মঙ্গলবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

আল্লাহ ক্ষমাশীল এবং দয়াবান

আল্লামা মাহমূদুল হাসান

ইয়াজিদ মানুষের ওপর অনেক জুলুম করেছেন। তা সত্ত্বেও তিনি আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হননি। মানুষ ইয়াজিদ সম্পর্কে অনেক খারাপ উক্তি করে, যা ঠিক নয়। ওলামারা তার সম্পর্কে নীরবতা অবলম্বন করেছেন। ইয়াজিদ মৃত্যুর সময় অনেক আফসোস করে বলেছিলেন, ‘হায়! আমার কী হবে? জাহান্নাম মনে হয় আমার জন্যই অপেক্ষমাণ। আমি মানুষকে যে কষ্ট দিয়েছি, তাতে জাহান্নাম ছাড়া আমার উপায় নেই।’ সে যুগের শ্রেষ্ঠ বুজুর্গ ছিলেন হজরত হাসান বসরি (রহ.)। মৃত্যুর সময় তাকে ডাকা হলে তিনি অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। এতে ইয়াজিদ আরও বিচলিত হন এবং বলেন, ‘আমার আর কোনো রক্ষা নেই।’

অতঃপর তার চেহারা একেবারে মলিন হয়ে যায়, কিন্তু কিছু সময় পর দেখা গেল, বিষণ্নতা কেটে গেছে এবং প্রফুল্লের আভা ফুটে উঠেছে। জিজ্ঞাসা করা হলো, কেন আপনার এমন অবস্থা হলো? উত্তরে তিনি বললেন, ‘শোনো! এই মুহূর্তে আমি কোরআন রিসার্চ করেছি। এতে আমি পেয়েছি আল্লাহর সিফাত। তিনি হলেন জাব্বার (পরাক্রমশালী), কাহ্হার (প্রতাপশালী), এগুলো দেখে আমি বিচলিত হই যে, আমি যে গুনা করেছি, আমার আর রক্ষা নেই। পরক্ষণেই যখন দেখলাম তিনি হলেন গাফফার (ক্ষমাশীল), সাত্তার (অপরাধ গোপনকারী), রাহমান (দয়াময়), তখন আমার মনে প্রফুল্লতা আসে যে, আমাকে তিনি ক্ষমা করবেন, নতুবা তিনি গাফফার ও রাহমান কীভাবে হবেন?’

আশা করেও অনেকে মুক্তি পাবে। যেমন হাদিসে দুই ব্যক্তির ঘটনা আছে, দুজনই গুনাগার। আল্লাহ উভয়কে জাহান্নামে যেতে বলবেন। একজন সোজা দৌড় দেবে, এদিক-সেদিকে তাকাবে না; অন্যজন মন্থর গতিতে হেঁটে যাবে আর পেছনে তাকাবে। অতঃপর আল্লাহ উভয়কে ডেকে এনে কারণ জিজ্ঞাসা করবেন। উত্তরে একজন বলবে, ‘জীবনভর দুনিয়ায় কোনো হুকুম পালন করতে পারিনি, যার পরিণতি আজ জাহান্নাম। এখন আপনি জাহান্নামে যেতে বলেছেন, যদি এ হুকুমটাও পালন না করি, তাহলে আমার সঙ্গে কী ব্যবহার করা হবে জানি না। তাই এ হুকুমটা পালন করার ইচ্ছা হলো। হতে পারে, এর বিনিময়ে মুক্তি পেতে পারি। তাই বলার সঙ্গে সঙ্গে দৌড় দিয়েছি, অপেক্ষা করিনি।’ অন্যজন বলবে, ‘দুনিয়ায় শুনেছি আপনি গাফফার, রাহমান আর আজ আমার জন্য অত্যন্ত ভয়ানক দিন! সুতরাং আজ যদি আপনার ক্ষমা ও দয়া না পাই, তাহলে আর কখন পাব? তাই আপনার ক্ষমার আশায় ফিরে ফিরে তাকাই, দেখি ক্ষমা পাই কিনা।’ আল্লাহ উভয়ের কথা শুনে বলবেন, ‘তোমরা উভয়ে জান্নাতে প্রবেশ কর।’ তাদের আবেগ ও আশা দেখে আল্লাহর এই হুকুম।

লেখক : খতিব, গুলশান সেন্ট্রাল জামে মসজিদ, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর