রবিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

রজনীগন্ধা

আফতাব চৌধুরী

রজনীগন্ধা একটি অত্যন্ত সুপরিচিত ফুলের নাম, যা মানুষের ঘরের টেবিল থেকে শুরু করে বিয়েতে, গাড়ি-খাট-পালঙ্কসহ কত কিছুতে ব্যবহূত হচ্ছে। ক্রমবর্ধমান চাহিদার ওপর ভিত্তি করেই আজকাল রজনীগন্ধার ব্যবসা জোরকদমে বেড়েই চলেছে। কীভাবে রজনীগন্ধার চাষ করতে হয়, কীভাবে ফুলের উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব তার ওপর ভিত্তি করেই এ প্রতিবেদন।

রজনীগন্ধার বিভিন্ন গুণাগুণ : (১) ডাঁটা শক্ত, ফলে পরিবহনের সুবিধা অনেক। (২) এ ফুল অনেক দিন রাখা যায়। (৩) রজনীগন্ধার গন্ধ অন্যান্য ফুলের চেয়েও একটু ভিন্ন (৪) এ ফুল মোমের মতো শ্বেতশুভ্র ভাব (৫) এ ফুল থেকে সুগন্ধি তেল বের করে নানা কাজে ব্যবহার করা যায়।

রজনীগন্ধার প্রকারভেদ : রজনীগন্ধা মূলত দুই প্রকারের হয়। (ক) বাম প্রকৃতির (খ) ভেরিগেটা বা অন্যরূপী। এ ফুলের আবার পাপড়ি দুই ধরনের হয়- এক সারির এবং দুই সারির। এক সারির রজনীগন্ধাকে বেশিরভাগ লোকই পছন্দ করে থাকেন। এর চাষাবাদও ভালো হয়।

মাটি নির্বাচন : সারা দিন রোদ পড়ে এবং বর্ষায় পানি জমে না এ রকম স্থানকেই রজনীগন্ধার চাষাবাদের জন্য নির্বাচন করতে হবে। সাধারণত বালি দোআঁশ মাটিতে রজনীগন্ধার চাষ ভালো হয়। আমাদের এ অঞ্চলের মাটিতেও রজনীগন্ধার চাষাবাদ খারাপ হয় না।

চারা তৈরি : রজনীগন্ধার চারা বলতে গেঁড় বা বালক্ষকেই বোঝায়। তিন বছর পুরনো গাছকে মাটি ফুঁড়ে গেঁড়ের গুচ্ছ বের করা হয়। প্রতিটি গুচ্ছ থেকে ২০ থেকে ২৫টি গুচ্ছ বেশ বড় আকারের হয়। একেই আমরা বীজ রূপে রোপণ করে থাকি।

গেঁড় বা বাল্বের রোপণ পদ্ধতি : ৫-৬ বার ভালো করে লাঙ্গল চালিয়ে আর মই দিয়ে জমি সমান করতে হবে। ৩০ সেন্টিমিটার বা ১২ ইঞ্চি ব্যবধানে গেঁড় লাগিয়ে যেতে হবে লাইনে লাইনে। লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব হবে ৩০ সেন্টিমিটার। কিন্তু চতুর্থ আর পঞ্চম সারির মধ্যে ফাঁক থাকতে হবে ৪৫ সেমি বা ১৮ ইঞ্চি। আবার গেঁড়ের আয়তনের ওপর নির্ভর করবে গর্তের আয়তন। মানে গেঁড় যত বড় হবে, গর্তের আয়তনও তত বেশি হবে। সাধারণ দৃষ্টিতে গর্ত হয় ৩.৫ সেমি থেকে ৬ সেমি পর্যন্ত। মার্চ-এপ্রিল মাসে ভিজে মাটিতেই গেঁড় পুঁততে হয়।

সার প্রয়োগ : যেহেতু রজনীগন্ধা প্রচুর পরিমাণে ফলে তাই সার প্রয়োগ পরিমাণ মতো করাই দরকার। মাটি চাষ করার সময় যথেষ্ট পরিমাণে গোবর বা পচন সার মিশিয়ে দিতে হবে। রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হলে মাটি পরীক্ষা করে করলেই ভালো। অন্যথায় বিঘা প্রতি ১২ কেজি ইউরিয়া, ৩০ কেজি সিঙ্গেল সুপার ফসফেট এবং ৩ কেজি মিউরেট অব পটাশ প্রয়োগ করতে হবে। সাধারণ দৃষ্টিতে জৈব সার (খামার সার, গোবর সার, খোল প্রভৃতি) প্রয়োগ করাটাই ভালো। মে মাসে অর্থাৎ গেঁড় লাগানোর ৪০ দিন পর আবার একই পরিমাণে সার ব্যবহার করতে হবে। সুফলা সার ব্যবহার করাটাই ভালো। এভাবে সার প্রয়োগ করা চলবে তিন বছর ধরে। তারপর থেকে ফুল কমে আসতে আরম্ভ করবে। মানে গেঁড় তোলার সময় হয়ে গেছে।

মাধ্যমিক পরিচর্যা : মাধ্যমিক পরচর্যারূপে পানি সেচ করতে হয়। তবে গেঁড় থেকে পাতা না বের হওয়া পর্যন্ত কোনো সেচের দরকার নেই। গাছের পাতা বের হলেই হাল্কা সেচ করতে হয়। তবে কৃষকভাইদের একটি দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে কখনো অতিরিক্ত সেচ করা চলবে না। কারণ তা রজনীগন্ধা চাষের ক্ষেত্রে উচিত নয়।

রজনীগন্ধা তোলা : গেঁড় লাগানোর ৮০ থেকে ১০০ দিন পর অর্থাৎ জুলাই মাসে ফুল তোলা আরম্ভ হয়। সবচেয়ে বেশি ফলন হয় ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত। তবে সারা বছরই রজনীগন্ধা ফুল দিতে অভ্যস্ত। এ ফুল গাছের ডাঁটি বা স্টিক আলাদা আলাদা করে সযত্নে তুলতে হয়।

রোগ পোকা দমন : সাধারণত রজনীগন্ধা ফুলে সেলেরেটিয়াম রোলসি আই ছাড়া অন্য কোনো মারাত্মক রোগ নেই বললেই চলে। রোগাক্রান্ত গাছকে সরিয়ে ফেলতে হবে। রোগ দমনের জন্য ০.২৫ শতাংশ কাপটান ছিটিয়ে দিতে হবে। অতিরিক্ত সেচ বন্ধ রাখতে হবে। এপিড, ম্যালাথিওন (০.২৫ শতাংশ) ছিটিয়ে পোকা ধ্বংস করতে হবে।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট। বৃক্ষরোপণে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত (প্রথম স্বর্ণপদক)

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর