মঙ্গলবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

বাংলাদেশ-মিয়ানমার : বন্ধু হতে বাধা কোথায়?

তুষার কণা খোন্দকার

বাংলাদেশ-মিয়ানমার : বন্ধু হতে বাধা কোথায়?

রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক মিয়ানমারকে খুব কড়া বার্তা দিয়েছেন। এ মাসের প্রথম দিকে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে তিনি রোহিঙ্গাদের পক্ষে গণমিছিলে নেতৃত্ব দিয়ে মিছিল শেষে বক্তৃতায় মিয়ানমার এবং মিয়ানমারের নেত্রী অং সাং সু চিকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করে বলেছেন, ‘যথেষ্ট হয়েছে। আমরা আর রোহিঙ্গা নির্যাতনের দর্শক হয়ে থাকতে চাই না। এবার আমরা ইসলাম এবং মুসলমানদের রক্ষা করতে চাই।’ কি আশ্চর্য! নাজিব রাজাক ইসলাম এবং মুসলমানের রক্ষক! তিনি তো অনেক দিন আগে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মালয়েশিয়ার হাল ধরেছেন। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে কখন কোথায় বিপন্ন মুসলমানদের উদ্ধার করার জন্য তিনি জোরালো ভূমিকা নিয়েছিলেন সেটা আমাদের মনে পড়ছে না। তিনি এমন আচমকা হুঙ্কার দিয়ে ইসলাম এবং মুসলমানের রক্ষকের ভূমিকায় নামলেন কেন? গত বছর যখন কঙ্কালসার রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ নৌকায় সাগরে ভাসছিল, একফোঁটা পানির জন্য তারা যখন হাহাকার করে মরছিল তখন নাজিব রাজাক মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। আপনাদের কি মনে পড়ে, মালয়েশিয়া সে সময় তার তীরে রোহিঙ্গাবাহী নৌকা ভিড়তে দেয়নি। জাতিসংঘের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ফিলিপাইন সেদিন ক্যাম্প করে তিন হাজার রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছিল। এখন নাজিব হুঙ্কার দিলে লোকের পিলে চমকাতে পারে কিন্তু হুঙ্কারের জের ধরে কেউ কি নাজিব রাজাককে ইসলাম এবং মুসলমানের ভরসার জায়গা বলে কল্পনা করতে রাজি হবে? নাজিব রাজাক গদিতে বসার পরে দুনিয়ায় কি মুসলিম নিধন আর হয়নি? নাজিব রাজাক কি গাজা হত্যাকাণ্ড দেখেননি? ইসরায়েলের গোলার আঘাতে ধসেপড়া দেয়ালের নিচে মৃত শিশুর বিস্ময়বস্ফািরিত চোখ দেখে তিনি চোখ বুজে ছিলেন কীভাবে? যুদ্ধের দামামা বাজার পর থেকে ইরাকে লাখো মানুষের প্রাণ গেল, ওরা নাজিবের বিবেচনায় কি মুসলমান নয়? ঠিক এই মুহূর্তে সিরিয়ার আলেপ্পোতে যে মর্মন্তুদ হত্যাযজ্ঞ চলছে এটি নাজিবের হূদয়কে নাড়া দিতে পারছে না কেন? আলেপ্পোর ধ্বংসস্তূপের তলা থেকে যেসব আহত-নিহত উদ্ধার হচ্ছে তাদের জন্য নাজিব মিছিল করেছেন বলে শুনিনি। ডিসেম্বরের ১৪ তারিখে যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা শেষ হয়ে যাওয়ার পর আহত শিশুকে বুকে নিয়ে একজন মানুষ গোলাগুলি থেকে একটু আড়াল পাওয়ার আশায় দালান-কোঠার ভগ্নস্তূপের দিকে ছুটে যাচ্ছে সেই ছবিটা কি নাজিব দেখেছেন? যুদ্ধবিধ্বস্ত মধ্যপ্রাচ্যে বিপন্ন মানুষগুলোকে সাহায্য করার জন্য নাজিব রাজাককে উদ্যোগী ভূমিকায় দেখা গেলে তার হুঙ্কার আমাদের কাছে এত ফাঁপা মনে হতো না। আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে জেনে বুঝে আমরা বিশ্বাস করি, তার হুঙ্কার সম্পূর্ণ ফাঁপা, স্রেফ কিছু একটা বলতে হয় তাই বলা। কিন্তু তারপরও কথা থাকে। যারাই নাজিবের হুঙ্কার শুনলেন সবার মনে প্রশ্ন জাগল, তিনি এমন বেখাপ্পা হুঙ্কার দিলেন কেন? আধুনিক মালয়েশিয়ার স্রষ্টা ডা. মাহাথির মোহাম্মদ আমাদের সন্দেহ ঘুঁচিয়ে দেওয়ার জন্য এগিয়ে এলেন। আমাদের সামনে সত্য তুলে ধরার জন্য এই মহত্ মানুষটিকে আমি অন্তর থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। রোহিঙ্গাদের পক্ষে নাজিব রাজাককে মিছিল করতে দেখে এবং তাকে ইসলামের রক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে দেখে মাহাথির বলেছেন, রোহিঙ্গাদের পক্ষে অবস্থান নেওয়া নাজিবের রাজনৈতিক দুরভিসন্ধির একটি অংশ। নাজিব দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত শাসক। সর্বজনশ্রদ্ধেয় মাহাথির বলছেন, নাজিব দুর্নীতির দায়ে নিজে ডুবেছে, সেই সঙ্গে মালয়েশিয়াকেও ডুবিয়ে দিচ্ছে। এখন সে যেনতেনপ্রকারে আগামী বছরের নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চায়। সেই কারণে সে জনগণের দৃষ্টি তার অনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে সরিয়ে দেওয়ার মতলবে অপ্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে আব-ঝাঁপ করছে। সেই সঙ্গে মাহাথির আরও বলেছেন, নাজিব আগুন নিয়ে খেলছেন। তিনি মালয়েশিয়ার সামাজিক সম্প্রীতি নষ্ট করে নিজের আখের গোছানোর চেষ্টা করছেন যা মালয়েশিয়াকে দুর্যোগের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। বাংলাদেশে এখন অনেক রাজনীতিককে মালয়েশিয়ার নাজিবের ভূমিকায় দেখতে পাচ্ছি। তাদের অনেকে মানুষের ধর্মীয় আবেগে সুড়সুড়ি দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার মতলবে রোহিঙ্গাদের জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়েছেন। এরাও নাজিবের মতো আগুন নিয়ে খেলছেন। আমাদের দেশে যারা রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে সস্তা আবেগি কথা বলছেন তাদের জানা উচিত মিয়ানমারে মুসলমান বলতে শুধু রাখাইন রাজ্যে বসবাসকারী রোহিঙ্গা ভাষাভাষি মানুষকেই বোঝায় না। মিয়ানমারের মোট জনসংখ্যা সাড়ে পাঁচ কোটি। তার চার শতাংশ অর্থাত্ প্রায় পঁচিশ লাখ মুসলমান সেখানে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে। মিয়ানমারের মুসলমান সম্প্রদায়ের হাল অবস্থা সম্পর্কে জানার জন্য দূরে গিয়ে তথ্য তালাশের প্রয়োজন নেই। হাতের কাছে ১০ ডিসেম্বর তারিখের মিয়ানমার টাইমস পত্রিকাটি খুলে দেখুন। এ বছর সৌদি আরব পাঁচ হাজার মিয়ানমারি নাগরিককে হজ ভিসা ইস্যু করবে বলে মিয়ানমারকে জানিয়েছে। এটি যে বিশেষ কোনো ঘোষণা তা নয়। এটি সৌদি আরবের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের রুটিন কাজের অংশ। প্রতি বছর কমবেশি পাঁচ-ছয় হাজার মুসলমান মিয়ানমার থেকে হজ পালনের জন্য সৌদি আরব গিয়ে থাকে। আমি বিষয়টি উল্লেখ করলাম এ জন্য যে, মিয়ানমারে মুসলমানরা স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে, হজের মতো ব্যয়বহুল ধর্মীয় বিধান পালন করার আর্থিক সঙ্গতিও তাদের অনেকের আছে। কিন্তু ঝামেলা বেঁধেছে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গাদের নিয়ে।

মিয়ানমার বলছে তাদের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর তালিকায় রোহিঙ্গা বলে কোনো জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব নেই। গত শতাব্দীর গোড়ায় যখন ফ্রান্সিস বুকানন নিম্ন বাংলা জরিপ করেছিলেন তার জরিপ রিপোর্টে রাখাইন অঞ্চলের ‘রুয়িঙ্গা’ ভাষাভাষি মানুষের খুব সংক্ষিপ্ত বর্ণনা পাওয়া যায়। এরপরে ১৯৪০-এর দশকে ব্রিটিশ শাসকরা যখন ভারত এবং মিয়ানমার ছেড়ে চলে যায় তখন রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গারা পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার বায়না ধরেছিল। তাদের এই আব্দার মি. জিন্নাহ এক কথায় বাতিল করে দিয়ে বলেছিলেন, প্রতিবেশী দেশ বার্মার সঙ্গে কোনো জটিলতায় যাওয়ার ইচ্ছা আমার নেই। কয়েক যুগ আগে ইতিহাসে ঘটে যাওয়া ঘটনা দুর্ঘটনা আজকের দিনে একান্তই অ্যাকাডেমিক আলোচনার বিষয়। রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের চিন্তা এখন রাখাইন রাজ্যের বর্তমান বাস্তবতা নিরিখে হওয়া প্রয়োজন। বাস্তবে রাখাইনের রোহিঙ্গা ভাষাভাষি মানুষগুলো অশিক্ষিত এবং হতদরিদ্র। তাদের অশিক্ষা এবং দারিদ্র্যের সুযোগে সেখানে সন্ত্রাসী চক্রের জন্ম এবং বৃদ্ধি একেবারে ছেলেখেলার মতো সহজ হয়ে গেছে। ১৯৮০র দশকে রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) একের পর এক আক্রমণ চালিয়ে মংড এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। তারা মূলত পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের বিভিন্ন শিবিরে প্রশিক্ষণ নিয়ে দুর্ধর্ষ তালেবান বনে গিয়েছিল। এরপর ১৯৯৪ সালে একযোগে মিয়ানমারের মংড টাউনশিপে অনেক টাইম বোমা ফাটিয়ে আরএসও তাদের শক্তিমত্তা জাহির করতে চেয়েছিল। জঙ্গি গোষ্ঠীর সন্ত্রাসী কাজ এবং তার পরিণাম সম্পর্কে আমরা ওয়াকিবহাল। অতিসম্প্রতি উগ্রবাদী সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সঙ্গে আমাদের রক্তাক্ত পরিচয় ঘটে গেছে। এটা নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন নেই। মিয়ানমারের অভিযোগ ছিল, বাংলাদেশ আরএসও সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে ১৯৯৪ সালে তারা বাংলাদেশের কক্সবাজারে সেনা ক্যাম্পে সার্জিক্যাল অপারেশন চালাতেও দ্বিধা করেনি। অর্থাত্ মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক উন্নয়নের মূল বাধা রোহিঙ্গা নয় বরং রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ। উত্সুক পাঠক, চাইলে ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে রাখাইনের সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর উত্থান এবং তাদের আন্তর্জাতিক যোগসূত্রগুলো সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন।

মি. জিন্নাহ চতুর রাজনীতিক ছিলেন। ১৯৪৭ সালে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে তিনি সস্তা আবেগে তাড়িত হননি। তিনি জানতেন, রাখাইন নিয়ে অযাচিত মাথা ঘামাতে গেলে সেটি ভবিষ্যতে পাকিস্তান-বার্মা দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সমস্যার গভীরতা অনুমান করতে পেরে তিনি পাকিস্তানের স্বার্থে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছিলেন। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, আজকের বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করবে কি করবে না সেটি নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগছে। নাফের কিনারে নৌকা ভিড়ানো আর বিজিবির ঠেলা-ধাক্কায় সেই নৌকা ফেরানো রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে তাত্ক্ষণিক ‘সার্জিক্যাল অপারেশন’ হতে পারে, তবে এটি কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে হলে বাংলাদেশকে খোলা মন নিয়ে প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে। আরও একটি বিষয়, বাংলাদেশ-মিয়ানমার দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় ইউএনএইচসিআরকে কোনোভাবেই যুক্ত করা যাবে না। কেন যাবে না তার একটি ছোট্ট উদাহরণ দিচ্ছি। কক্সবাজারের ইনানী বিচের পাশে একটি প্রাসাদতুল্য বিল্ডিং আছে যেটি রোহিঙ্গা রিলিফ অ্যান্ড রিপ্যাট্রিয়েশন কমিশনার সংক্ষেপে আরআরআরসি ভবন বলে খ্যাত। ভবনটি তৈরি করার খরচের জোগান ইউএনএইচসিআরএর তহবিল থেকে এসেছে। মিয়ানমার বারবার প্রশ্ন তুলেছে, বাংলাদেশ যদি রোহিঙ্গাদের শরণার্থী বলে মনে করে তাহলে তাদের দেখাশোনার জন্য তাদের দেশে স্থায়ী স্ট্রাকচার গড়েছে কেন? শরণার্থীদের দেখাশোনা করার প্রশ্নে পৃথিবীর কোথাও কি কোনো সরকার এমন নজির সৃষ্টি করেছে? কক্সবাজারে জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন অফিস থেকে শরণার্থী সমস্যা দেখাশোনা করা হলে হয়তো মিয়ানমার আমাদের এতখানি অবিশ্বাসের চোখে নাও দেখতে পারত। এতে সমস্যা সমাধানের সম্ভাবনা বহুগুণ বেড়ে যেত। রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে মিয়ানমারের তরফে আরও অনেক কথা আছে যা বাংলাদেশে মন দিয়ে শুনতে হবে এবং সমস্যা সমাধানের জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে হবে। রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের যে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে সেই ফাটল বন্ধ করে প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার দায়িত্ব বাংলাদেশের। ১৯৯১ সালের শুরুতে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশন রোহিঙ্গাদের ‘ইকোনমিক রিফিউজি’ বলে চিহ্নিত করেছিল। তারা তাদের অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নের ক্ষেত্রে সেই অভিমত থেকে খুব একটা সরে আসেনি। গত বছর পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা গিয়েছিল, রোহিঙ্গাদের তৃতীয় কোনো দেশে আশ্রয় দেওয়া প্রসঙ্গে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনের প্রধান অ্যান্টনিও গার্টার বলেছেন, ‘ইউএনএইচসিআর শুধু সেই ধরনের উদ্বাস্তু মানুষের দায়িত্ব নেয় যারা বিশেষ কোনো বৈরী বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে এক দেশ থেকে পালিয়ে অন্য দেশে আশ্রয় নেয়। কিন্তু রোহিঙ্গা সমস্যাটি একেবারেই তেমন কোনো বিষয় নয়।’ মিয়ানমারের তত্কালীন প্রেসিডেন্ট জেনারেল থেন সেইনের সঙ্গে আলোচনা শেষে তিনি এই মতামত ব্যক্ত করেছিলেন। অথচ গার্টার বাংলাদেশের মাটিতে পা রেখে তার সুর পাল্টাতে দেরি করেননি। বলেছিলেন, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গারা নির্যাতিত। বাংলাদেশের উচিত মানবতার খাতিরে তাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়া।

আঞ্চলিক সহযোগিতার জমানায় বসবাস করে মিয়ানমারকে আমাদের দূরে রাখার কোনো সুযোগ নেই। অং সাং সু চি রোহিঙ্গা প্রশ্নে আসিয়ানের সভা ডেকেছিলেন। সেই সভা থেকে রোহিঙ্গা সমস্যার সুনির্দিষ্ট কোনো সমাধান বেরিয়ে আসেনি। রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী মিয়ানমারের নেত্রী এই বছর শান্তিতে নোবেল বিজয়ী কলাম্বিয়ার প্রেসিডেন্টের পদাঙ্ক অনুসরণ করলে লাভবান হবেন। প্রেসিডেন্ট মেন্ডোজ ফার্কের সঙ্গে শান্তি চুক্তি করে নিজে বড় হয়েছেন এবং কলাম্বিয়াকে বিশ্ব দরবারে সম্মানের আসনে তুলে দিয়েছেন। ফার্ক দুর্ধর্ষ গেরিলা বাহিনী, যারা নিজ দেশের মাটিতে সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে পঞ্চাশ বছর ধরে একটানা যুদ্ধ করেছে। মেন্ডোজ যদি ক্ষমার আদর্শ দিয়ে তাদের জয় করতে পারেন তাহলে সু চি কেন রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে পারবেন না। সু চি রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সরাসরি শান্তি আলোচনায় বসতে পারেন। সেই আলোচনায় তৃতীয় কোনো পক্ষের উপস্থিতির প্রয়োজন নেই।

উগ্রবাদী সন্ত্রাসীদের প্রশ্নে বাংলাদেশের জিরো টলারেন্স নীতি ইতিমধ্যে বিশ্ব নেতাদের প্রশংসা পেয়েছে। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে বাংলাদেশ জিরো টলারেন্স দেখাতে পারলে মিয়ানমারের আস্থা ফিরে আসতে সময় লাগবে না। রাখাইনে শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হলে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের আর কোনো সমস্যা থাকার সুযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রী বারবার বলেছেন, বাংলাদেশ কখনো উগ্রবাদী সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেবে না। বর্তমান সময়ে সন্ত্রাস দমনে সরকারের কঠোর অবস্থান তার দাবিকে সমর্থন করে। বাংলাদেশের সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থান বাংলাদেশ-মিয়ানমারের সম্পর্ককে স্বাভাবিক এবং বন্ধুত্বপূর্ণ করতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করি।

     লেখক : কথাসাহিত্যিক।

সর্বশেষ খবর