বৃহস্পতিবার, ১২ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

এখনো ওয়ান-ইলেভেনের প্রেতাত্মা

ব্যবসায়ীদের ১২৩২ কোটি টাকা ফেরত দিন

ওয়ান-ইলেভেনের বর্ণচোরা তত্ত্বাবধায়ক শাসনামলে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সরকারিভাবে জোর করে আদায় করা ১২৩২ কোটি টাকা গত এক দশকেও ফেরত না দেওয়ার বিষয়টি নিঃসন্দেহে এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। ওই সময় অস্ত্রের মুখে ভয়ভীতি দেখিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অলিখিতভাবেও কয়েকশ কোটি টাকা আদায় করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনের পর ক্ষমতায় আসা গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের কাছ থেকে অবৈধভাবে আদায়কৃত অর্থ ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও গত আট বছরেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা ওয়ান-ইলেভেনের কুশীলবরা ক্ষমতা থেকে বিদায় নিলেও তাদের প্রেতাত্মাদের অস্তিত্ব রয়ে গেছে। সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের আস্থার সম্পর্কে অন্তরায় সৃষ্টির জন্য তারা কলকাঠি নাড়ায় টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হচ্ছে না। আস্থার সংকট থাকায় স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি সত্ত্বেও ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এগিয়ে আসছে না। সাংবিধানিক সরকার প্রতিষ্ঠার সুফল থেকে বঞ্চিত হওয়ার বিড়ম্বনা ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মধ্যে অসন্তুষ্টি জিইয়ে রাখছে। দেশি বিনিয়োগের গতি বেগবান না হওয়ায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উৎসাহী হয়ে উঠছে না। স্মর্তব্য, ২০০৭ সালের এপ্রিল থেকে ২০০৮ সালের নভেম্বর পর্যন্ত একটি গোয়েন্দা সংস্থা এবং টাস্কফোর্স ইন্টেলিজেন্টস নামের সে সময়কার একটি বিশেষ সংস্থার কর্মকর্তারা ৪০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ১২৩২ কোটি টাকা জোর করে আদায় করে। এ টাকা দুই শতাধিক পে-অর্ডারের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা হয়। গত মেয়াদে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর একাধিক মন্ত্রী জোর করে টাকা আদায়ের ওই ঘটনাকে বেআইনি ও অনৈতিক বলে অভিহিত করেছিলেন। এ টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছিল সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে। প্রধানমন্ত্রীর ইতিবাচক মনোভাব এবং হাই কোর্টের নির্দেশনা সত্ত্বেও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জোর করে আদায় করা অর্থ ফেরত দেওয়ার বিষয়টি আটকে আছে সর্বোচ্চ আদালতে সরকারের আপিল করার কারণে। সরকারের এ উদ্যোগ ব্যবসায়ীদের আস্থায় চিড় ধরার যে হুমকি সৃষ্টি করেছে তা শুধু অবাঞ্ছিত নয় অনাকাঙ্ক্ষিতও বটে। বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থেই এ স্ববিরোধী ভূমিকার অবসান হওয়া উচিত।

সর্বশেষ খবর