দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম প্রধান খাত প্রবাসী আয়ে ভাটির টান ধরেছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা সত্ত্বেও রেমিট্যান্স আয় বাংলাদেশের অর্থনীতিকে দুঃসময়েও টিকিয়ে রাখার কৃতিত্ব দেখিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পর বাংলাদেশের রিজার্ভ দ্বিতীয় স্থানে থাকার পেছনেও রেমিট্যান্স আয় তাত্পর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশের এ সুদিন এখন অনেকটাই নিষ্প্রভ। মধ্যপ্রাচ্যের তেলনির্ভর অর্থনীতিতে ধস নামায় সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে কর্মসংস্থানের সুযোগ হ্রাস পেয়েছে। তার প্রতিফলন ঘটছে প্রবাসী আয়ে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে এসেছে। গত নভেম্বর মাসে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল মাত্র ৯৫ কোটি ডলার। এর আগে ২০১১ সালের নভেম্বরে ৯০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি কর্মজীবীরা। এ বাদে গত পাঁচ বছরে নভেম্বরে প্রতিবছরই ১০০ কোটি ডলারের বেশি আয় হয়েছে। প্রবাসী আয়ে ভাটার টানকে সাময়িক ঘটনা বলে চালাবার সুযোগ নেই। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে আগের বছরের চেয়ে ১৩ শতাংশ আয় কমেছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে পাঠানো প্রবাসী আয়ে সবচেয়ে বেশি ধস নেমেছে। মধ্যপ্রাচ্যে কর্মসংস্থান এবং বেতন হ্রাস পাওয়ায় রেমিট্যান্সে তার অশুভ প্রতিক্রিয়া পড়ছে। পাউন্ডসহ বিভিন্ন মুদ্রার দাম কমে যাওয়ায় তার ধকলও পড়ছে প্রবাসী আয়ে। বৈধ পথে টাকা পাঠানো কঠিন হয়ে পড়ায় অনেকে অবৈধ পথে অর্থ পাঠাচ্ছেন। এসব অর্থ দেশে এলেও তা প্রবাসী আয়ের হিসাবে যুক্ত হচ্ছে না। দেশে ব্যাংকিং চ্যানেলের চেয়ে খোলাবাজারে ডলারের দাম বেশি হওয়ায় অনেকে বেশি টাকা পাওয়ার আশায় অবৈধ পথ বেছে নিচ্ছেন। প্রবাসী আয় কমে যাওয়ার ঘটনা দেশের অর্থনীতির জন্য অশনি সংকেত বলে বিবেচিত হচ্ছে। এর ফলে মোট জাতীয় আয় যেমন হ্রাস পাবে, দেশজ ও উৎপাদনেও অনিবার্যভাবে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। প্রবাসী আয় বৃদ্ধিতে নতুন নতুন শ্রমবাজার খোঁজার উদ্যোগ নিতে হবে। দক্ষ শ্রমিক রপ্তানির দিকে দিতে হবে নজর। রেমিট্যান্স আয় যাতে ব্যাংকিং খাতের মাধ্যমে দেশে আসে সে বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে। রেমিট্যান্স আয় যেহেতু দেশের অর্থনীতির প্রাণভোমরা সেহেতু এ ক্ষেত্রে কোনো উপেক্ষাই কাম্য হওয়া উচিত নয়।