মঙ্গলবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

তিস্তায় পানির হাহাকার

লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে

পানির অভাবে তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় হাহাকার অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এক সপ্তাহ আগে ডালিয়া পয়েন্টে যেখানে পানির প্রবাহ ছিল চার হাজার কিউসেক। বর্তমানে তা এক হাজার কিউসেকে এসে ঠেকেছে। উজানে পানি প্রত্যাহারের কারণে এক সময়ের প্রমত্তা তিস্তা তার অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। তিস্তার পাশাপাশি এ নদীর সঙ্গে যে সব নদী ও শাখা নদীর সংযোগ রয়েছে সেগুলোর অবস্থাও সঙ্গীণ হয়ে পড়েছে। উজানে পানি প্রত্যাহারের পরিণতিতে নাব্য সংকটে ১০ বছরের মধ্যে মরে গেছে রংপুর এলাকার দুটি নদী, আর চারটি নদী এখন মৃতপ্রায়। মরে যাওয়া নদী দুটি বাঙালি ও ডোরাকুড়া, আর মৃতপ্রায় থাকা চারটি হচ্ছে তিস্তা, ঘাঘট, খোকসা ঘাঘট ও বুড়ি তিস্তা। পানির অভাবে মৃতপ্রায় তিস্তা নদী এখন শীর্ণ খালে পরিণত হয়েছে। অকার্যকর হয়ে পড়েছে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ। নিয়মিত ড্রেজিং ও সংস্কার না করায় নদীগুলো শীর্ণদশা থেকে ধীরে ধীরে মরা নদীতে পরিণত হচ্ছে। পানির সংকটে সেচভিত্তিক কৃষি ব্যবস্থা বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। শুকনো নদীগুলো চলে যাচ্ছে ভূমিদস্যুদের দখলে। সেখানে গড়ে উঠছে বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। রংপুরের বুক চিরে বহমান নদীগুলোর মধ্যে নাব্য না থাকায় বাঙালি ও ডোরাকুড়া নদী শুকিয়ে মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে বেশ আগে। কয়েক বছর আগেও বহতা ছিল তিস্তা, ঘাঘট, খোকসা ঘাঘট ও বুড়ি তিস্তা। শুষ্ক মৌসুমেও এসব নদীতে পানি ছিল, যা দিয়ে জমিতে সেচ দিত তীরবর্তী কৃষক। এখন নদীগুলো শুকিয়ে গেছে। ১৯৭৭ সালে গজলডোবা এলাকায় ভারত ব্যারাজ নির্মাণের পর থেকে তিস্তা নদী পানি সংকটের সম্মুখীন হয় এবং রংপুরের নদীগুলো নাব্য সংকটের মুখে পড়ে। নদ-নদীতে পানির প্রবাহ না থাকায় তিস্তা অববাহিকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে নিচে নেমে যাচ্ছে। তিস্তা অববাহিকার নদ-নদীগুলোতে যে পানি সংকট চলছে তার অবসানে ভারতের সঙ্গে অবিলম্বে তিস্তা চুক্তি সম্পাদনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। রংপুরসহ সংলগ্ন এলাকার লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর