বৃহস্পতিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

চিকিৎসা পেশার নৈতিকতা

জনস্বার্থে আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিন

দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা এখন মুনাফাখোর ওষুধ কোম্পানি ও অসত্ চিকিৎসকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদনে উপঢৌকন নিয়ে চিকিৎসকদের ওষুধ কোম্পানির ওষুধ প্রেসক্রিপশনে লেখার যে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে তা অপ্রত্যাশিতই শুধু নয়, দুর্ভাগ্যজনকও বটে। চিকিৎসা মানবিক পেশা। যারা এ পেশায় নিয়োজিত তারা এ ব্যাপারে শপথও নিয়ে থাকেন। কিন্তু চিকিৎসকদের এক বড় অংশ বিভিন্ন উপহার আর আর্থিক সুবিধা নিয়ে যেভাবে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন তা এ পেশার সুনামের জন্য বিড়ম্বনা ডেকে আনছে। ওষুধ কোম্পানির কাছ থেকে পাওয়া সুবিধার লোভে তারা মানহীন ওষুধ সাধারণ রোগীদের দিতে দ্বিধা করছেন না। ফলে রোগীদের চিকিৎসার জন্য বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। ২০১৫ সালে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশের প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজারে নিজেদের পণ্য টিকিয়ে রাখতে এ ধরনের কাজ করছে ওষুধ কোম্পানিগুলো। এক্ষেত্রে তারা নৈতিকতার সীমাও লঙ্ঘন করছে। ওষুধ পণ্যের গুণাগুণ দিয়ে বাজারে ওষুধ কোম্পানিগুলো টিকে থাকবে, এমনটি প্রত্যাশিত হলেও সে প্রত্যাশার ধারেকাছেও যাচ্ছে না তারা। গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা জনপ্রিয় চিকিৎসকদের উপহার ও উেকাচ দেওয়ার জন্য পেছনে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করছে। শুধু চিকিৎসকদেরই নয়, তারা ওষুধের দোকানে তাদের ওষুধ যাতে রাখা হয় সে উৎসাহ জোগাতেও বিভিন্ন ধরনের উপহারসামগ্রী দেয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের ঘুষ বন্ধ করা গেলে বিশ্ববাজারের তুলনায় ওষুধের দাম অন্তত ৭০ শতাংশ কম রাখা সম্ভব হতো। বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর ওষুধ শিল্পে গর্ব করার মতো অগ্রগতি লাভ করেছে। দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় সরকার চিকিৎসা-শিক্ষার পেছনে বিপুল অর্থ ব্যয়ও করছে। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় পড়াশোনা করে যারা চিকিৎসক হয়েছেন সাধারণ মানুষের প্রতি তাদের দায়বোধ একটি প্রশ্নবিদ্ধ বিষয়। শুধু দেশি কোম্পানিই নয়, নামিদামি বিদেশি কোনো কোনো কোম্পানিও তাদের ওষুধ প্রেসক্রিপশনে লিখতে বড় অংকের উেকাচ দেয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ ধরনের দুর্নীতি বন্ধে দেশে যুৎসই আইন না থাকায় তা দিন দিন সর্বগ্রাসী আকার ধারণ করছে।  জনস্বার্থে সরকার এ ব্যাপারে নজর দেবে এমনটিই প্রত্যাশিত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর