রবিবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ডেঙ্গু জ্বরের আগ্রাসন

এডিস মশার প্রজননে আঘাত হানতে হবে

রাজধানীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ এ বছর অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর রোগীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। এ পর্যন্ত এ ভয়াবহ জ্বরে প্রাণ হারিয়েছেন ১১ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ কক্ষের হিসাব অনুযায়ী চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত রাজধানীতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৮২৩। ২০১৫ সালে এই সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ১৬২। এর আগে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। ২০০৬ সালে ২ হাজার ২০০ জন। ২০০৭ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এই সংখ্যা ছিল ৩৭৫ থেকে ১ হাজার ৭৪৯। বিশেষজ্ঞদের মতে, চলতি বছর বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল গত কয়েক বছরের তুলনায় বেশি। বর্ষাকালও বেশি দিন স্থায়ী হয়েছে। জমে থাকা পরিষ্কার পানিতে এডিস মশা ডিম দেয়। ফলে এ বছর এডিস মশার প্রজনন তুলনামূলকভাবে বেশি হয়েছে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ার এটা অন্যতম কারণ। বর্ষা বিদায় নেওয়ায় ডেঙ্গুর মৌসুম এ বছর শেষ হওয়ার পথে। তবে বৃষ্টি হলে শীতকালেও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাবে। ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির পেছনে মশা নিধনে গাফিলতিকে দায়ী করা হচ্ছে। নির্বাচনের আগে থেকেই ঢাকার দুই মেয়র মশা নিধনকে তাদের অগ্রাধিকারমূলক কর্মসূচি হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। চলতি বছর গত বছরের চেয়ে মশা নিধন খাতে ৫৯ শতাংশ ব্যয় বৃদ্ধি করা হলেও ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা নিধনে তা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধিতে এডিস মশার বংশবিস্তার বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেলেও বর্ষা মৌসুম বিদায় নেওয়ায় এ মুহূর্তে আতঙ্কের কিছু নেই। তবে এ ভয়াবহ ও কষ্টকর রোগের জীবাণু যাতে আগামীতে ছড়িয়ে না পড়ে সে ব্যাপারে যথাযথ প্রস্তুতি নেওয়া দরকার। ডেঙ্গু জ্বরে রাজধানীতে যত মানুষ আক্রান্ত হয়, তার সিংহভাগকে যেহেতু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, সেহেতু এ রোগ বিস্তারের একটি সাধারণ চিত্র স্বাস্থ্য অধিদফতরের সামনে থাকে। কিন্তু সারা দেশে কত মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় সে বিষয়টি অন্ধকারে থেকে যাওয়া দুর্ভাগ্যজনক। ডেঙ্গুর প্রকোপ কমানোর একমাত্র পথ এডিস মশার প্রজননে আঘাত হানা। এ ব্যাপারে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। ডেঙ্গু বা এডিসবিরোধী লড়াইয়ে যার কোনো বিকল্প নেই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর