বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
ইতিহাস

জনকল্যাণকর শাসন

ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও জনকল্যাণকর শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করে ফিরোজ শাহ সাম্রাজ্যের সব শ্রেণির মানুষের হূদয় জয় করেছিলেন। তার গুণাবলি ও কৃতিত্ব সম্পর্কে ইতিহাসবিদদের মধ্যে দ্বিমত থাকলেও তিনি ছিলেন কর্তব্য সম্পাদনে অত্যন্ত নিষ্ঠাবান। তিনি যে প্রজার কল্যাণকামী ছিলেন, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তিনি বিশ্বাসে ও কথায় অকপট ও আন্তরিক ছিলেন এবং যথার্থই প্রজাদের মঙ্গল কামনা করতেন। তার আগে কিংবা পরে দিল্লির সুলতানদের মধ্যে কেউ তার মতো জনগণের আর্থিক ও বৈষয়িক উন্নতির চেষ্টা করেননি। তার রাজস্বনীতির সংস্কার ও সেচব্যবস্থায় কৃষির প্রভূত উন্নতি হয় এবং সাধারণ প্রজাদের সুখ-স্বচ্ছন্দ বৃদ্ধি পায়। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের ফলে দ্রব্যমূল্য হ্রাস পায়। সাধারণ মানুষ দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির মানদণ্ডেই রাজার যোগ্যতা বিচার করে। সেদিক দিয়ে ফিরোজ শাহের রাজত্বকাল গৌরবময় এবং সেজন্য তিনি সমসাময়িক ও পরবর্তী ইতিহাসবিদদের অকুণ্ঠ প্রশংসা লাভ করেছিলেন। ফিরোজ তুঘলকের বিরুদ্ধে শাসক হিসেবে দুর্বলতার অভিযোগ আনা হয়েছে। কিন্তু তা সত্য নয়। একজন সৎ ও ধার্মিক শাসক হিসেবে তিনি দয়া ও ভালোবাসার যে প্রকাশ ঘটিয়েছেন তাকে দুর্বলতা বলা সমীচীন নয়। তিনি রক্তপাত ও যন্ত্রণাদান পছন্দ করতেন না। তিনি এ দুটি বন্ধের সংকল্প করেছিলেন।

ফিরোজ তুঘলক তার স্মৃতিকথায় লিখেছেন, ‘মহৎ ও পরম দয়ালু আল্লাহ তাঁর এই দাসকে মুসলিমদের অন্যায় হত্যা ও তাদের বা অন্য লোকদের কোনো রকমের যন্ত্রণা প্রদান বন্ধ করে তার কৃপা আশা করতে এবং পাওয়ার চেষ্টা করতে শিখিয়েছেন।’ তিনি যুদ্ধ ঘৃণা করতেন এবং সেনাপতিসুলভ কোনো গুণ তার ছিল না। তবে পরহিতে সুলতানের অসংখ্য দান তার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করে। কর্মসংস্থান দফতর, দাতব্য বিভাগ, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়, বেকার ভাতা, ভ্রমণের জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা, গুণী ও বিদ্বানদের বৃত্তি প্রদান, শিল্পী ও শিল্পের সমাদর, বিধবা ও অনাথকে যথোপযুক্ত সাহায্য প্রদান প্রভৃতি ব্যবস্থার ফলে এ ধারণার উদ্ভব হয়েছিল যে, সুলতান সত্যিই জনগণের কল্যাণের ন্যায্য রক্ষক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর