শুক্রবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

গার্মেন্ট শিল্পে অস্থিরতা

অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে

গার্মেন্ট শিল্পে অস্থিরতা সৃষ্টির প্রয়াস শ্রমিক-মালিক সবার জন্যই অশনি সংকেত হয়ে দেখা দিয়েছে। গার্মেন্ট শিল্পের সবচেয়ে বড় কেন্দ্র আশুলিয়ায় এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে অস্থিরতা বিরাজ করছে। কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি সামাল দিতে ৫৫টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে। তারা বলেছেন, শ্রমিকরা কাজ করতে চাইলে শুধু সে ক্ষেত্রেই কারখানা খুলে দেওয়া হবে। আশুলিয়ার বিভিন্ন গার্মেন্ট কারখানার শ্রমিকরা তাদের মজুরি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করছে। মালিক পক্ষের বক্তব্য, শ্রমিকদের আন্দোলন অযৌক্তিক। গার্মেন্ট শিল্পের মজুরি কাঠামো গঠন করা হয়েছিল তিন বছর আগে। মজুরি কাঠামো অনুযায়ী প্রতিবছর যেহেতু ৫ শতাংশ হারে  ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হচ্ছে সেহেতু কাজ বন্ধ করে আন্দোলনে নামার কোনো যৌক্তিকতা নেই। শ্রমিকদের বক্তব্য, গত তিন বছরে ঘরভাড়াসহ জীবনযাত্রার ব্যয় ব্যাপক হারে বেড়েছে। এ অবস্থায় শ্রমিকদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিশেষত লাগামহীনভাবে বাসা ভাড়া বৃদ্ধির ঘটনা তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকিয়ে দিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে আশুলিয়ায় আগামী তিন বছর কোনো বাসা ভাড়া বাড়বে না এমন নিশ্চয়তা দেওয়া সত্ত্বেও তাতে শ্রমিকদের আশ্বস্ত করা যায়নি। আশুলিয়ায় গার্মেন্ট কারখানাগুলোতে অস্থিরতা সৃষ্টি হওয়ায় তা এ শিল্পের জন্য নতুন ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। গত এক দশকে গার্মেন্ট শিল্পে যত অস্থিরতার ঘটনা ঘটছে তার সবগুলোর সূচনা হয়েছে আশুলিয়া থেকে। লক্ষণীয় যে প্রতিবারই অস্থিতিশীলতা এমন এক সময় দানা বেঁধে ওঠে, যে সময়টিতে বিদেশি ক্রেতা প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ সফর করেন এবং সারা বছরের জন্য অর্ডার দেন। ডিসেম্বর-জানুয়ারি এ দুই মাসে বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্পে অস্থিরতা বিরাজ করলে তাতে লাভবান হয় প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো। বিশ্ববাজারে তৈরি পোশাকের দামে ধস নামায় বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্প এখন অস্তিত্বের সংকটে ভুগছে। এ দুঃসময়ে গার্মেন্টে অস্থিরতা বিরাজ করলে তা এ শিল্পের জন্য বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। স্মর্তব্য, মজুরি কাঠামো তিন বছর পর পর্যালোচনার সুযোগ রয়েছে। এ জন্য লিখিত আবেদনের বিধান থাকলেও শ্রমিকরা সে পথে না গিয়ে কর্মবিরতির পথ বেছে নেওয়ায় তা সমস্যাকে জটিল করে তুলছে।  গার্মেন্ট শিল্পের অস্তিত্বের পাশাপাশি শ্রমিকদের রুটি রুজির জন্যও বিপদ সৃষ্টি করছে।

যা এড়াতে সমঝোতার পথ বেছে নেওয়াই হবে যৌক্তিক পথ।

সর্বশেষ খবর