বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

আদালতের প্রশংসনীয় নির্দেশনা

স্বাধীনতাবিরোধীদের নাম মুছে ফেলা হোক

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ দেশের যেসব স্থাপনায় এখনো স্বাধীনতাবিরোধীদের নাম রয়েছে তা মুছে ফেলতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। এ আদেশ কার্যকর করে দুই মাসের মধ্যে স্থানীয় সরকার সচিব ও শিক্ষা সচিবকে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতেও নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্টের বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর ডিভিশন বেঞ্চ। স্বাধীনতাবিরোধীদের নাম সব স্থাপনা থেকে মুছে ফেলার নির্দেশনা চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশনাটি তাৎপর্যের দাবিদার। দেশের স্বাধীনতার সাড়ে চার দশক পরও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনায় স্বাধীনতাবিরোধীদের নাম যুক্ত থাকা নিঃসন্দেহে জাতীয় লজ্জার ঘটনা। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সড়কসহ বিভিন্ন স্থাপনায় স্বাধীনতাবিরোধীদের নাম যুক্ত হয়েছে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্বাধীনতার পর, সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর দেশকে মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত করা হয়। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী সামরিক জান্তার শাসন জারি থাকে ১৫ বছর ধরে। এ সময় একাত্তরে জাতিসংঘে গিয়ে যিনি মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধাচরণ করেছেন জঘন্যভাবে সেই শাহ আজিজের নামে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলের নামকরণ করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে যে যশোর রোডের নাম ছড়িয়ে পড়েছিল দুনিয়ার সব দেশে সে সড়কের নাম রাখা হয় স্বাধীনতাবিরোধী খান আবদুস সবুর খানের নামে। শাহ আজিজ আবদুল আলিম, আলী আহসান মুজাহিদ, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, মতিউর রহমান নিজামীর মতো চিহ্নিত স্বাধীনতাবিরোধীকে মন্ত্রী বানানো হয় মুক্তিযুদ্ধকে কলঙ্কিত করার সুস্পষ্ট উদ্দেশ্যে। মুক্তিযুদ্ধে দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে ৩০ লাখ বাঙালিকে আত্মহুতি ও দুই থেকে তিন লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। আশা করা হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের ফসল বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণেই রাস্তাঘাট-স্থাপনার নাম রাখা হবে কৃতজ্ঞ জাতি হিসেবে নিজেদের তুলে ধরার উদ্দেশ্যে।  কিন্তু ১৫ আগস্টের পর ইতিহাসের চাকা পেছনের দিকে ঘুরানোর যে চেষ্টা চলে তাতে স্বাধীনতাবিরোধীদের নানাভাবে সামনে আনা হয়। হাইকোর্টের নির্দেশনা জাতিকে এ লজ্জা থেকে রেহাই দেবে আমরা এমনটিই দেখতে চাই।

সর্বশেষ খবর