শুক্রবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

মুনাফিকদের শাস্তি দুনিয়া আখেরাতে

মুফতি আইনুল ইসলাম কান্ধলবী

মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, আমি তাদের দুবার শাস্তি দেব। তাফসিরকাররা এ আয়াতের ব্যাখ্যায় একাধিক মত পোষণ করেছেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, দুবার শাস্তির ব্যাখ্যা হলো দুনিয়ায় রুগ্ন হওয়ার শাস্তি ও আখেরাতের আজাব। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, দুনিয়াতে মুমিনরাও রুগ্ন হয়, এ রোগের কারণে মুমিনের গুনাহ মাফ হয়। পক্ষান্তরে মুনাফেক ও কাফেরদের ব্যাপারে এমন ব্যবস্থা নেই। কালবী এবং সদ্ধি (রাহ.) হজরত আনাছ ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, একদিন হুজুর (সা.) জুমার খুতবা দেওয়ার সময় প্রত্যেক মুনাফেকের নাম ধরে ডাক দিয়ে বলেছেন, হে অমুক! মসজিদ থেকে বের হয়ে যাও, কেননা, তুমি মুনাফেক। এভাবে সবার সামনে দিয়ে অপমানিত হয়ে মসজিদে নববী থেকে তাদের বের হতে হয়। এটি হলো প্রথম শাস্তি আর দ্বিতীয় শাস্তি হবে কবরের আজাব। ইবনে জায়েদ (রা.) বলেছেন, দুনিয়াতে তাদের জান ও মালের ওপর যে বিপদ হয় তা হলো প্রথম শাস্তি। মুজাহিদ (রা.) থেকে আরও একটি কথা বর্ণিত আছে মুনাফিকদের দুবার দুর্ভিক্ষের আজাব ভোগ করতে হয়েছে। আর আলোচ্য আয়াতে এ আজাবদ্বয়কেই উদ্দেশ্য করা হয়েছে। আর কাতাদা (রা.) বলেছেন, মুনাফিকদের শরীরে ফোঁড়া দেখা দিয়েছিল। এটি ছিল প্রথম আজাব আর দ্বিতীয় হলো কবরের আজাব। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস থেকে আরও একটি কথা বর্ণিত আছে। দুনিয়াতে শরিয়ত মোতাবেক যে শাস্তি তাদের ওপর জারি হয় এটি হলো প্রথম আজাব, আর দ্বিতীয়টি হলো কবরের আজাব।

আর কোনো কোনো তত্ত্বজ্ঞানী বলেছেন, মুনাফিকরা ইসলামের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করার জন্য যে মসজিদে জেরার তৈরি করেছিল তা জ্বালিয়ে দেওয়া ছিল প্রথম আজাব। আর দোজখের শাস্তি হবে দ্বিতীয় আজাব। সাঈদ কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, হজরত রসুলুল্লাহ (সা.) হজরত হোজাইফা (রা.)-এর কাছে গোপনে ১২ জন মুনাফিকের পরিচয় দিয়েছিলেন, তাদের ছয়জন সম্পর্কে তিনি ইরশাদ করেছেন, তাদের জন্য ফোঁড়াই যথেষ্ট যা দোজখের অগ্নির স্ফুলিঙ্গ হবে। এ স্ফুলিঙ্গটি তাদের কাঁধকে স্পর্শ করে বক্ষ পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। অর্থাৎ পেটের ব্যথা এবং অন্যান্য রোগের কারণে তাদের মৃত্যু হবে। আর অবশিষ্ট ছয়জনের স্বাভাবিক মৃত্যু হবে। সাঈদ বর্ণনা করেন সে যুগে যখন কোনো লোকের মৃত্যু হতো এবং হজরত উমর (রা.) এর কাছে সে ব্যক্তি সন্দেহভাজন হতো তখন তিনি হজরত হোজায়ফার (রা.) দিকে দৃষ্টিপাত করতেন। হজরত হোযায়ফা (রা.) যদি জানাজার নামাজ আদায় করতেন তবে তিনিও নামাজ আদায় করতেন, এই বিশ্বাসে যে, এই মৃত ব্যক্তি সেই ১২ জনের অন্তর্ভুক্ত নয়। আর যদি হজরত হোজায়ফা (রা.) জানাজার নামাজ আদায় না করতেন তবে তিনিও এ ব্যক্তির ওপর জানাজা পড়তেন না। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে মুনাফিকি করা থেকে হেফাজত রাখুন।  আমিন।

লেখক : প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল, দারুস সালাম মাদ্রাসা কুড়িল বিশ্বরোড, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর