শনিবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

দাওয়াতে তাবলিগ ইসলামের প্রাণ

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

দাওয়াতে তাবলিগ ইসলামের প্রাণ

ইসলামের প্রাণ হলো দাওয়াত। আদম (আ.) থেকে শুরু করে মুহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত সব নবী-রসুলের ওপর দাওয়াতে তাবলিগের কাজ আবশ্যক ছিল। আমাদের প্রিয় নবী (সা.)-কে দাওয়াতে তাবলিগের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী! প্রজ্ঞা ও চমৎকার উপদেশের মাধ্যমে তাবলিগ করুন। আর সুন্দরভাবে, উত্তম পন্থায় বিতর্ক করুন। আপনার রব খুব ভালো করে জানেন, কে ভুল পথে আছে আর কে সঠিক পথে।’ (সূরা নাহল : ১২৫)।

আরবি ‘তাবলিগ’ শব্দের অর্থ প্রচার করা, প্রসার করা, পৌঁছিয়ে দেওয়া ইত্যাদি। মানুষের মধ্যে দীন ও শরিয়তের শিক্ষা প্রচার-প্রসার করাকে তাবলিগ বলে। আল্লাহ বলেন, ‘হে রসুল! যা কিছু আপনার রবের পক্ষ থেকে আপনার ওপর নাজিল করা হয়েছে, তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিন। যদি তা না করেন তবে আপনি তার রিসালাতের দায়িত্ব পালন করলেন না।’ (সূরা মায়েদাহ : ৬৭)। আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেন, ‘আমার পক্ষ থেকে (কোরআন-সুন্নাহর) একটি বাণী হলেও পৌঁছে দাও।’ (বুখারি)। যিনি তাবলিগ করেন, তাকে বলে মুবাল্লিগ। মুবাল্লিগের আরেক নাম ‘দায়ি’। আমাদের নবী (সা.) ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ দায়ি। আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী! আমি আপনাকে আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহ্বানকারীরূপে অর্থাৎ দায়ি হিসেবে হেদায়াতের উজ্জ্বল প্রদীপ করে পাঠিয়েছি।’ (সূরা আহজাব : ৪৬)।

দাওয়াত তথা তাবলিগ অনেকভাবে হতে পারে। লেখার মাধ্যমে, বক্তৃতার মাধ্যমে, শিক্ষাদানের মাধ্যমে, প্রতিবেশী ও সহকর্মী এবং সহযাত্রীদের সঙ্গে ভালো আচরণের মাধ্যমেও দাওয়াত হতে পারে। তবে কথার চেয়ে আচার-ব্যবহারের সৌন্দর্যের মাধ্যমে করা তাবলিগ বেশি কার্যকর। ইসলামের সোনালি যুগে মুসলমানদের সৌহার্দ্যপূর্ণ প্রেমময় ব্যবহারে মুগ্ধ হয়েই অমুসলিমরা ইসলাম গ্রহণ করতেন। ওমর (রা.) রসুল (সা.)-কে হত্যা করতে এলে তিনি প্রেমের চাদর বিছিয়ে দিয়ে বললেন, ‘ওমর! এসো! বসো।’ যুদ্ধবিক্ষুব্ধ ওমরের কান তো কখনো এমন প্রেমডাক শোনেনি। খুনের নেশায় মত্ত ওমরকে তো কেউ এভাবে প্রেম মেশানো চাদরে ভালোবাসা ঢেলে দেয়নি। ওমরের মনসাগরে যেন প্রেম জোয়ারের ঢেউ উঠেছে। ওমর (রা.) রসুল (সা.)-এর প্রেমসুলভ আদর্শে মুগ্ধ হয়ে আশারায়ে মুবাশশিরা তথা জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সৌভাগ্যবানদের একজন হয়ে গেলেন।

এমনিভাবে অসংখ্য ঘটনা রয়েছে, যেখানে দায়ির ব্যবহার তথা চরিত্রগুণে মুগ্ধ হয়ে মানুষ দলে দলে শান্তির ধর্ম ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। কিন্তু বর্তমান বিশ্বে এমন অনেক দায়ি আছেন, যাদের কথার সঙ্গে কাজের মিল থাকে না। আমল এবং মুয়ামালাত পরিশুদ্ধ নয় এমন দায়ির সংখ্যাও কম নয়। যারা দাওয়াত অনুযায়ী আমল করেন না তাদের জন্য আল্লাহতায়ালা কঠিন শাস্তি নির্ধারণ করে রেখেছেন। হজরত উসামা (রা.) বলেন, আমি রসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘কিয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে জাহান্নামে ফেলা হবে। গাধা দিয়ে চাকা ঘুরিয়ে গম পেষার মতো তাকে চূর্ণবিচূর্ণ করা হবে। অন্য জাহান্নামবাসীরা এ অবস্থা দেখে বলবে, তুমি কি আমাদের ভালো কাজের আদেশ এবং মন্দ কাজের নিষেধ করতে না? সে বলবে, হ্যাঁ! আমিই সেই দায়ি, যে নিজে ভালো কথা বলে মানুষের হৃদয় জয় করতাম কিন্তু নিজে আমল করতাম না। মানুষ আমার দাওয়াতে প্রভাবিত হয়ে আমাকে পীর-বুজুর্গ মনে করত। আমি অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতাম ঠিক, কিন্তু নিজেই অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। তাই অন্তর্যামী আল্লাহ আজ আমাকে এ শাস্তি দিচ্ছেন।’ (সহি বুখারি : ৭০৯৮)।

দায়িসমাজের উদ্দেশে বলতে চাই, আসুন! আমরা কোরআনে বর্ণিত দায়ির গুণাবলি অর্জন করি। দাওয়াতের সঙ্গে আমলেরও চর্চা করি। তবেই দাওয়াত আমাদের ব্যক্তি ও সমাজের জন্য কল্যাণকর হবে। আমরা হব বিশ্বের বুকে শ্রেষ্ঠ জাতি ও শ্রেষ্ঠ মানুষ। মহান আল্লাহ আমাদের কোরআনে বর্ণিত খাঁটি দায়ি হিসেবে কবুল করুন।

লেখক : মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।

www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর