শনিবার, ৭ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
বায়তুল মোকাররমের খুতবা

সন্ত্রাস ও সহিংসতা নিরসনে রসুল (সা.) এর আদর্শ

হাফেজ মাওলানা মুফতি মহিবউল্যা হিল বাকী আন্নদবী
পেশ ইমাম, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ

খ্রিস্টীয় পঞ্চম ও ষষ্ঠ শতকের আরব উপদ্বীপ। অসহিষ্ণুতা, অন্যায়, অবিচার, হত্যা, লুণ্ঠন, সন্ত্রাস, দস্যুতা ও সহিংসতা আরব সমাজকে এমনভাবে গ্রাস করেছিল যে, মানুষের মুক্তির প্রত্যাশা বিলীন হয়ে গিয়েছিল। তাই জাহেলিয়ার তমসা দূর করতে আরবে মুক্তির বার্তা নিয়ে আগমন করলেন বিশ্বজগতের আশিস হজরত মুহাম্মদ (সা.)। মাত্র ২৩ বছরের ব্যবধানে তিনি আরব থেকে দূর করলেন সন্ত্রাস ও সহিংসতা, প্রতিষ্ঠিত করলেন শান্তিময় কল্যাণকর সমাজ। সন্ত্রাস ও সহিংসতা বর্তমান বিশ্বের রানিং ইস্যু। বিশ্বের নৈতিকতার অধঃপতন, ত্রাস-সন্ত্রাসের রাজত্ব ও সহিংসতা থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় মহানবী (সা.)-এর  আদর্শ।

সন্ত্রাসের পরিচয় : সন্ত্রাস ‘ত্রাস’ শব্দ থেকে উৎকলিত। এর অর্থ ভয়, শঙ্কা, ভীতিকর। আর সন্ত্রাস হলো আতঙ্কগ্রস্ত করা, অতিশয় ত্রাস, সন্ত্রাসিত ত্রাসযুক্ত। পরিভাষায় বলা হয়, যে কোনো স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য অন্যায়, হত্যা, লুণ্ঠন প্রভৃতি ত্রাসজনক পথ বেছে নেওয়া। রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভের উদ্দেশ্যে সংঘবদ্ধভাবে বশ মানানোর নীতি অবলম্বনকারীকে সন্ত্রাস বলে। পরিভাষায় ‘ইর হাবিয়্যুন’ বলা হয় তাদের গুণবাচক নাম যারা রাজনৈতিক লক্ষ্যসমূহ পূরণে শক্তি প্রয়োগ ও কঠোরতার পথ অবলম্বন করে।

সহিংসতার পরিচয় : সহিংসতা শব্দটি ‘সহিংসতা’ শব্দ থেকে উৎকলিত। এর অর্থ হিংসাত্মক, সন্ত্রাসবাদী সহিংস আন্দোলন। পরিভাষায় বলা হয়, অন্যায়ভাবে হিংসাত্মক কারণে মানুষের সঙ্গে শত্রুতার সৃষ্টি।

সন্ত্রাস ও সহিংসতা নিরসনে রসুল (সা.) এর আদর্শ : অনুসন্ধানী দৃষ্টি নিক্ষেপ করেও কেউ ইসলামী তৎপরতার মধ্যে সন্ত্রাস ও সহিংসতার সামান্য গন্ধ খুঁজে পাবেন না। কারণ এই আদর্শ আল্লাহ নবী-রসুলদের মাধ্যমে মানব জাতিকে দান করেছেন। রসুল (সা.) পৃথিবীতে সন্ত্রাস, হত্যা, লুণ্ঠন প্রভৃতি ঘৃণিত কাজ দূরীভূত করার লক্ষ্যে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ এবং বিভিন্ন পথ ও পন্থা অবলম্বন করেছেন। যেমন হাদিসের হুঁশিয়ারি বাণী।

রসুল (সা.) ন্যায়নিষ্ঠা, সদাচরণ ও সহানুভূতির আদর্শ দিয়েছেন, নিষেধ করেছেন অন্যায় ও সীমালঙ্ঘনের :

সকল প্রকার বোমা হামলা চরম অন্যায়। এতে কোনো ন্যায়নিষ্ঠা ও সদাচরণ নেই বরং নিছক বিদ্রোহমূলক কাজ। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘একমাত্র নির্দয় ব্যক্তির ওপর থেকেই দয়া ছিনিয়ে নেওয়া হয়।’

অন্যায়ভাবে নির্দোষ মানুষকে হত্যা  হারাম : বর্তমানে যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত তারা যখন কোনো জনপদে হত্যাযজ্ঞ চালায় তারা নির্বিচারে হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। এ সম্পর্কে হুঁশিয়ারি বাণী উচ্চারণ করে রসুল (সা.) বলেছেন, ‘ব্যভিচার, হত্যা ও ইসলাম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার অপরাধ ছাড়া আল্লাহ-রসুলে বিশ্বাসী কোনো মানুষকে হত্যা করা বৈধ নয়।’

হিলফুল ফুজুল প্রতিষ্ঠা : রসুল (সা.)-এর যুগে সন্ত্রাস ও সহিংসতার ধারক-বাহক ছিল যুবসমাজ। তাই রসুল (সা.) মাত্র ১৭ বছর বয়সে তৎকালীন আরবে আর্তপীড়িত, অসহায় ও দুর্বলদের সাহায্যে এবং ধনী ও জালিমদের থেকে তাদের রক্ষায় কয়েকজন শান্তিপ্রিয় যুবক নিয়ে একটি কমিটি গঠন করলেন। ইতিহাসে এটিই শান্তিসংঘ নামে পরিচিত। এ সংস্থার শর্তসমূহ নিম্নরূপ : ১. আমরা অভাবগ্রস্তদের সাহায্য করব। ২. আমরা দেশ থেকে অশান্তি দূর করব। ৩. আমরা পথিকবৃন্দের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করব। ৪. আমরা নির্যাতিতদের সাহায্য করব। ৫. আমরা জালিম ব্যক্তিকে মক্কায় আশ্রয় দেব না।

সর্বশেষ খবর