বৃহস্পতিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

সোনা চোরাচালান

জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও হুমকি

চলতি বছর দেশে সোনা চোরাচালান মোটামুটিভাবে নিয়ন্ত্রণাধীন থাকলেও বছর শেষে হঠাত্ করেই তা বৃদ্ধি পাওয়ার আলামত অনুভূত হচ্ছে। ডিসেম্বরের দ্বিতীয়ার্ধেই ঢাকা ও সিলেট বিমানবন্দরে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের হাতে ধরা পড়েছে প্রায় ২৪ কেজি সোনা। এগুলো নিয়ে চলতি বছর ৬৯ কেজি সোনা ধরা পড়েছে। গত চার বছরে ধরা পড়া সোনার পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ৬৬ কেজি। আনুমানিক হিসাবে গড়ে ২৫টি চালানের বড় জোর একটি ধরা পড়ে। এ হিসাবে চার বছরে সাড়ে ২১ টনেরও বেশি সোনা চোরাচালানের মাধ্যমে বাংলাদেশে এসেছে। এত সোনা বাংলাদেশে ব্যবহার যে হচ্ছে না তা সহজেই অনুমেয়। মনে করা হয়, সোনা চোরাচালানের ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে বাংলাদেশ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একের পর এক অভিযান এবং কঠোর নজরদারি সত্ত্বেও চলছে সোনা চোরাচালান। নিত্যনতুন কৌশল বদল করে তারা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে ফাঁকি দিতে সক্ষম হচ্ছে। সাধারণত বিমানবন্দরে টু-ডি ডাইমেনশন পদ্ধতিতে যাত্রীদের লাগেজ ও দেহ তল্লাশি করা হয়। কিন্তু এ পদ্ধতিতে সব সময় সুফল পাওয়া যায় না। উন্নত বিশ্বে বডি এক্স-রে এবং থ্রি-ডি মেশিনের সাহায্যে যাত্রীর দেহ ও লাগেজ তল্লাশি করা হয়। মধ্যপ্রাচ্য এবং সিঙ্গাপুরসহ কিছু দেশ থেকে বাংলাদেশে সোনা আসছে নানা কৌশলে। চায়ের ফ্লাক্স, বিস্কুট বা জুসের প্যাকেট, জুতা বা প্যান্টের বেল্টের ভিতর রেখে বা নারীর চুলের খোঁপায় ও গোপনীয় জায়গায় সোনা রেখে পাচার করার কাহিনী বহু পুরনো। ল্যাপটপ ও ওয়াটার পাম্পের মধ্যে সোনা পাচারও সেকেলে পদ্ধতি বলে বিবেচিত হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবেশী ভারতে আবার সোনা পাচারও হচ্ছে নানা কৌশলে। গত বছর বাংলাদেশ থেকে গরুর পেটে অপারেশন করে সোনা রেখে সে গরু ভারতে পাচারের পর ভারতের শিলিগুড়িতে গরুর পেটে সেলাইয়ের দাগ দেখে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সন্দেহ হয়। পেটে বোমা থাকতে পারে ভেবে মেটাল ডিটেক্টরে পরীক্ষা করলে সোনার অস্তিত্ব ধরা পড়ে। সোনা চোরাচালান বন্ধে দেশের বিমানবন্দরগুলোতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। শুধু সোনা চোরাচালান বন্ধই নয়, মাদক এবং অস্ত্র চোরাচালান বন্ধেও সর্বাধুনিক তল্লাশির বিকল্প নেই। দেশের বিমানবন্দরগুলোর নিরাপত্তার স্বার্থেই এ ব্যাপারে নজর দিতে হবে। সর্বাধুনিক পদ্ধতিগুলো ব্যয়বহুল এ যুক্তিতে তা এড়িয়ে চলা চোরাচালানিদের ছাড় দেওয়ার নামান্তর।  বিমানবন্দরের নিরাপত্তার জন্যও এ ধরনের মনোভাব যে ক্ষতিকর সে বিষয়টিও উপলব্ধিতে আনতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর