শিরোনাম
শুক্রবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

নবুয়তের ভুয়া দাবিদাররা

হজরত মুহাম্মদের (সা.) নবুয়তের সাফল্য অনেকের মনে নবুয়ত লাভের আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে দিয়েছিল। তার জীবনের শেষ দিকে দেশের বিভিন্ন অংশে কতিপয় ভণ্ড পয়গাম্বরের উদ্ভব হয়। এসব ভণ্ড পয়গাম্বরের মধ্যে আসাদ, আনসি, মুসায়লামা, তুলায়হা ও সাজাহ ছিল উল্লেখযোগ্য। তারা নিজ নিজ অঞ্চলে নিজেদের নবী বলে ঘোষণা করে এবং হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নেতৃত্বকে অস্বীকার করে আরবে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করে। নবী করিম (সা.) ভণ্ড পয়গম্বরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের ইচ্ছা করেছিলেন। কিন্তু হঠাৎ তার মৃত্যু হওয়াতে তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ওফাতের খবরে ভণ্ড পয়গম্বররা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। ভণ্ড নবীদের মধ্যে সর্বপ্রথম ইয়েমেনে আসাদ আনিস বা অবগুণ্ঠিত নবীর উদ্ভব হয়। সে ছিল আনিস গোত্রের নেতা। স্বীয় গোত্রের লোকদের ওপর তার যথেষ্ট প্রভাব ছিল। নবী করিমের (সা.) জীবনের শেষের দিকে সে বিদ্রোহী হয়। আসাদ আনিস ইয়েমেনের রাজধানী সানা দখল করে এর শাসককে হত্যা এবং তার বিধবা স্ত্রীকে বিবাহ করে। ইয়েমেন প্রদেশ এবং সমগ্র দক্ষিণ আরব তার অধীনে চলে আসে। এ সংবাদ যখন নবী করিমের (সা.) গোচরীভূত করা হলো, তখন তিনি বিদ্রোহীকে দমন করার জন্য মুরাদ ইবনে জাবাল এবং আরও কয়েকজন কর্মচারীকে পাঠালেন। অবশেষে ফিরুজ দাইলমী নামে নিহত গভর্নরের জনৈক নিকটাত্মীয় আসাদের ঘরে ঢুকে তাকে হত্যা করল। হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মৃত্যুর এক বা দুই দিন আগে এ ঘটনা ঘটে; কিন্তু হজরতের মৃত্যুর সংবাদ ইয়েমেনে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে আসাদের অনুচররা ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী ঘোষণা করল।

মধ্য আরবের ইয়ামামায় শক্তিশালী বানু হানিফা গোত্রে মুসায়লামা জন্মগ্রহণ করে। জনগণের একটি প্রতিনিধি দলসহ সে মদিনায় এসে হজরত মুহাম্মদের (সা.) সঙ্গে দেখা করে। গৃহে প্রত্যাবর্তনের পর সে নবুয়ত দাবি করে বসে। নবী করিম (সা.) তাকে এ মিথ্যা দাবি থেকে বিরত করার জন্য তার কাছে একজন লোক পাঠালেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও সে ইয়ামামায় বিদ্রোহ ঘোষণা করে এবং শেষ পর্যন্ত আবু বক্করের (রা.) সময়ে সে মুসলমানদের বিরুদ্ধে এক যুদ্ধে নিহত হয়। উত্তর-আরবে বানু আসাদ গোত্রের তুলায়হা ছিল আর একজন ভণ্ড পয়গম্বর। সে নাজ্দ গোত্রের লোকদের মদিনা আক্রমণের জন্য প্ররোচিত করেছিল। কিন্তু খালিদ-বিন-ওয়ালিদ কর্তৃক পরাজিত হয়ে তুলায়হা সিরিয়ায় পলায়ন করে আত্মরক্ষা করে। তার গোত্রকে ক্ষমা প্রদর্শন করা হলে সে সিরিয়া হতে ফিরে এসে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। সাজাহ্ নাম্মী এক নাসারা নারীও নবুয়তের দাবি করেছিল। মধ্য আরবের বানু ইয়ারবু গোত্রে তার জন্ম হয়। সে কতিপয় গোত্রের সমর্থন লাভ করেছিল; কিন্তু মুসলিম বাহিনীর সম্মুখীন হওয়ার সাহস তার ছিল না।  ভণ্ড পয়গম্বর মুসায়লামাকে বিবাহ করে তার সঙ্গে তিন দিন অবস্থানের পর সে স্বস্থানে ফিরে যায়। মাবিয়ার রাজত্বকালে সে ইসলাম কবুল করে।     শাকিল জাহান

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর