সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

প্রস্তাবটি ভেবে দেখুন

স্বপন দাশগুপ্ত

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে নতুন কমিটি গঠিত হয়েছে। নতুন কমিটিতে জননেত্রী শেখ হাসিনা অষ্টমবারের মতো দলের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। আর সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি ওবায়দুল কাদের।

সম্মেলনে জামায়াত ছাড়া ১৪ দলের বাইরের প্রায় সব রাজনৈতিক দলকেই উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু বিএনপি বা ২০দলীয় জোটের কোনো নেতা সম্মেলনে উপস্থিত হননি। তবে ১৪ দলের বাইরের বিকল্প ধারার সভাপতি ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান, জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, সিপিবির সভাপতি মোজাহিদুল ইসলাম সেলিমসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত হননি গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি আবদুল কাদের সিদ্দিকী। সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ১১টি দেশের রাজনৈতিক দলের ৫৫ জন নেতা। এ নেতাদের মধ্যে অনেকেই সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে শুভেচ্ছা বক্তব্য রেখেছেন। সম্মেলন উপলক্ষে বিএনপি চেয়ারপারসন ও মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দাওয়াত দিতে চিঠি নিয়ে গিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল। চিঠি প্রাপ্তির পরপরই বিএনপি নেতা সাবেক যুবদলের মহাসচিব আলাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগের মতো হীনমন্যতায় ভুগি না, আমরা অবশ্যই সম্মেলনে যাব।’ কিন্তু আলাল শেষ পর্যন্ত কথা রক্ষা করতে পারেননি। বিএনপি মহাসচিব কিংবা কোনো প্রতিনিধি দল ওই সম্মেলনের দাওয়াতে উপস্থিত হননি। এ সম্মেলনে উপস্থিত না থাকা বিএনপির জন্য একটি বড় ভুল। এর আগেও একই ধরনের ভুল তারা আরও দুবার করেছেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টেলিফোনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে। কিন্তু তিনি শেষ পর্যন্ত আমন্ত্রণ গ্রহণ করে আলোচনায় না এসে নির্বাচন প্রতিহত করার ডাক দিয়েছিলেন। বেগম জিয়া তার সর্বশক্তি দিয়ে নির্বাচন প্রতিহত করার কর্মসূচিও পালন করেছেন, কিন্তু সফল হননি। এরপর আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা সমবেদনা জানানোর জন্য বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে গিয়েছিলেন, তাকে গেট থেকে ফেরত আসতে হয়েছে। এমনকি বিএনপির কোনো সিনিয়র নেতাও তাকে স্বাগত জানাননি। আর তৃতীয় ভুল হলো বিএনপি কোনো প্রতিনিধি দল সম্মেলনে না পাঠানো। সম্মেলনে কোনো প্রতিনিধি দল পাঠানো হলে এটা দেশের রাজনীতিতে ইতিবাচক ফল বয়ে আনত। এ ছাড়া বিদেশি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে সহমর্মিতা আশা করতে পারত বিএনপি। এমনকি সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে বিএনপি নেতাদের উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে আরও সংযত বক্তব্য দিতে হতো। এ সুযোগও বিএনপির হাতছাড়া হলো। আমার কেন জানি মনে হয়, বিএনপি বার বার ইচ্ছা করে ভুলের ফাঁদে পা দিচ্ছে। পাকিস্তান আমলে মুসলিম লীগ একটা বড় রাজনৈতিক দল ছিল, কিন্তু ভুলের খেসারত দিতে গিয়ে ওই মুসলিম লীগের আজ আর কোনো অস্তিত্ব নেই। এ উপলব্ধিটা যত তাড়াতাড়ি বিএনপি বুঝতে পারবে, ততই জাতির জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে।

এখন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কিংবা রুহুল কবির রিজভী আগামী নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের যতই সমালোচনা করুন না কেন, তাতে জনমতের কোনো প্রতিফলন ঘটবে না। এ বিএনপি নেতারাই যখন উচ্চৈঃস্বরে বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগ আগামীতে ৩০টির বেশি আসন পাবে না।’ বিএনপি নেতাদের এ বক্তব্যের জনমতের কোনো প্রতিফলন ঘটেছে, নিশ্চয়ই নয়। এসব বক্তব্যেকে জনগণ মনে করে বিএনপি দলের নেতা-কর্মীকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য এ বক্তব্য দিয়েছেন নেতারা। একই কথা আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর বক্তব্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তিনি ও তার দলের নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা করার জন্য এসব কথা বলেছেন। সম্মেলনের এ বক্তব্যকে অন্যভাবে ব্যাখ্যা করার কোনো সুযোগ নেই। কারণ আওয়ামী লীগ মনে করে, আগামী সংসদ নির্বাচনকে কোনোভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ দেওয়া যাবে না। এ কারণে সব দলের অংশগ্রহণমূলক একটা সংসদ নির্বাচন চায় আওয়ামী লীগ। এ লক্ষ্যে এখন থেকেই দলের নেতা-কর্মীদের জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।

সম্মেলনের ঘোষণাপত্র, নতুন কমিটি, সভানেত্রী ও সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য, সম্মেলনের সিদ্ধান্ত ও সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্ট পুস্তিকাকারে ছাপিয়ে ১ টাকার বিনিময়ে দেশের জেলা কমিটিগুলোর কাছে বিতরণ করা যেতে পারে। নেতা-কর্মীদের বলতে হবে যাতে তারা সম্মেলনের পুস্তিকা জনগণের কাছে দুই টাকার বিনিময়ে বিক্রি করেন। এ প্রচারণা চালানোর জন্য ছয় মাস সময় নির্ধারণ করে দিতে হবে। ছয় মাস পর প্রতিটি জেলা কমিটি এ পুস্তিকার হিসাব কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে জমা দেবে। ৫ কোটি পুস্তিকা বিক্রি করে যদি ১০ কোটি টাকা সংগ্রহ করা যায়, তাহলে তা আগামী নির্বাচনের জন্য একটা বড় কাজ হবে। জনসম্পৃক্ততাও বাড়বে। ছোটকালে এ ধরনের পুস্তিকা আমিও সংগ্রহ করেছি, আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আমলে এ ধরনের কর্মসূচি নেওয়া হতো এ পুস্তিকা বিক্রি করে হয়তো বেশি টাকা সংগ্রহ করা যেত না। তবুও বঙ্গবন্ধু বলতেন, ‘এই টাকায় বরকত আছে।’ আমার মনে হয় আওয়ামী লীগের নতুন সাধারণ সম্পাদক এটা ভেবে দেখতে পারেন।

     লেখক : সাংবাদিক ও মুক্তিযোদ্ধা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর