রবিবার, ১ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

বাংলাদেশ-ভারত প্রতিরক্ষা সহযোগিতা

ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক

বাংলাদেশ-ভারত প্রতিরক্ষা সহযোগিতা

বাংলাদেশ-ভারতের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সূচনা হয় মুক্তিযুদ্ধের সময়। আমরা ২১ নভেম্বরকে সশস্ত্র বাহিনী দিবস হিসেবে পালন করি। কারণ ওই দিন বাংলাদেশের সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী ও নৌবাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। ৩ ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনী যৌথভাবে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মাটিতে যুদ্ধে লিপ্ত হয়।  ১৬ ডিসেম্বর আমরা বিজয় অর্জন করি। লাখ লাখ বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে হাজার হাজার ভারতীয় সৈন্য মৃত্যুবরণ করে। পৃথিবীর ইতিহাসে এটা বিরল ঘটনা। আমরা বিজয় অর্জন করি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দুই দেশের মধ্যে বিশেষ করে দুই দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর মধ্যে যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে তা বিগত কয়েক দশকে সম্প্রসারিত হবে এটিই স্বাভাবিক, কিন্তু বিভিন্ন কারণে প্রত্যাশিত সহযোগিতা সম্প্রসারিত হয়নি; তবে সাম্প্রতিককালে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর পারিকারের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। রাজনৈতিক এবং সামরিক পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা করেছেন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়েও নির্ধারিত হয়েছে এবং আগামী দিনে ধাপে ধাপে ব্যাপক রূপ নেবে বলে আশা করা যায়।

আমরা জানি, একটি দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ প্রতিরক্ষা বাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা বাহিনী দেশের শান্তিশৃঙ্খলা, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থাকলে এবং শান্তি, নিরাপত্তা নিশ্চিত হলেই দেশ উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারে। পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে বাংলাদেশের জনগণ নিপীড়নের শিকার হয়। ভাষা আন্দোলন থেকে আরম্ভ করে প্রতিটি গণআন্দোলনে এ দেশের সর্বস্তরের জনগণ অংশগ্রহণ করে। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীতে নিয়োজিত বাঙালি সামরিক অফিসার ও সদস্যরা বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার হন। গণআন্দোলন তাদের আশান্বিত করে। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর বাঙালি অফিসার ও সদস্যরা প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। তৎকালীন ইপিআর এবং পুলিশ বাহিনীর বিরাট সংখ্যক সদস্যও প্রতিরোধ যুদ্ধে লিপ্ত হয়। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকার গঠন এবং ১৭ এপ্রিল শপথ গ্রহণের পর এর কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকলেও প্রধান কার্যালয় ছিল ভারতের মাটিতে। তেমনিভাবে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত মুক্তিবাহিনীর  সেক্টরসমূহের প্রধান কার্যালয়ও ছিল ভারতে। দীর্ঘ সংগ্রামে সম্পৃক্ত যুব ও ছাত্র সমাজকে নিয়ে গঠিত বিএলএফের (মুজিব বাহিনী) চারটি আঞ্চলিক কার্যালয়ও ছিল ভারতে। ১৩ এপ্রিল থেকেই ভারতের সহযোগিতায় মুক্তিবাহিনীর প্রশিক্ষণ শুরু হয়। এক কোটি শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়া ছাড়াও ভারত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ, অস্ত্রশস্ত্র এবং প্রয়োজনীয় সাহায্য-সহযোগিতা করতে থাকে। ডিসেম্বরের চূড়ান্ত যুদ্ধে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর মিলিত রক্তস্রোতে বাংলাদেশ বিজয় অর্জন করে এবং স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রে পরিণত হয়।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, প্রয়োজনে আসা বিদেশি সৈন্য স্থায়ীভাবে অথবা দীর্ঘসময় ওই সমস্ত দেশে অবস্থান করেছে কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ইন্দিরা গান্ধীর সমঝোতার ফলে দ্রুততম সময়ে ১৯৭২ সালের মার্চ মাসে সশস্ত্র বাহিনী ভারতে প্রত্যাবর্তন করে, এটা পৃথিবীর মধ্যে বিরল ঘটনা ’৭২ থেকে ৭৫ পর্যন্ত ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অর্থনৈতিক বিভিন্ন ক্ষেত্র এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সাংস্কৃতিক বিষয়ে সহযোগিতার বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়। সশস্ত্র বাহিনীসহ আধা-সামরিক বাহিনী প্রশিক্ষণ ও সম্প্রসারণে ভারত এবং তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে সহযোগিতার পদক্ষেপ নেওয়া হয়। ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ধারাকে বাধাগ্রস্ত করা হয় এবং মুক্তিযুদ্ধের পরীক্ষিত বন্ধু ভারতের সঙ্গে বিদ্বেষ এবং বিভেদ সৃষ্টি করার প্রচেষ্টা চালাতে থাকে। এ সুযোগে চীনসহ অন্যান্য দেশ সশস্ত্র বাহিনীর সম্প্রসারণের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে থাকে। বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে আন্তর্জাতিকমানের সশস্ত্র বাহিনী প্রশিক্ষণের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়। অস্ত্রশস্ত্র উৎপাদনের প্রতিষ্ঠানও আধুনিকায়ন করা হয়েছে। পৃথিবীর উন্নত ও অগ্রসর দেশগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। শান্তিরক্ষী বাহিনীতেও বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশ বাহিনী ভূমিকা রাখছে। যে কয়টি দেশ এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। ভারত আজ বিশ্বে চতুর্থ বৃহত্তম সামরিক শক্তি। জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রযুক্তির সব ক্ষেত্রে ভারত অগ্রসর দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। মহাকাশ গবেষণা এবং উপগ্রহ উেক্ষপণেও ভারত পৃথিবীর প্রথম সারির দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে। ইতিমধ্যে ভারত মঙ্গলগ্রহে যান পাঠিয়েছে। ভারতের এ সাফল্য ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। বিগত দিনে ভারত কৌশলগত কারণে রাশিয়ার সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা বাড়িয়েছে। পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি, স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যাপক সামরিক সহযোগিতা চুক্তি করেছে। এর আগে আণবিক শক্তির সহযোগিতায়ও চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে জাপানের সঙ্গে আণবিক শক্তির সহযোগিতায় বিভিন্ন চুক্তি করা হয়েছে। পূর্ব এশিয়ার শক্তিশালী দেশ ভিয়েতনামের সঙ্গেও অনুরূপ চুক্তি হয়েছে। এ নিয়ে ভারত ইতিমধ্যে ১৪টি দেশের সঙ্গে আণবিক শক্তির মতো উন্নত প্রযুক্তিতে গবেষণা ও উন্নয়নে পারস্পরিক সহযোগিতা করছে। অতি সম্প্রতি সিসিলি ও মরিশাসের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে নেপালের সঙ্গে ভারতের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা রয়েছে। নেপালের সেনাবাহিনী অভ্যন্তরীণ শান্তি ও স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ভুটানের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রনীতি ভারত দ্বারা প্রভাবিত। ভুটান শান্তি, স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্র থেকে অনেকাংশে সাংবিধানিক রাজতন্ত্রে পরিবর্তিত হয়েছে। মালদ্বীপের নিরাপত্তার বিষয়টিও ভারতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ক্ষমতা পরিবর্তনের চেষ্টা করলে ভারত প্রতিহত করে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে। আফগানিস্তানের পুনর্গঠন, উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণে ভারত অংশগ্রহণ করছে। শ্রীলঙ্কায় তামিলদের সঙ্গে সংঘাতের এক পর্যায়ে ভারতীয় সেনাবাহিনী সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে শ্রীলঙ্কায় প্রবেশ করে। প্রায় ছয় মাস পরে ফিরে আসে। পরবর্তী ঘটনাবলি প্রমাণ করে ভারতীয় বাহিনী দীর্ঘ সময় অবস্থান করলে সমাধান আরও আগেই অর্জন করা যেত। রাজাপাকসে চীনের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়িয়ে দেন, এমনকি চীনের সহযোগিতায় হামবানটোটা গভীর সমুদ্র বন্দর ও কলম্বোর কাছে বন্দরনায়েক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তৈরি করেন। দুটি প্রতিষ্ঠানই পরবর্তীকালে অর্থনৈতিকভাবে অলাভজনক হয়েছে। চীন বিনিয়োগের সূত্র ধরে এ দুটি প্রতিষ্ঠানের শতকরা ৮০ ভাগ মালিকানা নিয়ে নিয়েছে যা শ্রীলঙ্কার সার্বভৌমত্বের পরিপন্থী। ভারত ও পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে ব্যবধান বাড়িয়ে তোলা হয়েছে। তামিল সমস্যা সমাধানের নামে একে জটিল করা হয়েছে যার ফলে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার পক্ষ থেকে শ্রীলঙ্কায় ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এসেছে। রাষ্ট্রপতি সিরিসেনা ক্ষমতা গ্রহণ করার পর তিনি তামিল সমস্যার কার্যকর সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নিয়েছেন। ভারত ও পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে ব্যবধান কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতি সিরসেনা ভারত সফর করেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদিও শ্রীলঙ্কা সফর করেছেন। সম্পর্ক জোরদারের আশ্বাস দিয়েছেন। পাকিস্তানে বেলুচিস্তানের গাদার গভীর সমুদ্রবন্দরও চীনের সহযোগিতায় নির্মিত হয়েছে। বর্তমানে ব্যবস্থাপনার দিকটা চীনের নিয়ন্ত্রণে। চায়না-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোরের নামে এবং চীনের ওয়ান বেস্ট ওয়ান রোড নীতি বাস্তবায়ন করার ফলে পাকিস্তানের বিভিন্ন মহলই আজ সন্দেহ প্রকাশ করছে, বেলুচিস্তানে সমস্যা বাড়ছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, দক্ষিণ চীন সাগরেও ব্রুনাই, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, ভিয়েতনামসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে চীন কোনো সমঝোতা করছে না, এমনকি হেগের আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের রায়ও উপেক্ষা করছে। সিল্ক রোড, ওয়ানবেল্ট-ওয়ানবোডের নামে চীন পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে এটা আজ স্পষ্ট।

বিশ্বে আজ বিভিন্ন অঞ্চলে রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে জোট রয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, অবকাঠামো উন্নয়নসহ অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে অগ্রগতির জন্য এ সমস্ত জোট ভূমিকা রাখছে। আমাদের এ অঞ্চলে রয়েছে সার্ক, বিমসটেক, আসিয়ান। এ ছাড়া রয়েছে আফ্রিকান ইউনিয়ন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, নাপটা, এপেক ও আইসিসহ বিভিন্ন জোট। সাম্প্রতিককালে ১২টি দেশকে নিয়ে টিপিপি এবং সৌদি আরবের নেতৃত্বে ২৫টি দেশ নিয়ে জোট গঠিত হয়েছে। এই জোটগুলোর মাধ্যমে অর্থনৈতিক-সামাজিক সহযোগিতার বিষয় ছাড়াও প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তা সহযোগিতার বিষয়ও প্রাধান্য পায়। এছাড়া জি-২০, জি-৭ ব্রিকস ও রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশ ও ভারত উল্লিখিত জোটগুলোর সঙ্গে হয় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিগত কয়েক বছরে সব ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি করেছে। জাতিসংঘ ঘোষিত স্বল্পতম সময়ে এমডিজি অর্জন করেছে। এমডিজি অর্জনে বেশ সফলতা দেখাচ্ছে। উন্নয়নের প্রধান মাপকাঠি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশ শতকরা ৭ অর্জন করেছে অন্যান্য সূচকেও এগিয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর স্বল্প সংখ্যক দেশেই ৬-এর ওপর প্রবৃদ্ধি হচ্ছে এর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশ ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত হবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, দ্রুত উন্নতি করছে এমন ১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। অন্যদিকে ভারত শতকরা ৭.৬ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে পৃথিবীর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে। এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি থেকেও স্বীকৃতি মিলেছে। সাম্প্রতিককালে গোল্ডস্মিথ ও স্যামুয়েল গ্রুপ থেকে বলা হয়েছে, আগামী ২০৫০ সালে ভারত বিশ্বের মধ্যে অর্থনৈতিক শক্তিতে প্রথম স্থানে উন্নত হবে। কারণ হলো কর্মক্ষম জনশক্তি, গণতন্ত্র এবং বিজ্ঞান প্রযুক্তি উৎকর্ষে ব্যাপক অগ্রগতি।

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর পারিকর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সামর্থ্য ও সক্ষমতা বাড়াতে নতুন পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। দুই নিকট প্রতিবেশীর সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্যে এ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তার সরকারের জিরো টলারেন্সের নীতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, কোনো দেশের বিরুদ্ধেই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতে দেওয়া হবে না। আলোচনায় প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাড়ানো, যৌথ মহড়া পরিচালনা এইচএডিআর (মানবিক সহায়তা ও দুর্যোগ মোকাবিলা কর্মসূচি) বাড়ানো ও সামুদ্রিক অর্থনীতিতে সহযোগিতার বিষয় রয়েছে। বাংলাদেশের কোস্টগার্ডের দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ ও যান সরবরাহের ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর মিলিত রক্তস্রোতে দেশমুক্ত করার বিষয় স্মরণ করেন। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। রাষ্ট্রপতি দুই দেশের সামরিক সহযোগিতা বাড়াতে গুরুত্বারোপ করেন, পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে কাশ্মীরের উরিতে ভারতীয় সেনাঘাঁটিতে এবং পাঠান কোটে ভারতীয় বিমান ঘাঁটিতে কাপুরুষোচিত সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় সমবেদনা জানান।

বাংলাদেশ ভারতের স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়িত হয়েছে। সমুদ্রসীমাও চিহ্নিত হয়েছে। অর্থনৈতিক, সামাজিক, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, সাংস্কৃতিক, যোগাযোগ, সংযোগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্প্রসারিত হয়েছে। ইতিহাস-ঐতিহ্য, ইতিহাসের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ে সর্বাত্মক সহযোগিতার আলোকে আশা করা যায় বাংলাদেশ ভারতের সামরিক সহযোগিতা আগামীতে ব্যাপক রূপ নেবে।  এই সহযোগিতা এ অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা স্থাপনে ভূমিকা রাখবে এবং উন্নয়ন অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করবে।

লেখক : সাবেক অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাষ্ট্রদূত।

সর্বশেষ খবর