বুধবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানোর তৌফিক দিন আল্লাহ

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানোর তৌফিক দিন আল্লাহ

দেশজুড়ে বইছে শীতের হাওয়া। প্রচণ্ড দাবদাহের পর শীতের হাওয়া মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। মানুষ শীত তাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। গরম কাপড়ে উষ্ণতা খুঁজছে। গ্রাম থেকে শহরে সবখানে চলছে পিঠা-পুলির উত্সব। ভ্রমণপিপাসুরা বেরিয়ে পড়েছেন প্রাণের সন্ধানে। দেশ-বিদেশ ঘুরে রোমাঞ্চকর সময় কাটাচ্ছেন তারা। তবে শীত সবার জন্য সুখময়-আনন্দের বার্তা নিয়ে আসেনি। আমাদের চারপাশে এমন অসংখ্য মানুষ আছে যাদের জন্য কষ্টের আরেক নাম শীত। উন্নয়নশীল বাংলাদেশে এখনো দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যাই বেশি। তারা খাবার জোগাতে গিয়ে শীতের কাপড়ের ব্যবস্থা করতে পারে না। অনেকের ঘরে একজনের জন্য তিন থেকে চারটি লেপ-কম্বল এবং আট থেকে দশটি শীতের কাপড় থাকলেও তার প্রতিবেশী দরিদ্র দিনমজুর শীতের প্রকোপে নির্ঘুম রাত কাটায়। প্রতিবেশীর এই করুণ অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ নেয় না নবীজীর উম্মত দাবিদার আজকের মুসলমান। অথচ নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতিবেশীকে ক্ষুধার্ত রেখে নিজে পেট ভরে খায়, সে মুমিন নয়।’ (তাবরানি, বাযযার।) প্রতিবেশীকে শীতার্ত রেখে যারা কম্বল জড়িয়ে ঘুমান সেসব ব্যক্তি সম্পর্কেও একই কথা প্রযোজ্য। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যার হাতে আমার প্রাণ সেই মহান সত্তার শপথ! কোনো বান্দা নিজের জন্য যা পছন্দ করে, তার প্রতিবেশীর জন্যও তা পছন্দ না করা পর্যন্ত সে মুমিন হতে পারবে না।’ (মুসলিম।) এ হাদিসের আলোকে বলা যায়, আমরা শীতে আরামে রাতযাপন করতে পছন্দ করি এবং শীতের সকালে উষ্ণতা ভালোবাসি। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও দরিদ্র প্রতিবেশীর জন্য যদি গরম কাপড়ের ব্যবস্থা করতে না পারি তবে আমরা প্রকৃত মুমিন-মুসলমান হতে পারব না।

এই শীতে দরিদ্র-দুস্থ আল্লাহর বান্দাদের খোঁজখবর নিলে এবং ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগতভাবে তাদের শীতবস্ত্র দান করলে আল্লাহর কাছে আমাদের মর্যাদা ও প্রতিদান অনেক বেড়ে যাবে। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘বান্দা যতক্ষণ তার ভাইকে সাহায্য করবে, আল্লাহ ততক্ষণ তাকে সাহায্য করতে থাকবেন।’ (মুসলিম।) হজরত আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলছেন, ‘তোমরা পৃথিবীবাসীর প্রতি দয় কর। আকাশের মালিক আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়া করবেন। (মুসান্নিফ আবি শায়বাহ।) হজরত উসামা ইবনে জায়েদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই! আল্লাহ তার প্রতি দয়া করেন, যে তার বান্দাদের প্রতি দয়া করে।’ (বুখারি- মুসলিম।)

শীতবস্ত্র বিতরণসহ প্রতিটি কাজই করতে হবে ইখলাসের সঙ্গে। পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন জায়গায় আল্লাহতায়ালা আমাদের ইখলাসের সঙ্গে একনিষ্ঠ হয়ে তাঁর ইবাদতে মগ্ন হওয়ার আদেশ করেছেন। আল্লাহ বলেছেন, ‘তাদের এ ছাড়া কোনো নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে, নামাজ কায়েম করবে এবং জাকাত দেবে। আর জেনে রাখ এটাই সঠিক ধর্ম।’ (সূরা বাইয়েনাত : ৫।) অন্যত্র তিনি বলেছেন, আমি আপনার প্রতি এ কিতাব যথার্থরূপে নাজিল করেছি। অতএব, আপনি নিষ্ঠার সঙ্গে আল্লাহর ইবাদত করুন। কেননা নিষ্ঠাপূর্ণ ইবাদতই আল্লাহর জন্য। (সূরা জুমারের ২-৩।) হাদিসে রসুলেও আমরা ইখলাসের ব্যাপারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেখতে পাই। রসুল (সা.) বলেছেন, বান্দার আমলসূহের মধ্যে আল্লাহতায়ালা শুধু সেই আমলই গ্রহণ করেন, যা ইখলাসের সঙ্গে তার সন্তুষ্টির জন্য করা হয়ছে। (সুনানে নাসায়ি।) মহান আল্লাহর কাছে আমাদের যাবতীয় আমল গৃহীত হওয়ার ক্ষেত্রে বাহ্যিক কোনো রং-ঢং নয় বরং ইখলাসই বিবেচ্য বিষয়। এ সম্পর্কে রসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তোমাদের শরীর এবং আকৃতির দিকে লক্ষ্য করেন না। বরং তিনি তোমাদের আত্মা দেখেন।’ (বুখারি ও মুসলিম)

তাই বলছি, কোনো মুসলমান যদি আন্তরিকতার সঙ্গে একটি গরম মাফলারও শীতার্ত মানুষকে দান করে, তবে সেই দানের জন্য তিনি কাল কিয়ামতের মাঠে উপকৃত হবেন। আমাদের ঘরে কত বাড়তি কাপড় অযথা পড়ে থাকে, আমরা কি পারি না সেসব বাড়তি কাপড় গরিবদের দান করে অশেষ পুণ্য কামাতে? কারও বাড়তি কাপড়টিই হতে পারে একজন শীতার্তের জন্য হিমেল রাতের পরম আশ্রয়।  আল্লাহ আমাদের শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানোর তৌফিক দিন।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।

www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর