শুক্রবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

সাহাবিদের সঙ্গে প্রিয় নবীর আনন্দ-বিনোদন

মুফতি মুহাম্মদ আল আমিন

সাহাবিদের সঙ্গে প্রিয় নবীর আনন্দ-বিনোদন

মানবতার মুক্তির দিশারী, মরুর দুলাল, দুজাহানের বাদশাহ রসুল (সা.) এর আচার-ব্যবহার ছিল অপূর্ব। সাহাবাদের প্রতি তাঁর ভালোবাসা ছিল অনেক গভীর।  আন্তরিকতায় পরিপূর্ণ। সাহাবি বলা হয় এমন সৌভাগ্যবান ব্যক্তিকে যিনি রসুল (সা.)-কে ইমানের সঙ্গে স্বচক্ষে দেখেছেন বা রসুল (সা.) তাকে দেখেছেন। কারণ কোনো সাহাবি এমনও ছিলেন যিনি অন্ধ। রসুলকে দেখেননি। তবে রসুল (সা.) তাকে দেখেছেন। সাহাবি শব্দের বহুবচন হলো সাহাবা। প্রত্যেক সাহাবি মনে করতেন— রসুল আমাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন। সর্বাধিক মহব্বত করেন। আমি প্রিয় নবীর সবচেয়ে বেশি প্রিয়। নবী (সা.) সাহাবাদের যেমন আদেশ-উপদেশ দিতেন, তেমনি আনন্দ-বিনোদনমূলক আচার ব্যবহারও করতেন। কৌতুক করতেন। হজরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, একবার নবী করীম (সা.) তাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে দুই কানবিশিষ্ট ব্যক্তি (আবু দাউদ, তিরমিজি)। এখানে লক্ষণীয় বিষয় এই যে, সব মানুষের কান দুটি। তবু ভালোবাসার আধার প্রিয় নবী স্নেহের আনাসকে ‘দুই কানবিশিষ্ট’ বলে বিনোদন করলেন। তার হূদয়ে আনন্দ দিলেন। হজরত আনাস (রা.) আরও বলেন, নবী করীম (সা.) আমাদের সঙ্গে খুবই আন্তরিকতাপূর্ণ ব্যবহার করতেন। এমনকি তিনি একবার আমার ছোট ভাইকে বললেন, হে আবু উমাইর! তোমার ছোট বুলবুলিটি কোথায় গেল? তার একটি ছোট বুলবুলি পাখি ছিল, যা নিয়ে সে খেলা করত। পাখিটি মারা গিয়েছিল (বুখারি ও মুসলিম)। উভয় জগতের সরদার রসুলে আরাবি (সা.) কর্তৃক সামান্য বুলবুলি পাখির খবর নেওয়া শুধুই আনন্দ দেওয়ার জন্য। হজরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, একবার সাহাবিগণ বললেন, ইয়া রসুলুল্লাহ! আপনি আমাদের সঙ্গে কৌতুকপূর্ণ কথাবার্তা বলেন কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তবে আমি যা বলি সত্যই বলে থাকি (তিরমিজি)। হজরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত রয়েছে, একবার এক ব্যক্তি রসুল (সা.)-এর কাছে যানবাহন হিসেবে একটি সওয়ারি চাইলে তিনি (কৌতুকছলে) বললেন, আচ্ছা আমি তোমাকে একটা উটের বাচ্চা প্রদান করব। এতে সে বলল, উটের বাচ্চা দিয়ে আমি কী করব? (অর্থাৎ আমি চেয়েছি প্রাপ্তবয়স্ক উট, আর আপনি বলছেন উটের বাচ্চা দেবেন) জবাবে রসুল (সা.) বললেন, প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক উট তো তার মায়ের বাচ্চা (তিরমিজি, আবু দাউদ)। হজরত আনাস আরও বলেন, একবার নবী করীম (সা.) এক বৃদ্ধা মহিলাকে বললেন, কোনো বৃদ্ধা মহিলা বেহেশতে যেতে পারবে না।

তখন সে বৃদ্ধ মহিলাটি জিজ্ঞেস করল কেন, তা কী কারণে? উক্ত বৃদ্ধা কোরআন পাঠ করেছিল। নবী করীম (সা.) বললেন, তুমি কি পবিত্র কোরআনে এ আয়াতটি পাঠ করনি? যার অর্থ ‘আমি তাদের (অর্থাৎ স্ত্রীলোকদের) বেহেশতে দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করব এবং তাদের (তখন) কুমারী বানাব’  (রাজিন)।

লেখক : খতিব, সমিতি বাজার মসজিদ, নাখালপাড়া, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর