রবিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

কর্মসংস্থানে বিসংবাদ

বেকারত্ব দূরীকরণের উদ্যোগ নিতে হবে

দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ ক্রমেই সীমিত হয়ে পড়ছে। জনসংখ্যা যে হারে বাড়ছে সে হারে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি না পাওয়ায় চাকরির বাজারে ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই ছোট সে তরীর মতো অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি ব্যাটারি বিপণনকারী একটি প্রতিষ্ঠানের ছয়টি পদের জন্য জমা পড়েছে ৮২ হাজার ৬৫২ চাকরিপ্রার্থীর দরখাস্ত। ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্টের ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের এক বিশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের হার সবচেয়ে বেশি। প্রতি ১০০ স্নাতক ডিগ্রিধারী তরুণ-তরুণীর মধ্যে ৪৭ জনই বেকার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মতে, বেকারদের মধ্যে চিকিৎসক-প্রকৌশলীর হার ১৪ দশমিক ২৭ শতাংশ। নারী চিকিৎসক-প্রকৌশলীর মধ্যে বেকারত্বের হার প্রায় ৩১ শতাংশ। এর পরই আছেন উচ্চমাধ্যমিক ডিগ্রিধারীরা। তাদের ক্ষেত্রে বেকারত্বের হার ১৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ। ২০টি সর্বাধিক বেকারত্বের দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২। আইএলও’র ‘বিশ্ব কর্মসংস্থান ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি-২০১৫’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৪ সালে বাংলাদেশে বেকারত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে ৪.৩৩ শতাংশ। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৯০ থেকে ৯৫ সালে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী বেকার যুবকের সংখ্যা ছিল ২৯ লাখ। কিন্তু ২০০৫ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে তা প্রায় পাঁচগুণ বেড়ে ১ কোটি ৩২ লাখে দাঁড়িয়েছে। বেকারত্ব বৃদ্ধির মূল কারণ কাঙ্ক্ষিত হারে বিনিয়োগ বৃদ্ধি না পাওয়া। সরকার বিনিয়োগ ক্ষেত্রে উদারনীতি গ্রহণ করলেও আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতায় তা বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণে ব্যর্থ হচ্ছে। বিনিয়োগে গতি আনার ক্ষেত্রে সরকারের আগ্রহের অভাব না থাকলেও বাস্তবায়ন পর্যায়ের গাফিলতি ও সুশাসনের অভাব সবকিছুই নিষ্প্রভ করে দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষা পদ্ধতির কারণে দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের শিক্ষিত যুবক-যুবতীদের ৯০ শতাংশই সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত। কিন্তু শিল্পকলকারখানা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের শিক্ষিতদের চাহিদা শতকরা ৩০ ভাগ। বেসরকারি খাতে কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন লোকের চাহিদা থাকলেও সে ধরনের জনশক্তির অভাবে বিদেশ থেকে লোক এনে চাহিদা মেটানো হচ্ছে। বেকারত্বের অবসানে কর্মমুখী শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথাও ভাবতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর