বৃহস্পতিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

শীতকাল মুমিন মুসলমানের ইবাদতের মৌসুম

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

শীতকাল মুমিন মুসলমানের ইবাদতের মৌসুম

আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহর নেয়ামত গণনা কর তবে গণনা করে তা শেষ করতে পারবে না।’ (সূরা নাহল : ১৭।) অন্যত্র তিনি বলেন, ‘আর আমাদের সৃষ্টিতে এবং চারদিকে ছড়িয়ে রাখা জীবজন্তুর সৃজনেও রয়েছে বিশ্বাসীদের জন্য নিদর্শন। (সূরা জাসিয়া : ৪।) মহান আল্লাহর নিদর্শনের মধ্যে ঋতুবৈচিত্র্যও অন্যতম নিদর্শন। ঋতুচক্রের পালাবদলে বাংলার প্রকৃতির ঘরে পা রেখেছে ‘শীত’। ষড়ঋতুর পঞ্চম ঋতু এটি। পৌষ ও মাঘ এ দুই মাস নিয়ে শীতকাল। এক হাদিসে রসুল (সা.) শীতকে মুমিনের বসন্তকাল বলে উল্লেখ করেছেন। (মুসনাদে আহমাদ।) শীতের সময় মুমিন বান্দা তার প্রভুর সান্নিধ্যে থাকার সুযোগ বেশি বেশি অর্জন করেন। কারণ, শীতের রাতগুলো দীর্ঘ হয় আর দিন ছোট হয়। যে কারণে রাতে নফল তাহাজ্জুদ নামাজ আর দিনে নফল রোজা- দুটোই সহজ হয়ে যায় আল্লাহপ্রেমিক বান্দার কাছে। ফলে প্রেমিক বান্দা শীতকে নিজের জন্য গনিমত মনে করে সময়ের সদ্ব্যবহার করে। মুমিনের বসন্ত শীত ঋতুতে আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের জন্য নেয়ামতের ডালি বিছিয়ে দেন। পিঠা-পায়েস, ফল-ফুল, খেজুরের রস আর শাক-সবজি যেন শীতের অনন্য নেয়ামত। শীতের পুরো সময় সবজির বাজার নানারকম সবজিতে ঠাসা থাকে। ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, গাজর, শালগম, টমেটো, শিম, চিনা বাঁধাকপি, লাল বাঁধাকপিসহ কত না সবজি! এর সঙ্গে রয়েছে শীতের মজাদার পালং ও লালশাক। এসব শাক-সবজি খেয়ে শীত কাটিয়ে দেওয়া যায় অনায়াসেই। শীতের শিশিরে সবজি থাকে টাটকা। শাক-সবজি যত টাটকা খাওয়া যায়, তার পুষ্টিগুণ তত বেশি থাকে। খেত থেকে তোলার পরই সবজির পুষ্টিগুণ নষ্ট হতে থাকে। যেমন টমেটো খেত থেকে তোলার তিন দিনের মধ্যে তার ভিটামিন ‘সি’ প্রায় অর্ধেক কমে যায়। তাই আমরা যে সবজিই খাই না কেন, তা যেন থাকে সতেজ ও টাটকা। শীতকালে সবজি খাওয়ার আরেকটা সুবিধা আছে। তা হলো শীতকালে শাক-সবজিতে পোকামাকড়ের উপদ্রব থাকে কম। তাই শাক-সবজিতে বিষাক্ত কীটনাশক গ্রীষ্ম-বর্ষাকালের চেয়ে তুলনামূলক কম দেওয়া হয়। সে জন্য শীতকালের সবজি খাওয়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই বললেই চলে। শীতের সবজি খাওয়ার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, ঋতু পরিবর্তনের প্রভাবে এবং শীতের প্রকোপে যেসব রোগ-ব্যাধির বিস্তার ঘটে- শীতের সবজি খেলেই এগুলো বিনা ওষুধে ভালো হয়ে যায়। চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা এমনটিই বলেছেন। তাই তো শীতসহ সবসময় মৌসুমি ফল ও সবজি খাওয়ার পরার্শ দেন ডাক্তাররা। শীতের সহজলভ্য সবজির মধ্যে বাঁধাকপি অন্যতম। বাঁধাকপি ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে দেহকে রক্ষা করে এবং শ্বাস-প্রশ্বাসে সাহায্য করে। খনিজ পদার্থের উপস্থিতির জন্য এটি দেহের রক্তে সমতা আনে। বাঁধাকপির পরই ফুলকপির কথা বলতে হয়। এ সবজিটি কাঁচা, সিদ্ধ, তরকারি, স্যুপ, নুডলসসহ বিভিন্ন ধরনের নাস্তায় ব্যবহার হয়। প্রসবের পর অনেক স্ত্রীলোকের মুখে কালো ছোপ পড়তে দেখা যায়। যদি কয়েক দিন নিয়মিত গাজর, ফুলকপি, বাঁধাকপির জুস খাওয়া যায়, তবে ধীরে ধীরে তা মিলিয়ে যায়। টমেটো শীতের অন্যতম আকর্ষণ। এটি একটি এন্টিঅক্সিডেন্ট সবজি। এতে লাইকোপিন পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে বলে সারা বিশ্বে এটি ক্যান্সাররোধী সবজি হিসেবে স্বীকৃত। টমেটো ত্বক ও চোখের জন্য ভালো। টমেটোতে প্যান্টোথেনিক এসিড আছে বলে পায়ের তলা ও হাতের তালু জ্বালা করার উপসর্গরোধে বেশ সুফল পাওয়া যায়। এমনিভাবে মুলারও রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ।

শুরু করেছিলাম আল্লাহর নেয়ামত সম্পর্কে। আল্লাহর নেয়ামত গণনা করে শেষ করা যাবে না বলেছে কোরআন। তবে আমাদের দৈনন্দিন জীবন নিয়ে ভাবলে আল্লাহর অবারিত করুণা ও নেয়ামতের কিছুটা অনুভব করা যাবে। ফাস্টফুডের যুগে সবজির চাহিদা কম। তাই তো হাসপাতাল এবং ডাক্তারখানার এত কদর। আল্লাহর দেওয়া নেয়ামত চিনে ব্যবহার করতে পারলে দুনিয়াবি সমস্যাগুলো যেমন মিটে যাবে তেমনি আখেরাতের বিপদও কেটে যাবে। এবারের শীতে আমরা যেন থাকি ‘সবজি-ভাতে’।  হে আল্লাহ, আমাদের শীতের সান্নিধ্যের নেয়ামত দান করে সুখী করুন।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন

www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর