শনিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
বায়তুল মোকাররমের খুতবা

পরোপকারিতায় মহানবী (সা.)-এর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য

মুহিবুল্লাহিল বাকী
পেশ ইমাম ও ভারপ্রাপ্ত খতিব বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ

ইসলাম শান্তি ও সহানুভূতির ধর্ম। পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন এবং সহযোগিতার মনোভাব ইসলামের অন্যতম আদর্শিক বিষয়। এ জীবন শুধু নিজের ভোগ-বিলাসিতার জন্য নয়; বরং গোটা সৃষ্টির উপকার সাধন এবং কল্যাণকামিতা প্রত্যেক মানুষের অন্তরে জাগ্রত থাকবে এটাই ইসলামের বিধান। রসুল (সা.) বলেছেন, গোটা সৃষ্টি আল্লাহর পরিবার। তাই পরোপকারের চেতনায় কোনো শ্রেণিভেদ নেই। বড়-ছোট, ধনী-গরিব, আত্মীয়-অনাত্মীয়, স্বজাতি-বিজাতি, মুসলিম-অমুসলিম এসব ব্যবধানের ঊর্ধ্বে উঠে ইসলামের শান্তি ও সৌহার্দ্যের সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।

মহানবী (সা.) ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এতই উন্নত যে পরোপকার তথা অন্যের কল্যাণকামিতার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অগ্রগামী। মহান আল্লাহ তাঁকে গোটা মানব জাতির জন্য রহমত হিসেবে পাঠিয়েছিলেন। আল কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আপনাকে গোটা জগতের রহমতস্বরূপ পাঠানো হয়েছে।’

বাস্তবিক অর্থে শুধু পরোপকারের ক্ষেত্রে নয়, মহানবী (সা.)-এর আবির্ভাব গোটা মানবসভ্যতার ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। মানব জীবনের এমন কোনো দিক নেই, যা তাকে স্পর্শ করেনি। এমন কোনো অনুভূতি নেই, যা তিনি অনুভব করেননি।

তিনি নিজের পরিচয় তুলে ধরেছেন এভাবে : ‘আমি প্রেরিত হয়েছি উন্নত চরিত্রের পূর্ণতাবিধানের জন্য।’ আল হাদিস। বস্তুত উত্তম আদর্শ-চরিত্রের দাবি হলো আল্লাহ-প্রদত্ত দীনের চেতনা নিজের অন্তরে ধারণ এবং সমাজ জীবনে তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করা। মহানবী (সা.)-এর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে পরোপকার বা খিদমতে খালক একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়। অন্য ভাইয়ের দুঃখে দুঃখিত হওয়া ও বিপদগ্রস্তের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন উন্নত চরিত্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। রসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর বান্দাদের রহম কর তাহলে তোমার প্রতিও রহম করা হবে।’  আল হাদিস। অন্যত্র বলা হয়েছে : যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করে না তার প্রতিও দয়া করা হবে না।

পরোপকারিতার প্রতি গুরুত্বারোপ করে মহানবী (সা.) আরও বলেছেন, ‘আল্লাহ অন্য মানুষের প্রতি দয়া প্রদর্শনকারীর প্রতি দয়া করেন। তোমরা জগদ্বাসীর সঙ্গে দয়া ও উপকারিতার আচরণ কর। তাহলে আসমানের মালিকও তোমাদের প্রতি দয়া ও মমতার আচরণ করবেন।’ এ হাদিস থেকে প্রমাণিত হলো, ইসলাম শত্রুবন্ধুনির্বিশেষ সবার সঙ্গে এমনকি সব সৃষ্ট জীবের সঙ্গে দয়া-মমতা ও উপকারিতামূলক আচরণ প্রদর্শনের শিক্ষা দিয়েছে।

মহানবী (সা.) এক উল্লেখ করেছেন, এক মহিলা একটি কুকুরকে পিপাসার তাড়নায় জিব দ্বারা কাদামাটি লেহন করতে দেখে দয়াপরবশ হয়ে কুকুরটিকে পানি পান করিয়েছিলেন। ফলে আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির প্রতি দয়া প্রদর্শনের জন্য বিনিময়ে তাকে জান্নাত দান করেন।

সর্বশেষ খবর