বাংলাদেশে এখন শিক্ষাও একটি ব্যবসার নাম। বাণিজ্যে বসতি লক্ষ্মী প্রবচনকে সম্বল করে ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে এসেছেন আপদমস্তক ব্যবসায়ীরা। দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিস্তার ঘটেছে তাদের কল্যাণে। যে পরিসরে প্রাথমিক বিদ্যালয় চালানোও দুরূহ, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে রমরমাভাবে তা চালানোর কৃতিত্বও দেখিয়েছেন শিক্ষা ব্যবসায়ীরা। যেভাবেই হোক টাকা আয় তাদের একমাত্র লক্ষ্য। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় কোনো আইন-কানুন ও নীতি নৈতিকতার ধার ধারছেন না তারা। বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ অনুযায়ী প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় একটি বোর্ড অব ট্রাস্টিজ এবং একাডেমিক কার্যাবলি, প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড ও সাধারণ ব্যবস্থাপনা তত্ত্বাবধানের জন উপাচার্যের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট গঠিত হওয়ার কথা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক একাডেমিক সেক্টর দেখভালের জন্য উপাচার্যের সভাপতিত্বে গঠিত হবে একাডেমিক কাউন্সিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক বাজেট প্রণয়নে ভূমিকা রাখতে গঠিত হবে অর্থ কমিটি। নিয়মিত বৈঠকের মাধ্যমে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিধান থাকলেও অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এসব নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছে না। বোর্ড অব ট্রাস্টি ও সিন্ডিকেট, একাডেমিক কাউন্সিল ও অর্থ কমিটির কোনো করার গরজও তারা অনুভব করছে না। এতে একদিকে যেমন আইনের লঙ্ঘন হচ্ছে, অন্যদিকে ভেঙে পড়ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসনিক চেইন অব কমান্ড। বিনষ্ট হচ্ছে পড়ালেখার সুষ্ঠু পরিবেশ। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনও অসহায় হয়ে পড়েছে নিয়ম না মানা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালগুলোর কাছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাছে মঞ্জুরি কমিশনের অসহায়ত্বের কারণ এসব প্রতিষ্ঠানের অনুমোদনের পেছনে রাজনৈতিক বিবেচনাই প্রাধান্য পেয়েছে। সরকারি দলের প্রভাবশালীদের পাইয়ে দেওয়ার জন্য অন্যান্য ব্যবসার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবসার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ উদার নীতি কিছু ব্যক্তির পকেট পূর্তি নিশ্চিত করলেও দেশের উচ্চশিক্ষার জন্য বিড়ম্বনা ডেকে আনছে। হাতেগোনা দু-একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মোটামুটি মানসম্মত হলেও অন্যগুলোর অবস্থা যাচ্ছেতাই। এই নৈরাজ্যের অবসান অবশ্যই কাম্য।