শুক্রবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

গণতন্ত্রে আজ ঘুণ পোকা বাসা বেঁধেছে

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ

গণতন্ত্রে আজ ঘুণ পোকা বাসা বেঁধেছে

যে যার মতো করে বছরের শেষ প্রান্তে এসে মহান বিজয়ের মাসের ৬ তারিখটা আমরা উদযাপন করলাম। দলীয়ভাবে আমাদের কাছে ৬ ডিসেম্বর সংবিধান সংরক্ষণ দিবস। কেন আমরা এ দিনটিকে সংবিধান সংরক্ষণ দিবস হিসেবে পালন করি— এক কথায় তার ব্যাখ্যা দিতে গেলে বলতে হয়, যে সংবিধানকে আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বপূর্ণ বিজয়ের মধ্য দিয়ে অর্জন করেছিলাম তার ধারাবাহিকতাকে রক্ষা করেছি শত প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে।  তার জন্য ত্যাগের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি আমি এবং আমার সংগঠন জাতীয় পার্টি। অনেক কষ্ট-ক্লেশ-ব্যথা-বেদনা-যন্ত্রণা-ত্যাগ-তিতিক্ষা কিংবা হাসি-আনন্দের মধ্য দিয়ে যা কিছুর অর্জন তার সূত্রপাতের মুহূর্তটাকে স্মরণ করতে আমরা সাধারণত দিবস উদযাপন করে থাকি। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর দিনটাও ছিল তেমনি। সেই দিনটি দেশ ও জাতির জন্য শুভকর কিংবা মঙ্গলের হয়েছিল কিনা তার বিচার-বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে অনেক আগেই। তবে ’৯০-এর ৬ ডিসেম্বর দিনটা আমাদের জন্য একদিকে ছিল হতাশা জড়িত আবার আর একদিকে ছিল দেশের সংবিধানকে রক্ষা করার গৌরবের। যেমন— সন্তান জন্মদানে মায়ের প্রসব-বেদনার পরে ক্লান্ত শরীরে নবজাতকের কান্না শোনার পরিতৃপ্তি। সেই তৃপ্তির আলোকে প্রতিবছর পালিত হয় ওই সন্তানের জন্মদিন। আমাদের পরিতৃপ্তি ছিল ওটাই যে, শত উসকানি নৈরাজ্য-সংঘাত এবং ধ্বংসের রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপের মধ্যেও রক্তে অর্জিত সংবিধানকে আমরা রক্ষা করেছি, অন্যথায় দেশকে অসাংবিধানিক আবর্তে নিমজ্জিত হতে হতো। অলক্ষ্যে তার ক্ষেত্রও প্রস্তুত হচ্ছিল। সেটা হতে না দিয়ে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা আমরা রক্ষা করতে পেরেছি বলেই ৬ ডিসেম্বর তারিখটাকে আমরা সংবিধান সংরক্ষণ দিবস হিসেবে পালন করি।

কীভাবে সেদিন আমি সংবিধানকে সংরক্ষণ করেছিলাম অল্প কথায় তার কিছুটা ব্যাখ্যা দিতে চাই। দেশে তখন সাংবিধানিক সরকারই বহাল ছিল। আমি নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি ছিলাম। বর্তমানের মতো তখনো দেশে সাংবিধানিক আওতায় একটি সংসদ ছিল। ক্রমানুসার হিসেবে সেটা ছিল ৪র্থ সংসদ। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকার বদলের উপায় হচ্ছে— নির্বাচনের মাধ্যমে বিজয়ী পক্ষের কাছে বিগত সরকারের ক্ষমতা হস্তান্তর। কিন্তু সে পথ অনুসরণ না করে ঢাকাকেন্দ্রিক আন্দোলনে দাবি করা হলো— আমাকে পদত্যাগ করতে হবে। কীভাবে পদত্যাগ করব, কার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে, তার কোনো ব্যাখ্যা নেই। দাবি একটাই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। কথাটা ছিল এই রকম যে, স্লোগান উঠল— ‘মানি না-মানবো না’। জিজ্ঞাসা করা হলো— ‘কি মানো না-কি মানবা না’। উত্তর হলো— ‘জানি না-জানব না’। ওই ধরনের পরিস্থিতির মধ্যেও একটি কথা শোনাতে সক্ষম হয়েছিলাম যে, কার কাছে পদত্যাগ করব, তেমন একজন ব্যক্তি দিন যার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারি।

অতঃপর সরকারবিরোধী আন্দোলনের তিন জোট কর্তৃক মনোনীত হলো সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ। কিন্তু আমাদের সংবিধানে কী আছে যে— প্রধান বিচারপতি সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারে? সেই পর্যায়ে আমার ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়াকে সংবিধানের আওতায় নিয়ে আসার জন্য আমার উপ-রাষ্ট্রপতি মওদুদ আহমদকে পদত্যাগ করতে বললাম। তিনি পদত্যাগ করলেন। তখন উপ-রাষ্ট্রপতির সেই শূন্য পদে আমি প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদকে নিয়োগ করলাম। রাষ্ট্রপতি হিসেবে আমি তার শপথবাক্য পাঠ করালাম। অর্থাৎ বিচারপতি সাহাবুদ্দীন হলেন আমার সরকারের উপ-রাষ্ট্রপতি। তারপর আমি আমার উপ-রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র পেশ করলাম। এসবই ছিল সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় আমার প্রক্রিয়া। এভাবেই আমি সেদিন সংবিধানকে রক্ষা করতে পেরেছিলাম। এ ঘটনা প্রবাহের আলোকে আমরা যদি ৬ ডিসেম্বর সংবিধান সংরক্ষণ দিবস হিসেবে পালন করি তাহলে সেটাই কি যথার্থ হবে না?

আমাদের বিপরীতে আরও দুটি জোট বা কিছু ছোট ছোট দল ৬ ডিসেম্বর পালনের পৃথক পৃথক নাম দিয়েছে। কেউ বলছেন, ‘গণতন্ত্র মুক্তি দিবস’, কেউ বলছেন ‘স্বৈরাচার পতন দিবস’। এ বিষয়েও কিছু আলোচনার আছে। মূলত এসব বিষয় নিয়ে কিছু কথা লেখার তাগিদ বোধ করছি— ৬ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে ‘ডেইলি স্টার’ পত্রিকায় প্রকাশিত পত্রিকাটির প্রকাশক ও সম্পাদক মাহফুজ আনামের লেখা “Democracy restoration day, 26 years on/ Democracy is what the winner says it is” শিরোনামে মন্তব্য কলামের বক্তব্য নিয়ে তিনি লিখেছেন যে, ২৬ বছর আগে আমি আন্দোলনের মুখে ৬ ডিসেম্বর পদত্যাগ করার মধ্য দিয়ে ১৯৯১ সালে গণতন্ত্র ও প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তখন থেকে ওই দিনটিকে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার দিবস’ হিসেবে পালিত হচ্ছে। তারপর খেদোক্তি ব্যক্ত করে লিখেছেন— “The irony is that the autocrat we toppled is now a special envoy to the present prime minister with the rank of a minister and his party, the one that people shunted out of power, is the formal opposition in the parliament led by the autocrat’s wife with three of its members occupying ministerial slots. This makes us the only parliamentary system in the world where the so-called opposition party is also a part of the government.”

মাহফুজ আনামের মতো একজন সম্পাদক ও প্রকাশকের কাছে ন্যূনতম নিরপেক্ষতা আশা করা আমার ভুল হবে, সেরকমটি আমি ভাবতে চাইনি কখনো। ’৯০-এর ৬ ডিসেম্বর আমার স্বেচ্ছা পদত্যাগকে যদি ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার দিবস’ ধরা হয় তাহলে দেশবাসীর জানার বিষয় হলো এই যে, গণতন্ত্রের রূপ কি— মানুষের বাড়িঘরে হামলা করা, আগুন ধরিয়ে দেওয়া, তাদের সম্পদ লুট করা, মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলা? ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বরের পরে রাজধানী ঢাকাতে আনন্দ-উল্লাসের অপর পিঠে জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের ওপর এবং তাদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যেভাবে হামলা করা হয়েছে, সেটাই কি ছিল ‘উদ্ধারকৃত গণতন্ত্রের’ নমুনা? তারপর আসুন বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের কথায়। তিনি কি জাতির কাছে শপথ নিয়েছিলেন— শুধু তিন জোট আর স্বাধীনতার শত্রু জামায়াতের স্বার্থ রক্ষার জন্য? যে দলটির শাসন আদালত কর্তৃক স্বীকৃত হয়েছে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা হিসেবে— প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে সেই দলটির নেতা-কর্মী সমর্থকদের প্রতি বৈরী আচরণ করা কি ‘পুনরুদ্ধার’ করা গণতন্ত্রের নিদর্শন? আমরা সংবিধানকে সংরক্ষণ করে হয়েছি স্বৈরাচার, আর যারা সংবিধানকে অবজ্ঞা করেছেন তারা হয়ে গেছেন গণতন্ত্রী!

আমি একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে আমার যাওয়ার জায়গা হচ্ছে জনগণের পাশে। আমি সেই সচেতন জাতির সামনেই প্রশ্ন রাখতে চাই, একজন প্রধান বিচারপতি যিনি রাষ্ট্রের কাছে শপথ নিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তিনি মেয়াদ থাকতে পদত্যাগ না করে কি আরেকবার রাষ্ট্রীয় শপথ গ্রহণ করতে পারেন? এটি যারা করেছেন বা করিয়েছেন তারা কি সংবিধানকে পাশ কাটিয়ে যাননি? আবার তিনিই শপথের আওতায় উপ-রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে প্রধান বিচারপতির পদে ফিরে গেলেন কীভাবে? এসব কার্যকলাপ যে অসাংবিধানিক ছিল সেটার বৈধতা দিতেই তো সংবিধানে সংশোধনী আনতে হয়েছে।

মাহফুজ আনাম সাহেব তিন জোটের রূপরেখা এবং শর্তাবলির কথা উল্লেখ করে বলতে চেয়েছেন— আমি কীভাবে মন্ত্রীর মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হই, আমার স্ত্রী কেন বিরোধী দলের নেতা হন, আমার দলের লোক কেন মন্ত্রিসভার সদস্য হন ইত্যাদি সব খেদোক্তি। প্রথমেই আমি জানতে চাই তিন জোটের রূপরেখার মধ্যে কোথাও ছিল যে, আমি ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার পর যে নির্বাচন হবে সেখানে জাতীয় পার্টির জন্য কোনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকবে না, আমাদের স্বচ্ছন্দে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না— আমাকে এবং আমার দলের নেতাদের জেলে পাঠিয়ে শুধু তিন জোট আর জামায়াত নির্বাচন করবে— নির্বাচন করতে জাতীয় পার্টিকে মাঠেই নামতে দেওয়া হবে না? কেন এসব কথা লিখতে মাহফুজ সাহেবদের কলমের কালি শুকিয়ে যায়?

কিন্তু সব অবিচারের বিচার করার সর্বোচ্চ আদালত হচ্ছে জনতার আদালত। সেই আদালতের বিচারের রায় কিন্তু আমরা পেয়েছি। শত প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও জেলে থেকে নির্বাচন করে আমরা ৩৫ আসনে বিজয়ী হয়েছি। আমি নিজে ৫ আসনে জয়লাভ করেছি— তাও  একবার নয়, দুবার করে। ’৯০-পরবর্তী নির্বাচন যদি সবার  জন্য অবাধ নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ থাকত তাহলে জনগণ দেখিয়ে দিত কে ক্ষমতায় যেতে পারে। সাহাবুদ্দীন সরকার একপেশে নির্বাচন আয়োজন করে স্বাধীনতার শত্রু জামায়াতকে পুনর্বাসিত করেছে, তাদের সমর্থনে সরকার গঠিত হয়েছে। সেই জামায়াতের গাড়িতে জাতীয় পতাকা পর্যন্ত উঠেছে। এটাই হচ্ছে ’৯০-এর সরকারবিরোধী আন্দোলনের একটি অন্যতম ফসল। তারপর কোন মুখে আপনারা আমার বা জাতীয় পার্টির সমালোচনা করেন? জনগণের রায় যখন আমার পক্ষে, আদালত যখন রায় দিয়েছে— আমার সরকারকে গণতান্ত্রিক সরকার হিসেবে, সেখানে আমাকে স্বৈরাচার বলার এখতিয়ার মাহফুজ সাহেবদের থাকতে পারে না।

আপনারা ’৯০-এর ৬ ডিসেম্বরের পর গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের কথা বলছেন। কি গণতন্ত্র আপনারা কায়েম করেছেন? তিন বছর যেতে না যেতেই আমার দলকে সঙ্গে নিয়ে ’৯১-এর সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হলো? কোন গণতন্ত্র আপনারা পুনরুদ্ধার করলেন যে, ’৯৬-এর নির্বাচনের পর ’৯০-এর আন্দোলনের একটি জোটের পক্ষ থেকে আমার কাছে করুণা ভিক্ষা করতে মধ্য রাতে জেলের অভ্যন্তরে যেতে হয়েছিল? কোন গণতন্ত্র আপনারা কায়েম করেছিলেন যে, একটি সংসদের অধিবেশন ছিল মাত্র এক দিন। কোন গণতন্ত্র কায়েম করেছিলেন যে, আমাকে সঙ্গে নিয়ে চারদলীয় জোট করতে হয়েছিল? আজ আমি কেন বিশেষ দূত হলাম, তাই নিয়ে মাহফুজ সাহেব প্রশ্ন করেন। অথচ এই আমি এবং আমার দল ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে মিশে মহাজোট গঠন করে বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসন থেকে দেশকে রক্ষা করেছি।

আজকে যারা ৬ ডিসেম্বরকে ‘গণতন্ত্র মুক্তি দিবস’ বলতে চান তাদের স্মরণ করা উচিত ১৯৮৬ সালের ১০ নভেম্বর আমি সংসদে ভাষণ দিয়ে সামরিক আইন তুলে দিয়ে গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলাম। সেদিন থেকেই গণতান্ত্রিক শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যার ধারাবাহিকতা আজও বহাল আছে। আজকের  সরকারি দল সেদিনও সংসদে ছিল। তখন যদি গণতন্ত্র না থাকত তাহলে তারা সংসদে ছিলেন কীভাবে? ’৮৬-এর ১০ নভেম্বরের পরে গণতন্ত্র কখনো অবরুদ্ধ ছিল না। সুতরাং গণতন্ত্র দিবস হতে পারে একমাত্র ১০ নভেম্বর। আর যারা ‘পতন দিবস’ পালন করেন তাদের উদ্দেশে বলতে চাই— বাংলাদেশের ইতিহাসে সরকার বদলকে যদি পতন বলা হয় তাহলে বিএনপি সরকারের চেয়ে লজ্জাকর এবং নাজুক পতন আর কোনো সরকারের হয়নি। খুনি মোশতাক সরকারের স্থায়ীকালও ছিল ১৮০ দিন। আর ’৯৬-এর বিএনপি সরকারের স্থায়ীকাল ছিল মাত্র ১৫ দিন। এ সময়ের মধ্যে যে সংসদ ছিল সে সংসদে মাত্র এক দিন অধিবেশন হয়েছে। তারপরই সরকারের পতন। আন্দোলনের মুখে এর চেয়ে বড় পতন আর কোনো সরকারের কখনো হয়নি। সুতরাং পতন দিবস যদি পালন করতে হয়- তাহলে সেটার নাম হওয়া উচিত ‘দুরাচারিণীর পতন দিবস’। যার উৎপত্তিকাল ১৫ ফেব্রুয়ারির ’৯৬।

মাহফুজ আনাম বিএনপির দুরবস্থায় তার মন্তব্য কলামে লিখেছেন— “Meanwhile the second largest political party in the country that formed the government and was the biggest opposition party twice respectively after restoration of democracy, cannot hold party events without the government’s permission, cannot hold public rallies without the fear of police repression, whose leaders run from pillar to post appearing in case lodged in various parts of the country and, most alarmingly, some of whose members have simply disappeared.” মাহফুজ সাহেবের কি মনে আছে ’৯১ সালে জামায়াতের কাঁধে ভর করে বিএনপি ক্ষমতায় এসে জাতীয় পার্টির সঙ্গে কী ধরনের ‘গণতান্ত্রিক’ আচরণ করেছে? জাতীয় পার্টির ১০ জন লোক একসঙ্গে হাঁটতে পারত না। জাতীয় পার্টির ১৬০টি বড় জনসভাকে ১৪৪ ধারা জারি করে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ঢাকার সায়েদাবাদে, গুলিস্তানে, বায়তুল মোকাররমের সামনে, দৈনিক বাংলার মোড়ে, শাপলা চত্বরে, পান্থপথে জাতীয় পার্টির জনসভায় পুলিশ কীভাবে হামলা চালিয়েছে— সেই নািস যুগের কথা তো কারও ভুলে যাওয়ার কথা নয়। নিয়তির নির্মম পরিহাসে সেই পাপের প্রায়শ্চিত্ত এখন বিএনপিকে করতে হচ্ছে। ভাগ্যটাই হচ্ছে এরকম যে, গিলোটিন যিনি তৈরি করেছিলেন সেই গিলোটিনেই তার শিরশ্ছেদ হয়েছে। ’৯০-এর ৬ ডিসেম্বর আমরা সংবিধানকে সংরক্ষণ করেছিলাম— সেটা আমাদের গৌরব।  আর যারা এটাকে অন্য দৃষ্টিতে দেখেন তাদের অবদান হচ্ছে এদেশে গণতন্ত্রের নামে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার প্রবণতা সৃষ্টি। তাই গণতন্ত্রের কাঠামোতে আজ ঘুণ পোকা বাসা বেঁধেছে।  এখন মাহফুজ সাহেবদের হিসাব করতে হবে ’৯০-এর ৬ ডিসেম্বরে কী হারিয়েছেন আর কী পেয়েছেন।

            লেখক : সাবেক রাষ্ট্রপতি।

সর্বশেষ খবর