচনা পর্যন্ত তিনি কোনোদিন করেননি।

জাতিগত ও ধর্মীয় বিদ্বেষের বশবর্তী হয়েই তিনি এ ক্ষেত্রে নীরব থেকে সামরিক বাহিনীর সহযোগিতা করেছেন। তা সত্ত্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সু চি’কে শান্তির দূত বলে আখ্যায়িত ও প্রচার করে মিয়ানমারে তাকে প্রতিষ্ঠার জন্য ভূমিকা রেখেছে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা বা উদ্ধারের নামে সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের দেশে দেশে যেসব শক্তিকে সমর্থন ও ক্ষমতা দখলে সহায়তা করেছিল, সেগুলো যে প্রকৃতপক্ষে কোনো গণতান্ত্রিক শক্তি নয়, এটা তারা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পরই স্পষ্টভাবে বুঝা যায়।

মিয়ানমারে ২০১৫ সালের গণতান্ত্রিক নির্বাচনে অং সান সু চির রাজনৈতিক দল এনএলডি বিপুল ভোটে বিজয়লাভ করে ক্ষমতায় আসীন হয়েছে। সঙ্গতভাবেই সবাই আশা করেছিলেন, এবার বুঝি মিয়ানমারের দীর্ঘদিনের জাতিগত নিপীড়নের দিন শেষ হলো। কিন্তু গোটা বিশ্বকে স্তম্ভিত করে দিয়ে সেখানকার রাখাইন প্রদেশে সরকার চালাচ্ছে বর্তমান পৃথিবীর ভয়াবহতম হত্যাযজ্ঞ।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সেখানে রোহিঙ্গা মুসলমানদের নিধন করতে রক্তগঙ্গা বইয়ে দিচ্ছে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, তারা মানুষকে পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে মারছে। পলায়নপর মানুষদের নদীতে ভাসমান অবস্থায় গুলি করে হত্যা করছে। অসহায় রোহিঙ্গা নারীকে ধর্ষণ করা স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। রেহাই পাচ্ছে না নিষ্পাপ শিশুরাও। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধে সে দেশের সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। এ ব্যাপারে জাতিসংঘ ও ওআইসিকে সক্রিয় হতে হবে।

লেখক : মুহতামিম, জামিয়া মদীনাতুল উলুম ভাটারা, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর