শুক্রবার, ৬ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

দেশে সন্ত্রাসবাদ ছিল না, নির্বাচনী রাজনীতির সুযোগ থাকলে ভবিষ্যতেও থাকবে না

মইনুল হোসেন

দেশে সন্ত্রাসবাদ ছিল না, নির্বাচনী রাজনীতির সুযোগ থাকলে ভবিষ্যতেও থাকবে না

বঙ্গবন্ধুর মধ্যে বাঙালি জাতিকে নিয়ে একটা গর্ববোধ ছিল। তিনি বলতেন, বাঙালি বীরের জাতি। পৃথিবীর কোনো শক্তি আমাদের পদানত রাখতে পারবে না। কিন্তু আজকের লেখাটি লিখতে বসে বিদ্যমান বাস্তবতার দিকে তাকিয়ে আমাকে অত্যন্ত বেদনার সঙ্গে বলতে হচ্ছে, আমাদের পদানত রাখার জন্য আমরা নিজেরাই যথেষ্ট। বাইরের শক্তির প্রয়োজন নেই।

গাইবান্ধা থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটনের হত্যাকাণ্ড নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উদ্বেগজনক।  ঘাতকের দল তাকে লক্ষ্য করে ছয়বার গুলি করে। আমরা তার সম্পর্কে বেশি কিছু জানি না; তবে পত্রপত্রিকার খবর অনুযায়ী, তিনি এক শিশুকে গুলি করার দায়ে একটি ফৌজদারি মামলার আসামি ছিলেন। পরে তিনি আদালত থেকে জামিন পেয়ে জেল থেকে ছাড়া পান। কয়েকজন ঘাতক তার বাড়িতে ঢুকে এই হত্যাকাণ্ড ঘটায়। একই দিনে খুলনায় অপর এক ঘটনায় আওয়ামী লীগের একজন জেলা স্তরের নেতাকে লক্ষ্য করে ঘাতকরা গুলি ছুড়েছিল। কিন্তু গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় তিনি বেঁচে যান। তবে একজন পথচারী ভদ্রমহিলা সেই গুলিতে আহত হন এবং পরে হাসপাতালে মারা যান।

সন্দেহ করা হচ্ছে জামায়াতের লোকেরা এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত। আমি এ ধরনের অস্ত্রের শোধ-প্রতিশোধের রাজনীতির জন্যই উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছি, যাতে রাজনীতি অস্ত্রের খেলায় পরিণত না হয়। রাজনীতিকে সহিংস রূপ নিতে দেওয়া কোনো সভ্য সমাজের কথা হতে পারে না।

নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর অসম্ভব করে তুললে দেশে সহিংস রাজনীতি চলবেই। ভোট চুরির রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে দলীয় সরকারের অধীনে সরকার পরিবর্তনের নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সৎ হবে এটা বিশ্বাস করার কোনো কারণ থাকতে পারে না। তবুও যখন উচ্চশিক্ষিত বিজ্ঞ লোকদের সঙ্গে টেলিভিশন টকশোতে অংশগ্রহণ করি এবং শুনতে হয় আমেরিকায় নির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন হয় তখন আমি হতবাক হই, কিছুটা ক্ষুব্ধও হই এ জন্য যে, তারা নিশ্চয়ই জানেন প্রেসিডেন্সিয়াল সিস্টেমের গণতন্ত্র আর পার্লামেন্টারি সিস্টেমের গণতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।

রাজনীতিবিদরা ক্ষমতায় থাকা বা ক্ষমতায় আসার জন্য অনেকে যুক্তিহীন কথার অবতারণা করতে পারেন। কারণ তাদের জন্য রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগের বিষয়টি বেশি গুরুত্ব পাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু শিক্ষিত লোক অর্থাৎ সুশীল সমাজ তো ইন্টেলেকচুয়াল অনেস্টি বা বুদ্ধিবৃত্তির সততা রক্ষা করবেন এবং যুক্তির ভাষায় সরকার ও জাতিকে সঠিক পথের সন্ধান দেবেন।

আমি বলে আসছি পার্লামেন্টারি সিস্টেমে সংসদ বিলুপ্ত করে নির্বাচন হয়। তাই নির্বাচনকালীন কোনো নির্বাচিত সরকার থাকার প্রশ্ন ওঠে না। সংসদীয় সিস্টেমে এ নিয়মকানুন না মানলে তো সংসদীয় ব্যবস্থার শাসন থাকে না। যদি খেয়ালখুশির সরকার গঠিত হয় তা হলে আমরা খেয়ালখুশির সরকারই পাব। সে সরকারের কথাই হবে আইন। জনগণের প্রতি দায়িত্ব পালনের বিষয়টিও হবে সরকারের মেজাজ-মর্জির ওপর নির্ভরশীল। আমরা অধিকারহীন অসহায় হয়েই থাকব। স্বাধীনতার অর্থ যে অধিকার ভোগের স্বাধীনতা সে স্বাধীনতা আর থাকবে না। যে সরকার জনগণের ভোটের অধিকারকে অগ্রাহ্য করে ‘নির্বাচিত’ হতে পারে সে সরকারের কাছে জনগণের অন্যসব অধিকারের গুরুত্ব থাকে না। এ জন্যই বলা হয় স্বাধীনতা অর্জন সহজ কিন্তু স্বাধীনতা অর্থবহ করা মোটেও সহজ নয়। আমাদের দেশ স্বাধীন কিন্তু স্বাধীন দেশের জনগণ হিসেবে আমরা আমাদের ভোটাধিকার রক্ষা করতে পারছি না। নিজেরা নিজেদের সরকার গঠন করতে পারছি না।

 

 

পণ্ডিত লোকদের কাছ থেকে যুক্তিবাদী বক্তব্য না শুনলে আমি কষ্ট পাই এবং অনেক সময় ধৈর্য হারিয়ে ফেলি এবং পরে আমি দারুণভাবে অনুতপ্ত হই। আমি চাই না সরকার শিক্ষিত লোকদের দ্বারা বিভ্রান্ত হোক। সম্প্রতি এক টেলিভিশন টকশোতে আমি সে ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হই একজন অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিতে গিয়ে। তার কথা হলো, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন কাম্য নয়, তবে গতবারের নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ ছিল বলে আগামী নির্বাচন অবাধ হবে না, এটা বলা ঠিক নয়। তারপর যে অসহায়ত্বের কথা তিনি বললেন তা হলো, যখন নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই তখন নির্বাচন বর্জন করা ঠিক নয়। যে প্রশ্নের উত্তর প্রয়োজন তা হলো, অর্থহীন নির্বাচনী ব্যবস্থা মানতে হবে কেন। এ লজ্জা আমাদের জাতীয় লজ্জা। জাতি এ লজ্জা বহন করবে কেন?  ভোটবিহীন নির্বাচনকে বৈধ করার জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণের ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে আমাদের ভাবতে হবে। সরকার জনসমর্থনের সরকার না হলে সে সরকার জনগণের জন্য ভয়ের কারণ হয়ে থাকবে। জনগণের জবাবদিহির সরকার না থাকলে সরকার এবং প্রশাসনের লোকদের মধ্যে দায়িত্বহীন ক্ষমতার দম্ভ বেড়ে যায়। যেটা অনেকেই কমবেশি অনুভব করছি। কে কাকে দেশদ্রোহী বলবে বা মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে ঢুকাবে ঠিক নেই। যারই একটু রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা আছে তিনিই মনে করেন তিনিই সরকার। সরকার পুলিশ ও বিচার ব্যবস্থার সাহায্যে ক্ষমতায় থাকার রাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছে। শত শত রাজনৈতিক মামলা কোর্টসমূহে জমা হয়ে আছে। এক ধরনের বিচারহীন ব্যবস্থার মধ্যে সাধারণ মানুষ অনেক অন্যায়-অবিচার সহ্য করে যাচ্ছে। জনমনে ক্ষোভ বৃদ্ধি পাচ্ছে যা দুশ্চিন্তার ব্যাপার না হয়ে পারে না।

জনগণের ভোটাধিকার রক্ষা করতে না পারলে প্রত্যেকের অবস্থা অসহায়ই থাকবে। অধিকারের কথা বলা বৃথা। জনগণ সরকার ও প্রশাসনের কাছে অনুগ্রহের পাত্র হয়ে যাবে। আমাদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যারা আছেন তাদের সবার মধ্যে না হলেও অনেকের মধ্যেই অতি বেশি মাত্রায় ক্ষমতার দাপট পরিলক্ষিত হয়। তারা জানে প্রতিবাদের জন্য জনগণের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।

ভোটাধিকার হলো নাগরিকত্বের অধিকার। আমরা নাগরিকত্বের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠার সব দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারি না। একনায়করা নিজেদের মিথ্যা অহমিকা ও ব্যর্থতার জন্য নিজেদের পতন নিশ্চিত করে। ভয়াবহ নৈরাজ্যের মধ্যেও সুশীল সমাজের দায়িত্ব সেরূপ পরিণতি থেকে দেশ ও জনগণকে রক্ষা করা। 

রাজনৈতিক নেতৃত্বের শূন্যতার কারণেও আমি মনে করি সুশীল সমাজের দলনিরপেক্ষ যুক্তিবাদী ভূমিকা থাকার প্রয়োজন অনেক বেশি। দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পালনে তারা কাউকে বিভ্রান্ত হতে দিতে পারেন না। আমাদের অধিকার রক্ষার দায়িত্ববোধ আসলে আমাদের স্বাধীনতা রক্ষারই দায়িত্ববোধ।

দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সংসদীয় গণতন্ত্র নয়। এ কথা যত স্পষ্ট করে বলা দরকার ততটা স্পষ্ট করে অনেকে বলছেন না।

সব ধরনের পুলিশি সুরক্ষা সত্ত্বেও একজন এমপি যখন অনায়াসে খুন হয়ে যান, তখন দেশের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা পরিস্থিতি কতটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তা বুঝতে কারও কষ্ট হওয়ার কথা নয়। পুলিশি তত্পরতা বাড়িয়ে জনজীবন নিরাপদ করা যাবে না, খুন-খারাবিও বন্ধ হবে না। যে জন্য শত উসকানির মুখেও আমাদের মহান নেতারা রাজনীতিতে অস্ত্রের প্রস্তুতি নেননি। নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির ওপর গুরুত্ব দিয়ে গেছেন। 

সন্ত্রাসবাদকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে এবং একে শেষও করতে হবে রাজনৈতিকভাবে। বাংলাদেশে আমরা যে সন্ত্রাসবাদ প্রত্যক্ষ করছি সেটা প্রকৃত সন্ত্রাসবাদ নয়, সহিংস রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সন্ত্রাসী কায়দায় চালানো হচ্ছে। এ ধরনের সহিংস কার্যক্রম সহজেই রাজনৈতিকভাবে সামাল দেওয়া যায়। সরকারের হিংসাত্মক রাজনীতির অসহনশীলতাই তরুণদের অস্ত্রনির্ভর প্রতিহিংসার কথা ভাবতে প্রলুব্ধ করছে। সন্ত্রাস দমনের পথ হিসেবে তরুণদের ওপরই নির্যাতন চালানো হচ্ছে বেশি। যে কোনো তরুণকে সন্দেহ করলেই হলো যে সে সন্ত্রাসী।

আমার কথা হলো, সিস্টেমের রাজনীতি সিস্টেমের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। সংসদীয় গণতন্ত্রে সংসদীয় গণতন্ত্রের নির্বাচন হতে হবে। তা না হলে সিস্টেম ভেঙে যাবে। মোটকথা হচ্ছে, সংসদ রেখে, মন্ত্রিত্ব রেখে নির্বাচন করার অর্থ সংসদীয় গণতন্ত্র অচল করা। আইনের শাসন ব্যাহত করা। শাসনতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হলে, ভোটের রাজনীতি না থাকলে অন্য কী করণীয় আছে সে প্রশ্নের সহজ উত্তর আমার মতো লোকদের জানা নেই। কারণ, আমরা নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির পথই জানি। এটুকু বুঝি যে, জঙ্গি কায়দায় ক্ষমতায় থাকার অর্থ জঙ্গি শক্তিকেই উসকানি দেওয়া। দুশ্চিন্তা হলো, জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করা হবে কেন?

নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে যে তত্পরতা লক্ষ করা যাচ্ছে তা হাস্যকর। বর্তমান নির্বাচনী ব্যবস্থায় কোনো নির্বাচন কমিশনই অবাধ নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিতে পারবে না। কারণ, দলীয় সরকারই হবে নির্বাচন কমিশন। সরকারকে নিরপেক্ষ রাখতে না পারলে কোনো নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে না। এ সত্য এত পরিষ্কার যে, একজন অন্ধ লোকও দেখতে পারবে। ক্ষমতা ছাড়ার জন্য ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করা হচ্ছে এ কথা কেউ বিশ্বাস করবে না। আসলে নির্বাচনী রাজনীতির অবসান ঘটেছে। 

সবাই এ কথা স্বীকার করেন যে, বাংলাদেশ সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ছিল না, কিন্তু রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা এবং সহিংসতার প্রকাশ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। পুলিশি কর্মকাণ্ডের ফলে জঙ্গি তত্পরতার বিরুদ্ধে সাময়িক সাফল্য দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের রাজনৈতিক কারণসমূহ অমীমাংসিত থেকে যাচ্ছে। জঙ্গি তত্পরতার রাজনৈতিক কারণসমূহ দূর করতে হবে রাজনৈতিকভাবে। পুলিশ, র‌্যাব ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রচেষ্টা তখনই সফল হবে যখন সহনশীল গণতান্ত্রিক মূল্যবোধভিত্তিক জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে। শান্তিপূর্ণভাবে সরকার পরিবর্তনের সুযোগ বন্ধ করে অশান্তিপূর্ণ জঙ্গি তত্পরতার পক্ষে মদদ জোগানো হচ্ছে। তাছাড়া সরকার যেভাবে সাফল্যের দাবি করছে তাতে অবাধ নির্বাচন হলে তাদের ক্ষমতা হারানোর ভয় থাকার কোনো কারণ দেখি না।

স্বাধীনতা লাভের অব্যবহিত পর যে শাসনতন্ত্র ১৯৭২ সালে প্রণীত হয় তার মধ্যেই জাতীয় স্বপ্ন ও আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হয়। আমাদের সরকার হবে সংসদীয় পদ্ধতির। জনগণ দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সর্বস্তরে সরকার চালাবে। সেখানে আইনের শাসনের আওতায় প্রতিটি নাগরিকের অধিকার সুরক্ষার জন্য থাকবে স্বাধীন ও শক্তিশালী বিচার বিভাগ। এটাই তো ছিল ৬ দফা এবং ১১ দফা আন্দোলনের কথা। এর জন্যই জাতি স্বাধীনতা যুদ্ধে অপরিমেয় মূল্য দিয়েছে। অথচ এখন দেখছি রাজনীতি হচ্ছে ভিআইপিদের, সরকার হচ্ছে ভিআইপিদের এবং উন্নয়নও হচ্ছে ভিআইপিদের। সরকার হবে বিশেষ গোষ্ঠীর, নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণ করবে বিশেষ গোষ্ঠী এবং উন্নয়ন হবে গোষ্ঠী বিশেষের।

সরকার ঠিকমতো চলছে না। অনেক কিছুই মিথ্যা। কিছু দিন আগে সংসদে দুর্নীতির ওপর আলোচনা করতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস মুহিতের স্বীকার করতে অসুবিধা হলো না যে দেশে এখন পুকুর চুরি নয়, সমুদ্র চুরির দুর্নীতি চলছে। তবে তিনি এ ধরনের লুটপাটের ব্যাপারে চিন্তিত নন। সম্পদ বাড়ছে লুটপাট বাড়ছে। দেশ তো ঠিকমতো চলছে। জনগণের কাছে দায়বদ্ধ কোনো সরকারের মন্ত্রী দেশে সমুদ্র চুরির মতো দুর্নীতি এত সহজভাবে গ্রহণ করতে পারতেন না। দেশে দুর্নীতি পুকুর চুরির পর্যায় থেকে সমুদ্র চুরির পর্যায়ে এসেছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের সমুদ্র চোরদের দুর্নীতির কাছাকাছি যাওয়ারও সুযোগ নেই। ছোটখাটো দুর্নীতির অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে আনা হয় তাদের রক্ষা নেই। তাদের আগে জেল খাটতে হবে, পরে বিচার হবে। দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের সব ক্ষমতা তাদের ওপর প্রয়োগ হবে।

দেশে জবাবদিহিতার সরকার না থাকলে সরকারের জন্য কম সমস্যা সৃষ্টি হয় না। শিক্ষার ব্যাপারে শিক্ষাবিদরাই বলেন ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে কিন্তু আমাদের শিক্ষায় জ্ঞানচর্চা নেই। আইনশৃঙ্খলার ক্ষেত্রে না আছে আইন, না আছে শৃঙ্খলা। পুলিশ আছে তবে তারা ভিআইপিদের রক্ষায় ব্যস্ত। আছে সব ক্ষেত্রে ক্ষমতার দাম্ভিকতা। বিচারে দোষী না হওয়া পর্যন্ত বিচারপ্রার্থী একজন নির্দোষ ব্যক্তি এ কথা কেউ শুনতে চান না। আগে জেল, পরে বিচার।   

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সুশাসন রক্ষা করেন সুশীল সমাজের সুশিক্ষিত লোকেরা। একশ্রেণির শিক্ষিত লোকের চিন্তাভাবনা হলো রাজনীতিবিদদের জন্য রাজনীতি, তারাই ভালো বোঝেন কোনটি দেশের জন্য মঙ্গল, আর কোনটি নয়। এ ধরনের চিন্তাভাবনা ও শাসন ব্যবস্থা তো রাজা-বাদশাদের শাসন ব্যবস্থা। আমাদের সুশীল সমাজকে প্রমাণ করতে হবে আমরা স্বাধীনতা অর্থবহ করার সাহস ও যোগ্যতা রাখি। আমাদের দেশপ্রেম আছে, আমাদের সততা আছে। নির্বাচন কমিশন নয়, সরকারকে অবাধ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।  নির্বাচনকালীন সরকারের নিরপেক্ষতার নিশ্চয়তা দিতে হবে। পুলিশি রাজনীতি নয়, নির্বাচনী রাজনীতির নিশ্চয়তা থাকতে হবে।    

     লেখক : তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা।

সর্বশেষ খবর