শিরোনাম
রবিবার, ৮ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

জাতীয় পার্টি ও গণমানুষের প্রত্যাশা

গোলাম মোহাম্মদ কাদের

জাতীয় পার্টি ও গণমানুষের প্রত্যাশা

পহেলা জানুয়ারি, জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৮৬ সালের এ দিনে এই রাজনৈতিক দলটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু।  প্রতি বছর এ দিনটিকে জাতীয় পার্টির সব নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা নানাভাবে উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে পালন করে। এ বছর এ দিনটি উপলক্ষে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করে। উদ্দেশ্য দেশের সব অঞ্চল থেকে নেতা-কর্মী, ঘনিষ্ঠ সমর্থকদের এক স্থানে জড়ো করা। উৎসবমুখর পরিবেশে সব স্তরের নেতা-কর্মী শুভানুধায়ীদের মিলনমেলা, কুশল বিনিময়, মতামত প্রকাশের ব্যবস্থা করা। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের দিকনির্দেশনা ও রাজনৈতিক মূল্যায়নের সুযোগ সৃষ্টি করা।

জাতীয় পার্টি গণমানুষের দল। এ দলের সমর্থক ও নেতা-কর্মীদের অধিকাংশ কৃষক, শ্রমিক, শ্রমজীবী নিম্নবৃত্ত শ্রেণিভুক্ত, সাধারণ মানুষ। কারণ হয়তো এটাই যে, জাতীয় পার্টি যখন রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে ছিল বা তত্পূর্ব থেকে অর্থাৎ আলহাজ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যখন থেকে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন তখন থেকেই রাষ্ট্রীয় সব উদ্যোগের মূলে ছিল দরিদ্র, অসহায় সাধারণ মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন।

সর্বক্ষেত্রে অবকাঠামোগত উন্নয়নের জোয়ার সৃষ্টি হয়েছিল। প্রশাসন, বিচার বিভাগ, চিকিৎসা, ওষুধ, ভূমি ইত্যাদি প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যাপক সংস্কারের সূচনা করা হয়েছিল। শিল্পায়ন ও তার স্বার্থে সংশ্লিষ্ট সব জটিলতা দূরীভূত করা হয়েছিল। গার্মেন্ট শিল্প বর্তমান অবস্থায় আসার মূল পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছিল জাতীয় পার্টির শাসন আমলে। বিদ্যুতায়ন প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার বৃদ্ধি। মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। আমাদের ঐতিহ্যবাহী সংগ্রামের স্মৃতি বিজড়িত বিভিন্ন স্থাপনা, ঐতিহাসিক স্থাপনা ও স্থানসমূহ যেমন শহীদ মিনার, স্মৃতিসৌধ, শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান পূর্ণাঙ্গকরণ ও নির্মাণ হয়েছিল সে আমলে।

জাতিসংঘ শান্তি মিশনে প্রতিরক্ষা বাহিনী ও পুলিশ সদস্যদের কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি, হতদরিদ্রদের পুনর্বাসনের জন্য VGD/VGF Program-এর আওতায় বিনাপয়সায় খাদ্য বিতরণ, গুচ্ছগ্রাম সৃষ্টির মাধ্যমে আশ্রয়ণের ব্যবস্থা, জাল যার জলা তার এর মাধ্যমে জেলেদের উন্নয়ন, কৃষকদের মধ্যে সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা, পথকলি ট্রাস্ট গঠন করে বস্তিবাসী হতদরিদ্র পরিবারের সন্তানদের লেখাপড়ার ব্যবস্থা করা, সার ও বীজ সহজলভ্য করা ইত্যাদি ইত্যাদি অসংখ্য কল্যাণমুখী কার্যক্রম জাতীয় পার্টির নেতা এরশাদ করেছিলেন।

সাধারণ মানুষ সেগুলো মনে রেখেছে। তারা সে জন্য জাতীয় পার্টির পুনরুত্থান চায়। ওই ধরনের সরকার আবার দেশ পরিচালনা করুক তারা তা চায়।

তবে দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, বুদ্ধিজীবী সমাজের অনেককেই জাতীয় পার্টি সম্পর্কে কটু কথা বলতে দেখা যায়। নানাভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়। জাতীয় পার্টির নেতা এরশাদকে তারা স্বৈরাচার বলেন। তার আমলকে স্বৈরশাসন বলতে পছন্দ করেন। তাদের কাছে প্রশ্ন, আপনারা জ্ঞানী, শিক্ষিত, বিবেকবান, বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে একজন শাসকের নাম বলুন এরশাদের আগের বা পরের মধ্য থেকে যিনি এরশাদের চেয়ে কম স্বৈরশাসক?

অনেকে এরশাদের শাসন আমলকে অবৈধ বলেন। কিন্তু ১৯৮৬ সালের পর থেকে অর্থাৎ জাতীয় পার্টি গঠনের পরবর্তী সময়ে এরশাদ সরকারের শাসনকে হাইকোর্টের রায়ের মাধ্যমে বৈধ সরকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

তারা এরশাদের ক্ষমতা গ্রহণকে নিন্দা করেন। কিন্তু ৯০-পরবর্তী যে দলসমূহ ক্ষমতা লাভ করেছে, তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার ও ধরে রাখার ইতিহাস কি সবসময় গৌরবের? বৈধ বা অবৈধ আমি এখনই বলব না, একদিন ইতিহাসই সে বিষয়গুলো নিষ্পত্তি করবে।

জাতীয় পার্টির আমলের দুর্নীতির কথা অনেক বুদ্ধিজীবীর মুখে শুনি। এটা কি তারা অস্বীকার করবেন, ৯০-পরবর্তী সরকারগুলোর দুর্নীতির পরিমাপ করলে বা সমাজে দুর্নীতির বিস্তার হিসাব করলে, মাত্রা বিবেচনায় জাতীয় পার্টির আমলে দুর্নীতি ছিল না বললে অত্যুক্তি হয় না।

জাতীয় পার্টিকে যেহেতু সাধারণ মানুষ গরিব-দুঃখী জনগোষ্ঠী পছন্দ করে এবং এর সঙ্গে একাত্মতাবোধ করে সে জন্য এ পার্টি সত্যিকার অর্থে গণমানুষের দল। এ দলটিকে ওইসব মানুষের রাজনৈতিক প্লাটফর্ম হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। খেটে খাওয়া মানুষের প্রত্যাশাকে ধারণ করতে হবে, লালন করতে হবে তাদের আকাঙ্ক্ষা। সেগুলো পূরণে, কর্মসূচি দিতে হবে বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যেতে হবে।

জাতীয় পার্টির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে, অতীতের ন্যায় (যেভাবে অতীতে জাতীয় পার্টি কাজ করেছে সেভাবে) সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সমস্যা চিহ্নিত করে, সমাধানের দিক নির্দেশনা ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার ওপর।  এ কাজে জাতীয় পার্টি যত বেশি সাফল্য অর্জন করতে পারবে ততই উজ্জ্বল হবে পার্টির ভাবমূর্তি, বৃহত্তর হবে জাতীয় পার্টির সাফল্য।

লেখক :  জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী।

সর্বশেষ খবর