বৃহস্পতিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
মতামত

বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তাব

তাসনুভা তাবাসসুম লাবণ্য

আমাদের দীর্ঘদিনের একটি অপসংস্কৃতি হলো একাধিক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা না ঘটা পর্যন্ত সমাধানের চিন্তা না করা। যেমন— বঙ্গবন্ধু সেতুর উভয় পাশের সড়কে কয়েকটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটার পর ডিভাইডার নির্মাণ করা হয়েছে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদসহ কয়েকজনের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর সড়কের প্রায় ৩০টি বাঁক সোজা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে ভর্তি হতে গিয়ে প্রতিবছর শত শত শিক্ষার্থী দেশের এ মাথা থেকে ও মাথায়  ছোটাছুটি করে থাকে। আমাদের সৌভাগ্য যে, শিক্ষার্থীদের বহনকারী কোনো বাস এখন পর্যন্ত দুর্ঘটনায় পতিত হয়নি। আরও সৌভাগ্য যে, দুর্ঘটনা ঘটার আগেই মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি সমাধানের জন্য চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা শুধু টিক চিহ্ন ও গোল ঘর পূরণ করার বিষয় নয়। এটি মানসিক দৃঢ়তা ও মনোবল পরীক্ষা দেওয়ার বিষয়ও বটে। শুধু শিক্ষার্থী নন, এ পরীক্ষার মধ্য দিয়ে অভিভাবক শ্রেণিও দুশ্চিন্তায় কাটিয়ে দেন কয়েকটি মাস। এর ফলে তাদের আর্থিক ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি শারীরিক ক্ষতিও হয়ে থাকে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার ধরন বিভিন্ন রকম হওয়ার কারণে অধিকাংশ পরীক্ষার্থী (শিক্ষার্থী নন) মহাতঙ্কে ভুগে থাকে। এ সুযোগটি নেয় কোচিং সেন্টারগুলো। এই ভর্তিযুদ্ধ বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে বছরের শেষাবধি পর্যন্ত চলতে থাকে। এতকিছুর পরেও সামান্য সংখ্যক ভাগ্যবান (!) পরীক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির সুযোগ পান। এতদিন অকৃতকার্য পরীক্ষার্থীরা দ্বিতীয়বার ভর্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য নতুনভাবে প্রস্তুতি নিয়ে আবারও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করত। কিন্তু গত দুই বছর যাবত্ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার নিয়ম বন্ধ করে দেওয়ায় তাদের মনোবল আর আগের মতো থাকছে না। আবার তাদের কাছে বিশ্ববিদ্যালয় না পাঠ্য বিষয়, কোনটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ এ দ্বিধাতেও পড়ে থাকেন তারা। সেজন্য সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা এখন সময়ের দাবি। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মুহম্মদ জাফর ইকবালসহ কয়েকজন বুদ্ধিজীবী বহুদিন আগে থেকে সমন্বিত পরীক্ষার পক্ষে লেখালেখি করে আসছেন। কিন্তু সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে কোনো সাড়া-শব্দ পাওয়া যায়নি। তবে এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন বলে মনে হয়। গত ১৩ নভেম্বর এক ভিডিও কনফারেন্স চলাকালে বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুন এলাকাভিত্তিক নির্দিষ্ট কেন্দ্রে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানালে প্রধানমন্ত্রী বলেন— ‘ভবিষ্যতে অন্যান্য বিষয়ের মতো অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হবে। শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে বা ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে গিয়ে ফরম পূরণ ও ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে’ (যুগান্তর, ১৩ নভেম্বর ১৬)। মহামান্য রাষ্ট্রপতিও উপাচার্যদের এক মিটিংয়ে শিক্ষার্থীদের ভর্তিযুদ্ধ নামক কষ্ট থেকে মুক্তির উপায় খোঁজার জন্য অনুরোধ করেছেন। এক্ষেত্রে অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষার পক্ষে একটি নয়া পদ্ধতির কথা বলা যেতে পারে (যদিও কয়েকটি উন্নত দেশে কয়েক বছর আগে থেকেই অনুরূপ পদ্ধতি চালু আছে)। ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার জন্য প্রতি জেলায় সরকারি যে কোনো একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করা যেতে পারে। পরীক্ষা কেন্দ্রের প্রতিটি কক্ষ সিসি ক্যামেরার আওতাভুক্ত থাকবে। পরীক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট আসনে নির্দিষ্ট সময়ে একটি করে ল্যাপটপ নিয়ে অপেক্ষা করবে। পরীক্ষার্থীরা ল্যাপটপের মাধ্যমেই উত্তর দেবে। পরীক্ষার সময় সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সার্ভার বন্ধ হয়ে যাবে। প্রতিটি কক্ষ সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকায় কোনো শিক্ষক বা পরীক্ষার্থী অসদুপায় অবলম্বন করতে পারবেন না। প্রয়োজনে এ পদ্ধতিটি আরও উন্নীত করে চালু করা যেতে পারে।  এ পদ্ধতিতে সুফল পাওয়া গেলে প্রতি উপজেলার একটি কেন্দ্র থেকে এবং পরবর্তীতে একই সঙ্গে প্রতিটি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার থেকে চালু করা সম্ভব হবে।

লেখক : শিক্ষার্থী, স্থাপত্য বিভাগ, দ্বিতীয় বর্ষ, চুয়েট।

সর্বশেষ খবর