বৃহস্পতিবার, ৫ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

ইসলাম অধীনস্থদের সঙ্গে সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছে

মাওলানা মুহম্মাদ আশরাফ আলী

ইসলামী অনুশাসনে অধীনস্থ লোকজন এবং দাসদাসীদের সঙ্গে সদাচরণের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের কারণে আখিরাতের জীবনে কঠিন সাজার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। অধীনস্থ লোকজন এবং দাসদাসীর মানবাধিকার রক্ষায় ইসলামী অনুশাসনের কোনো তুলনা নেই বললেই চলে।

হজরত আলী (রা.) বর্ণনা করেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহলোক ছেড়ে পরলোকে যাত্রার প্রাক্কালে সর্বশেষ অসুস্থাবস্থায়ও নামাজ এবং অধস্তন দাসদাসীদের সঙ্গে সদয় আচরণের জন্য বিশেষভাবে ওসিয়ত করে বলেছেন : ‘তোমরা নামাজ ও অধীনস্থ দাসদাসীদের বিষয়ে, আল্লাহকে ভয় কর।’ —আবু দাউদ, ইবনে মাজা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের মানবাধিকারের প্রতি কতটা সচেতন ছিলেন এটি তারই প্রমাণ। হাদিসে আছে, ‘অধীনস্থদের সঙ্গে সদয় আচরণ কল্যাণকর অদৃষ্টের উৎপত্তিস্থল আর তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার দুর্ভাগ্যের উৎপত্তিস্থল।’ রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : ‘অধীনস্থদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারকারী জান্নাতে যেতে পারবে না।’— মুসনাদে আহমদ, আবু দাউদ।

সহিহ মুসলিম উদ্ধৃত এক হাদিসে হজরত আবু মাসউদ (রা.) বলেন, : আমি এক ভৃত্যকে বেত্রাঘাত করছিলাম। এমন সময় পেছন দিক থেকে আওয়াজ শুনতে পেলাম, ‘মনে রেখ, ওহে আবু মাসউদ! মহান আল্লাহপাক এ দাসের ওপর তোমাকে নেতৃত্বদান করেছেন।’ আবু মাসউদ (রা.) বলেন : ‘আমি বললাম : ইয়া রসুলুল্লাহ! আমি আর কখনো চাকর-চাকরানী ও দাসদাসীকে মারব না।’ আর এক বর্ণনা মতে : ‘হজরত আবু মাসউদ (রা.) বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যক্তিত্বের প্রভাবে আমার হাত থেকে বেতটি পড়ে গেল।’ আর এক বর্ণনা মতে : আমি বললাম, ‘আল্লাহর জন্য সে মুক্ত।’ অতঃপর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : ‘এটা না করলে কেয়ামতের দিন আগুন তোমাকে জ্বালিয়ে ছাই করে ফেলত।’ মুসলিমের আর এক হাদিসে হজরত ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন : রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : ‘যে ব্যক্তি আপন দাসকে প্রহার করবে কিংবা তাকে চড় মারবে, এর কাফফারা হচ্ছে তাকে স্বাধীন করে দেওয়া।’ হাকিম ইবনে হোজাম বলেন : রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : ‘পৃথিবীতে যারা মানুষকে নির্যাতন করে, আল্লাহপাক তাদের কঠোর আজাব দেবেন।’ আর এক হাদিসে আছে, ‘যে কাউকে অন্যায়ভাবে বেত্রাঘাত করবে, কেয়ামতের দিন তার প্রতিশোধ নেওয়া হবে।— বায়্যার ও তাবারানি। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমীপে জানতে চাওয়া হলো, অধীনস্থ দাসদাসীদের কতবার মার্জনা করব? রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জওয়াব দিলেন : ‘দৈনিক সত্তর বার’।—আবু দাউদ, তিরমিযি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে অধীনস্থ লোকজন এবং গৃহপরিচারক ও গৃহপরিচারিকাদের সঙ্গে সদয় ব্যবহার করার তাওফিক দান করুন।

লেখক : ইসলামী গবেষক

সর্বশেষ খবর