রাজধানীর রাজউক নিয়ন্ত্রণাধীন আবাসিক এলাকাগুলো আবাসিক রূপ হারিয়ে পুরোদস্তুর বাণিজ্যিক চেহারা ধারণ করেছে। কুম্ভকর্ণের ঘুম থেকে জেগে উঠে রাজউক ঘটা করে আবাসিক এলাকা থেকে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান অপসারণের উদ্যোগ নিলেও সে উচ্ছেদ অভিযানও কার্যত থমকে আছে। গুলশান, বনানী, উত্তরা, বারিধারায় বাসাবাড়িতে স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, ব্যবসায়িক দফতরসহ গড়ে উঠেছে সারি সারি দোকানপাট। রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন অবৈধ স্থাপনার বিরুদ্ধে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখলেও রাজউকের নীরবতায় কাঙ্ক্ষিত সফলতা অর্জন সম্ভব হচ্ছে না। চলতি বছরের ৪ এপ্রিল মন্ত্রিসভার বৈঠকে ছয় মাসের মধ্যে রাজধানীসহ আবাসিক এলাকার বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রতি ১৫ দিন পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে এ সংক্রান্ত সমন্বয় সভা করার কথা থাকলেও সে সিদ্ধান্ত ফাইল চাপা রাখা হয়েছে অদৃশ্য কারণে। গত ১৬ মের পর এ পর্যন্ত কোনো সভাই অনুষ্ঠিত হয়নি। সর্বশেষ সভায় প্রাথমিকভাবে রাজধানীর আবাসিক এলাকার ছয় হাজার বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান অপসারণের সিদ্ধান্ত হলেও তা কার্যকর দূরের কথা বেঁধে দেওয়া সময়সীমায় সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো তাদের কার্যক্রম শুরু করতেও পারেনি। স্থানীয় সরকার সচিবের নেতৃত্বাধীন কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আবাসিক এলাকা থেকে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান অপসারণে প্রথমে ট্রেড লাইসেন্স বাতিলের জন্য দুই সিটি করপোরেশনকে চিঠি দেওয়ার কথা। একই সঙ্গে রাজউককেও নোটিস দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরপর ধাপে ধাপে পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও টেলিফোন সেবা কর্তৃপক্ষ চিঠি দিয়ে তাদের সেবা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করবে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে এসব সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়নি। আবাসিক এলাকা বাণিজ্যিক এলাকায় রূপান্তরের হোতাদের সঙ্গে রাজউকের কর্তাব্যক্তিদের বোধগম্য সুসম্পর্কের কারণে সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত আলোর মুখ দেখছে না। রাজউকের নেতৃত্বে লোক দেখানো উচ্ছেদ অভিযান শুরু হলেও তা থেমে গেছে হঠাৎ করে। আবাসিক এলাকার বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো শুরুতে কিছুটা আতঙ্কের মধ্যে থাকলেও এখন তারা অদৃশ্য মহলের আশ্বাসে উৎকণ্ঠামুক্ত। রাজধানীর আবাসিক এলাকার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হলে নিয়ম ভঙ্গকারীদের প্রতি বিদ্যমান নমনীয়তার অবসান ঘটাতে হবে।