মঙ্গলবার, ১০ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

প্রয়াত বিচারপতি বজলুর রহমান ছানা

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

প্রয়াত বিচারপতি বজলুর রহমান ছানা

একাত্তরের স্বাধীনতা বাঙালি জাতির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ অর্জন। ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের পরও স্বাধীনতার স্বাদ আমরা পুরোপুরি গ্রহণ করতে পারিনি। কারণ আমাদের জনক, স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু তখনো পাকিস্তানের কারাগারে। তাই ’৭২-এর ১০ জানুয়ারি ছিল বাঙালি জাতির সবচেয়ে বড় আনন্দের দিন। অমন আনন্দে আর কখনো আমরা ভাসতে পারিনি। ৮ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে জাতির জনক লন্ডনে যান। সেখান থেকে ব্রিটিশ রাজকীয় বিমানে দিল্লি হয়ে আজকের এই দিনে তিনি তার স্বাধীন দেশের মাটি স্পর্শ করেন। সে এক অভাবনীয় আনন্দ উত্তেজনার দিন। এই ভূখণ্ড আর কখনো কোনো দিন অমন আনন্দে অবগাহন করবে না। আজ সেই বহু কাঙ্ক্ষিত ১০ জানুয়ারি। বঙ্গবন্ধু নেই, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা নেই। বাংলাদেশ আছে, বাংলাদেশের মানুষ আছে কিন্তু সেই মানবতা, সেই ভালোবাসা নেই। আবার কবে হবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের দেশ, সেই আশা ও স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছি। যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ। ১০ জানুয়ারি স্বাদ পূরণের আশা আজ বড় বেশি আকুল করে।

প্রায় বছর পার করে আমাদের বুকের ধন কলিজার টুকরো কুঁড়িমণি আগামীকাল কয়েক দিনের জন্য ঘরে ফিরছে। তাই আমাদের পুরো পরিবার আনন্দে ময়ূরের মতো পেখম তুলে আছে। সন্তান বাবা-মার জন্য কত বড় সম্পদ বা নিয়ামত, দূরে না গেলে বোঝা যায় না। ও যেদিন লন্ডনে পাড়ি জমায়, সেদিন বুকটা বড় বেশি খালি হয়ে গিয়েছিল। আল্লাহর দয়ায় সেই শূন্য বুক আর কয়েক ঘণ্টা পরই বিপুল আনন্দ-আহ্লাদে ভরে উঠবে।

মানুষের জীবন কত ক্ষণস্থায়ী। এই আছে এই নেই। একবার শ্বাস না নিলেই সব শেষ। তবু মানুষের অহংকারের শেষ নেই। সবকিছু জয় করে আসমানে উঠতে চায়। স্রষ্টার সৃষ্টিকেও কখনোসখনো অস্বীকার করে শাদ্দাদের মতো বেহেস্ত বানায়, ফিরাউনের মতো নির্যাতক, অহংকারী হয়। মানুষ যেমন অত্যাচারী সিমার, তেমন দেশপ্রেম, মায়া-মমতা, মানবতা, ভালোবাসার প্রতীক প্রতিমা।

মনে হয় এই সেদিন দীর্ঘ নির্বাসন শেষে ’৯০-এর ১৬ ডিসেম্বর দেশে ফিরি। তারপর জেলে। প্রায় এক বছর সেখান কাটিয়ে মুক্তি পেয়ে পিতার কবর টুঙ্গিপাড়া। সেখান থেকে যশোর, সাতক্ষীরা, পাবনা, নানা জায়গায় ঘুরে রাজশাহী গিয়েছিলাম। বজলুর রহমান ছানাকে সেখানেই প্রথম দেখি। ল পাস করেছেন অথবা পড়ছেন। ছাত্রলীগের একজন নিবেদিত কর্মী। অসম্ভব ভালো, মেধাবী ছাত্র। কতবার মোহাম্মদপুরের বাড়ি এসেছেন, খেয়েছেন তার কোনো হিসাব নেই। যত্ন এবং মর্যাদা পাওয়ার একটা স্বাভাবিক ক্ষমতা ছিল তার। বহুকাল থেকে শুনি, ভালো মানুষ বেশি দিন বাঁচে না। সেজন্য নিজেকে মাঝেমধ্যে বেশ অসহায় মনে হয়। বজলুর রহমান ছানা দেখতে দেখতে চলে গেলেন। একজন ছাত্রকর্মী হিসেবে পরিচয়ের পর বিচার বিভাগে যোগদান করেছিলেন। হাই কোর্ট, সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার পর যোগাযোগ অনেকটা ক্ষীণ হয়ে এসেছিল। গত বছর মাননীয় প্রধান বিচারপতির এজলাসে গিয়ে দেখি বজলুর রহমান ছানা। প্রথম প্রথম চিনতে পারিনি। প্রিয় সহকারী ফরিদ চিনিয়ে দিয়েছিল, পশ্চিমের জন ছানা ভাই। ছানা কেমন করেছিলেন জানি না কিন্তু আমি তখনই কিছুটা বিব্রতবোধ করছিলাম।

কালিহাতী উপনির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার অন্যায়ভাবে মনোনয়নপত্র বাতিল করলে তার প্রতিকারে নির্বাচন কমিশনে আপিল করেছিলাম। নির্বাচনী আইনে কোর্টের মতো আপিল শোনা তাদের একটি গতানুগতিক কাজ। পৃথিবীর সব দেশে সব কোর্টে শুনানি শেষে তখনই এজলাসে বসে মূল রায় ঘোষণা করা হয়। কিন্তু নির্বাচন কমিশন তা করেনি। ঘরে ফিরে আলাপ-আলোচনা করে, হয়তো বাইরের কারও কথা শুনে রিটার্নিং অফিসারের সিদ্ধান্ত বহাল রাখে। আমরা যাই হাই কোর্টে। হাই কোর্ট মনোনয়ন বৈধ করলে রিটার্নিং অফিসার মার্কা দেন। ব্রিটিশ ভারতে নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হওয়া থেকে এযাবৎ শুধু কালিহাতী উপনির্বাচন ছাড়া প্রতীক বরাদ্দের পর নির্বাচন নিয়ে কেউ কোনো আইন-আদালত বা ঝুট-ঝামেলা করেনি বা করতে পারেনি। হাই কোর্ট মনোনয়ন বৈধ বলার সঙ্গে সঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেছিলেন। তিনি যখন বার বার বলছিলেন সরকার আপিল করবে, তখন জজ মহোদয়রা হাসতে হাসতে বলেছিলেন, সরকার এখানে কোনো পক্ষ নয়। সরকারের আপিল করার কোনো সুযোগ নেই। ছয়-সাত দিন পর নির্বাচন কমিশন আপিল করে। নির্বাচন কমিশনের নামে আপিল হলেও এ পর্যন্ত যা করার সবই অ্যাটর্নি জেনারেল করেছেন। আদতে আমরা নির্বাচন কমিশনে যাইনি, একটি আদালত বিবেচনা করে সেখানে গিয়েছিলাম। আমি একজন আইনবিদের ছেলে। আমার বাবা ৫৫-৬০ বছর জজ কোর্টে আইন ব্যবসা করেছেন। কতবার হাই কোর্টে গেছেন মামলা পরিচালনা করতে। বর্তমানে যারা আইন ব্যবসা করেন তারা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে যা শিখেছেন তার কিছু কিছু বাবার কোলে বসে শিখেছি। ছেলেবেলায় লেখাপড়া করতাম না বলে বড় হয়ে এখন যেখানেই যাই সেখানেই কিছু না কিছু শিখতে চাই। জনাব আবদুল মতিন খসরুর চেম্বারে তার পিয়নের কাছ থেকেও কিছু না কিছু শিখেছি। ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে আমার বেশ যাতায়াত আছে। প্রিয় জাহাঙ্গীর, সহকারী বাদশা, জাকিরের কাছেও অনেক কিছু শিখেছি, এখনো শেখার চেষ্টা করি। কিন্তু আমার কোনো জ্ঞানেই ধরে না নির্বাচন কমিশন কী করে বাদী হয়? সমস্যা নির্বাচন কমিশন নিয়ে নয়, সমস্যা ছিল নির্বাচন কমিশনের আপিল ট্রাইব্যুনাল হিসেবে সিদ্ধান্ত নিয়ে। জজ কোর্টের কোনো মামলার রায় কারও পছন্দ না হলে তারা হাই কোর্টে গেলে, হাই কোর্টের কোনো রায় নিয়ে কেউ সুপ্রিম কোর্টে গেলে জজ কোর্ট বা হাই কোর্ট কখনো বাদী হয়? হয় না। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে তাই হয়েছে।

তিন-চার বার নির্বাচনী মামলা নিয়ে মাননীয় প্রধান বিচারপতির কোর্টে গেছি। প্রতিবার বিচারপতি বজলুর রহমান ছানাকে দেখে বিব্রত হয়েছি। মনে মনে ভেবেছি, আল্লাহ কী না পারেন। যে ছানা শ্রদ্ধা-ভক্তি-ভালোবাসা নিয়ে আমার নামে শত সহস্রবার স্লোগান দিয়েছেন, মিছিল করেছেন তিনি সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, আমার মামলার বিচার করছেন। খুবই ভালো লাগত। সারা জীবন আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেছি, এখনো রাখি। রায় পক্ষে, বিপক্ষে যেদিকেই যাক শ্রদ্ধা থাকবে। কোর্টে নিজের একটি মামলা আছে বলে এতদিন ছানাকে নিয়ে কিছু লিখিনি। এখনো লিখতে পারলাম না। কিন্তু একজন মানুষ চলে যাওয়ার পরও যদি তাকে স্মরণ করা না যায় তাহলে কেমন হয়। মামলা শেষ হলে ছানাকে নিয়ে অবশ্য অবশ্যই দুই কথা লেখার চেষ্টা করব। কারণ তাকে ঘিরে অনেক স্মৃতি, অনেক কথা বলার আছে।

সুন্দরগঞ্জের সদ্যপ্রয়াত এমপি লিটনের বাড়ি থেকে ফিরছিলাম। মনে হয় ৪টা-সাড়ে ৪টা হবে, হঠাৎই ফোন পেলাম আমাদের মামলার শুনানি ৪ জানুয়ারি। সকালে টাঙ্গাইল থেকে সুন্দরগঞ্জ গিয়েছিলাম তাই আর অত লম্বা পথ ঠেলে রাতে ঢাকা ফেরার ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে মামলার শুনানির কথা শুনে রাতেই ঢাকা ফিরি। ব্যারিস্টার রাগিব রউফ চৌধুরী সাড়ে ৯টায় কোর্টে যেতে বলেছিলেন। কেন যেন জ্যামে পড়ে ৯টা ৪০ শে কোর্টে পৌঁছি। কোর্টে ঢোকার আগেই শুনেছিলাম অ্যাটর্নি জেনারেল দুই সপ্তাহ সময় চেয়েছিলেন। আদালত তাকে এক সপ্তাহ দিয়েছে। কেন যে আমার এই নির্বাচনী মামলায় সব সময় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম অতিরিক্ত তত্পর বুঝতে পারি না। মানুষ হিসেবে তিনি খারাপ নন। কিন্তু কেন অমন করেন জানি না। আমার আইটেম ছিল ১৪। ১৫ নম্বর আইটেমের সময় গিয়েছিলাম। প্রায় ৪০-৪৫ মিনিট বসে ছিলাম। প্রধান বিচারপতির ডান পাশে যে আসনে বজলুর রহমান ছানা বসতেন বার বার সেদিকে চোখ পড়ছিল আর বুকের ভিতর এক অব্যক্ত কান্না গুমরে মরছিল। এই তো কদিন আগে ওই আসনে যিনি বসতেন তিনি আজ নেই। আমরা কেউ স্থায়ী নই। কেন যেন মনে হচ্ছিল কিসের বিচার? কিসের ন্যায়-অন্যায়? দুই দিনের এই দুনিয়ায় কেন এত বাহাদুরি? কেন এত হানাহানি?

৩১ ডিসেম্বর সুন্দরগঞ্জের এমপি মনজুরুল ইসলাম লিটন তার নিজের বাড়ির বৈঠকখানায় ঘাতকের গুলিতে নিহত হয়েছেন। রাস্তাঘাটে কোনো দুর্ঘটনায় কেউ নিহত হলে তাও না হয় কিছুটা সান্ত্বনা থাকে। কিন্তু নিজের ঘরে আততায়ীর গুলিতে সরকারি দলের এমপি নিহত হলে সান্ত্বনা কোথায়? লিটনের ক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়েছে, কোনো সান্ত্বনা খুঁজে পাওয়ার পথ নেই।

লিটনরা সাত ভাইবোন। তিন ভাই ড. তৌহিদুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম, মনজুরুল ইসলাম লিটন; চার বোন আফরোজা বারী, তৌহিদা বুলবুল, লায়লা আক্তার ও ফাহমিদা। লিটন সবার ছোট। পরিবারে খুব একটা শান্তি ছিল তেমন বলা যায় না। পরিবার বলতে বাপ-চাচা, ভাইবোনদের দিক থেকে। স্ত্রীর পরিবারই ছিল বেশি আপন। সেজন্য ভাইবোনদের প্রচুর ক্ষোভ ছিল। বাড়িতে ঢুকেই বড় বোনকে পেয়েছিলাম। কাঁদতে কাঁদতে চোখমুখ রক্তজবা। একেবারে ছোট বোন সরিষাবাড়ীর সাবেক এমপির ছেলেকে বিয়ে করেছেন। একটা ভালো পরিবার। কিন্তু হতাশ এবং অবাক হলাম ভাইবোন ছাড়া আশপাশের কোনো মানুষের চোখেমুখে কালিমা ছিল না। স্ত্রী সৈয়দা খুরশীদ জাহান স্মৃতি কাঁদছিলেন। সরকারি দলের এমপি হওয়ায় রেডিও-টেলিভিশন, পত্রপত্রিকায় ব্যাপক আলোচনার কারণে সারা দেশে ঝড় উঠলেও সুন্দরগঞ্জের নলডাঙ্গা, বামনডাঙ্গায় তেমন শোকের ছায়া দেখিনি। দলীয়ভাবে বিচার চাইছে। বিচার কতটা হবে কেউ বলতে পারে না। তবে পুলিশ প্রকৃত আসামি খুঁজে পাবে বলে মনে হয় না। কারণ পুলিশের দক্ষতার অভাব, ধীরে ধীরে দক্ষ লোক পিছিয়ে পড়ছে। বিশেষ করে পুলিশ বিভাগে দক্ষ লোকের কোনো জায়গা নেই, সব চাটুকার পোঁ ধরাদের জয়জয়কার। এখন তারা বুঝবে শুধু পোঁ ধরলেই চলে না, জ্ঞান-গরিমাও দরকার। অনেক ইলেকট্রনিক মিডিয়া ছেঁকে ধরেছিল। এটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু যেটা অস্বাভাবিক সেটা হলো প্রায় সবাই আমার কাছে বিচার চাইছিল। বলেছিলাম, ‘আপনারা সরকারে। সরকারি দলের এমপি নিজের ঘরে নিহত হয়েছেন। আমার কাছে বিচার চান!’ তারা মানতে রাজি হননি। তাদের কথা আমি দেশ স্বাধীন করেছি, উথাল-পাথাল যাই হোক আমাকে দায়িত্ব পালন করতেই হবে। দায়িত্ব পালনের অর্থ লিটনের হত্যার বিচার। ক্ষোভ-দুঃখ যাই থাকুক, তার পরও তাদের কথা দিয়েছি, আমি আমার সাধ্যমতো করব। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের আইজিকে বলব।

কতদিন হয়ে গেল গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতালরা ভিটেমাটিছাড়া। হাই কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে অত্যাচারীদের হাত-পা বেঁধে দিয়েছে। কিন্তু হাই কোর্ট-সুপ্রিম কোর্টের আদেশ গোবিন্দগঞ্জের সুগার মিলের কর্তৃপক্ষের কাছে খুব সহজে পৌঁছেনি। ওখানকার আদিবাসী সাঁওতাল এবং বাঙালিদের ১৮৪২.৩০ একর জায়গা সুগার করপোরেশনের নামে বরাদ্দ নেওয়া হয়েছিল আখ চাষের জন্য। সেই ১৯৬২ থেকে এযাবৎকাল সুগার মিল কখনো ৫০০ একরের বেশি আখ চাষ করেনি বা করতে পারেনি। আশপাশের দালালদের জমিজমা বরাদ্দ দিয়ে কর্তৃপক্ষ উপরি কামাই করেছে, এখনো করছে। ঘরবাড়িতে আগুন দিয়ে যেখান থেকে সাঁওতালদের বিতাড়িত করা হয়েছিল সেই জমিতে এবারও আখ নয়, অন্য কিছু বোনা হয়েছে। মানে সাঁওতালদের তাড়িয়ে ভূমিদস্যুদের দখল বহাল রাখা আর কি। তাই সেদিন সুন্দরগঞ্জের বামনডাঙ্গা লিটনদের বাড়ি থেকে ফেরার পথে গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতাল পল্লীতে গিয়েছিলাম। তাদের দুর্দশার তেমন লাঘব হয়নি। সুগার করপোরেশনের লোকজন হয়তো তেমন বুক চিতিয়ে চলে না। কিন্তু আড়ালে-আবডালে তাদের কাজ তারা ঠিকই চালিয়ে যাচ্ছে।

দেশে অনেক হত্যা হয়েছে। চোরাগোপ্তা হত্যা আরও হবে। কিন্তু কিছু হত্যা সহ্য করা যায় না। বঙ্গবন্ধুর আমলে পরপর চার সংসদ সদস্য নিহত হয়েছিলেন। একজনকে তো হাজার হাজার মানুষের মাঝে ঈদের মাঠে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। লিটন হত্যা আমার কাছে তার চেয়েও বড় নির্মম, বেদনাদায়ক মনে হয়েছে। হত্যাটি যে সম্পূর্ণ পরিকল্পিত এতে কোনো সন্দেহ নেই। লিটনের বাড়ির সামনে ৫০ গজের মধ্যে ট্রেনলাইন। বাড়িটি বেশ খোলামেলা। শুনেছি এমপি বাড়ি থাকলে সব সময় লোকজন গমগম করত। ৮-১০ জন কাজের লোক।

কিন্তু লিটন যখন মারা যান বা তার ওপর গুলি চলে তখন বৈঠকখানায় কেউ ছিল না। একজন মহিলা ছাড়া বাকি কাজের লোক কেউ ছিল না। পাঁচটা গুলি নিয়ে লিটন বাড়ির ভিতরে দৌড়ে গিয়েছিল। চার দিন পর আমরা গিয়েছিলাম। তখনো বাড়ির উঠানে রক্ত পড়ে ছিল। কেন এমন হলো? এক উদ্ভট ড্রাইভার বলছিলেন, তিনি ঘর থেকে ১৫-২০ হাত দূরে গাড়ি মুছছিলেন। তার সামনেই মাফলারে মুখ বাঁধা এক আততায়ী ছিল। কথা বললে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দিয়েছিল। এমপি লিটনের চিৎকার শুনে সেই ড্রাইভার বাড়ির ভিতরে গিয়েছিলেন কিন্তু এমপির দিকে তাকাননি। গুলি করে যারা পালাচ্ছিল তাদের পিছু ধাওয়া করেছিলেন। সামনে দাঁড়িয়ে থাকাকে ভয়ে ধরার চেষ্টা করেননি, মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যাওয়াকে গাড়ি নিয়ে ধাওয়া করেন— সবই অবিশ্বাস্য। পত্রিকায় নানা রকম নানা রিপোর্ট দেখছি। দেখা যাক কতটা কী হয়। কিন্তু লিটন হত্যা সরকারের জন্য যেমন, দেশের জন্যও তেমন এক ভয়াবহ অশনিসংকেত।

লেখক : রাজনীতিক।

সর্বশেষ খবর