রবিবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

অজ দিয়ে হালচাষ হয় না

প্রভাষ আমিন

অজ দিয়ে হালচাষ হয় না

বাংলাদেশে ইদানীং অনেক রকম মেলা বা উৎসব হয়। এর মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় উৎসবটি হয় বছরের প্রথম দিনে— বই উৎসব। বছরের প্রথম দিনেই লাখ লাখ শিক্ষার্থীর হাতে কোটি কোটি বই পৌঁছে দেওয়া শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্বেই অনন্য এক উদাহরণ। আমরা ছেলেবেলায় নতুন বই খুব একটা পেতাম না।  বড় ভাই-বোনের বই বা প্রতিবেশী সিনিয়র কারও বই দিয়েই চালাতে হতো। পুরনো বইও আমরা অনেক যত্নে বাঁধাই করে রাখতাম। বই বাঁধাইয়ের জন্য ক্যালেন্ডার বা সোভিয়েত ইউনিয়নের পত্রিকা ‘উদয়ন’ সংরক্ষণ করতাম। পুরনো হলেও সেগুলো আমাদের জন্য ছিল নতুন বই। সেই বই নিয়েই আমাদের সে কি উচ্ছ্বাস, সে কি আবেগ। এখনকার শিক্ষার্থীদের আমি হিংসা করি। বছরের প্রথম দিনেই তারা পেয়ে যায় একদম নতুন বই, একদম বিনে পয়সায়। আহ, নতুন বইয়ের গন্ধটাই কেমন মন ভালো করে দেয়।

কিন্তু শিক্ষার্থীদের আনন্দ মুহূর্তেই ম্লান হয়ে যায় পাঠ্যপুস্তক বিতর্কে। নতুন বইকে ঘিরে নতুন নতুন বিতর্ক। এবারের বিতর্কের অনেক ধরন আছে। কিছু আছে নির্দোষ ভুল, কিছু আছে সংশ্লিষ্টদের অদক্ষতা, কিছু আছে অমার্জনীয় ভুল, আর কিছু আছে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আসলে শিশু-কিশোরদের পাঠ্যবই একেবারে নির্ভুল হওয়াটাই প্রত্যাশিত। কারণ ছেলেবেলায় শিশুরা পাঠ্যবইয়ে যা দেখে, তা সারা জীবন তার মাথায় গেঁথে যায়। বছরের প্রথম দিনেই ৩৬ কোটি বই পৌঁছে দেওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। কিন্তু এটা তো আগেই জানা। তাই বই লেখা, সম্পাদনা, পরিমার্জনের জন্য তো আপনি পর্যাপ্ত সময় পান। তাই ভুল যত ছোটই হোক, তার পক্ষে কোনো সাফাই গ্রহণযোগ্য নয়। পাঠ্যবইয়ের সব ভুলই অমার্জনীয়, সব ভুলই বড়। কিন্তু এবার এত বড় বড় অপরাধ হয়েছে যে, ছোটখাটো বানান ভুল বা অসঙ্গতি নিয়ে আলোচনা করারই আসলে অবকাশ নেই। পাঠ্যবইয়ে বাংলা একাডেমির বানান রীতি অনুসরণের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সব ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। ‘কি’ এবং ‘কী’-এর পার্থক্য সব জায়গায় রক্ষিত হয়নি। ‘ঘোষণা’ হয়ে গেছে ‘ঘোষনা’। ‘সমুদ্র’ হয়ে গেছে ‘সমূদ’। এ ধরনের অসংখ্য অসঙ্গতি আর ভুল ছড়িয়ে আছে পাতায় পাতায়।

পাঠ্যবইয়ে একটি বড় অপরাধ হলো জীবনানন্দ দাসের মা কুসুমকুমারী দাসের বিখ্যাত কবিতা ‘আদর্শ ছেলে’র বিকৃতি। আপনি অনেক কিছুই করতে পারেন, একজন কবির কবিতা তো পাল্টে দিতে পারেন না। ‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে’ কে বদলে ‘আমাদের দেশে সেই ছেলে কবে হবে’ লিখলে সেটা আর কবিতা থাকে না, তাতে ছন্দ থাকে না। শুধু প্রথম লাইন নয়, বিখ্যাত ও পাঠকপ্রিয় এ কবিতায় আরও অনেক বিকৃতি ঘটানো হয়েছে। পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের এক সদস্য এক টকশোতে বলেছেন, বাংলা একাডেমির অনুমতি নিয়েই কুসুমকুমারী দাসের কবিতায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। হাঁ হাঁ হাঁ। কী অদ্ভুত যুক্তি! বাংলা একাডেমিকেই কে দিয়েছে কুসুমকুমারী দাসের কবিতা বিকৃত করার অধিকার? যে কবিতা বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের মুখস্থ, সে কবিতা এখন আবার নতুন করে পড়তে হবে?

তবে পাঠ্যপুস্তক বিতর্কে ওড়না বা অজ নিয়ে যতটা আলোচনা হচ্ছে, ততটা আলোচনা হচ্ছে না মূল অপরাধ নিয়ে। এসব খুচরা আলোচনায় আড়ালে চলে যাচ্ছে, সাম্প্রদায়িক শক্তির কাছে পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের ঘটনা। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে ২০০৩ সালে পাঠ্যপুস্তকে ব্যাপক পরিবর্তন আনে। প্রতিটি শ্রেণির বাংলা সাহিত্যের বইয়ে ধর্মীয় বিষয় ও ভাবধারা যুক্ত করা হয়। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে পাঠ্যপুস্তক সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণয়ন করে। এর আলোকে নতুন পাঠ্যবই ছাপা হয় ২০১২ সালে, যা শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছায় ২০১৩ সালে। কিন্তু মাত্র চার বছরের মাথায় আবার খোলনলচে পাল্টে ফেলা হয়েছে পাঠ্যবইয়ের। কেন এত তাড়াহুড়া করে পাঠ্যবই বদলাতে হলো? এই প্রশ্নের উত্তরেই লুকিয়ে আছে সাম্প্রদায়িকতার ভূত। পাঠ্যসূচি থেকে সাম্প্রদায়িকতার ভূত তাড়িয়ে অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল করার যে উদ্যোগ তাতে তীব্র প্রতিবাদ জানায় হেফাজতে ইসলাম। ২০১৩ সালে গণজাগরণ মঞ্চের কাউন্টার হিসেবে গড়ে ওঠা চরম মৌলবাদী সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকায় তারা অবস্থান নিয়েছিল। কিন্তু সরকার কৌশলে তাদের হটিয়ে দেয়। আদর্শ বিবেচনায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের আকাশ-পাতাল ফারাক। আদর্শিক প্রশ্নে হেফাজত বরং অনেক বেশি বিএনপির কাছাকাছি। ২০১৩ সালের ৫ মের পর ধারণা করা হয়েছিল, হেফাজতে ইসলাম সারা জীবনই আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হয়ে থাকবে। কিন্তু বাস্তবে ঘটল উল্টা। আড়ালে-আবডালে আওয়ামী লীগ সমঝোতা করল হেফাজতের সঙ্গে। এতদিন আমরা ধরে নিয়েছিলাম ক্ষমতায় থাকার স্বার্থে আওয়ামী লীগ হয়তো হেফাজতে ইসলামকে নিজেদের পক্ষে রাখতে চাইছে। কিন্তু এবারের পাঠ্যবই দেখে আমার মনে হচ্ছে, আওয়ামী লীগ আসলে হেফাজতে ইসলামের কাছে জিম্মি। আওয়ামী লীগই এখন হেফাজতে ইসলামের সবচেয়ে বড় হেফাজতকারী।

২০১৩ সালে ছাপানো পাঠ্যবইয়ের বিভিন্ন বিষয়ে প্রবল আপত্তি ছিল হেফাজতে ইসলামের। গত বছরের ৮ এপ্রিল হেফাজতে ইসলামের এক বিবৃতিতে পাঠ্যসূচি নিয়ে তাদের আপত্তি সুনির্দিষ্টভাবে তুলে ধরে। রীতিমতো গবেষণা করে তৈরি করা বিবৃতিতে বলা হয়, ‘দেশ ও জাতি গঠনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় সরকার ধর্মীয় শিক্ষাকে শুধুই সংকোচন করেনি, বরং ইসলাম ধর্মবিষয়ক এবং মুসলিম সংস্কৃতির প্রতি উদ্দীপনামূলক গল্প-রচনা ও কবিতাসমূহও বাদ দিয়ে তদস্থলে নাস্তিক্যবাদ ও হিন্দুত্ববাদের প্রতি উদ্দীপনামূলক বিভিন্ন রচনা, গল্প ও কবিতা যুক্ত করেছে। বর্তমানে স্কুল পাঠ্যপুস্তকে মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীদের নাস্তিক্যবাদ ও হিন্দুতত্ত্বের পাঠ দেওয়া হয়ে থাকে। তাদের পড়ানো হয়, গরুকে মায়ের সম্মান দিয়ে ভক্তি করার, পাঁঠাবলির নিয়মকানুন, হিন্দু বীরদের কাহিনী, দেব-দেবির নামে প্রার্থনা এবং হিন্দুদের তীর্থস্থান ভ্রমণ করার। এর মাধ্যমে কোমলমতি কোটি কোটি মুসলমানের সন্তানকে ইসলামবিদ্বেষী মানসিকতার পাশাপাশি নাস্তিক্যবাদ ও হিন্দুত্ববাদের শিক্ষা দিয়ে ইমানহারা করার চেষ্টা চলছে। দেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জাতিসত্তার বিরুদ্ধে এটা ভয়াবহ ষড়যন্ত্র। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা চালু থাকলে কোটি কোটি মুসলমানের সন্তান ইমানহারা হয়ে যাবে।’ বিবৃতিতে ২০১৩ সালে বাদ দেওয়া হয়েছিল এমন ১৭টি গল্প-কবিতা-প্রবন্ধের তালিকা দিয়ে এ ব্যাপারে তাদের আপত্তি তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি নতুন অন্তর্ভুক্ত ১২টি গল্প-কবিতা-প্রবন্ধের ব্যাপারেও তাদের আপত্তি তুলে ধরা হয়। বাদ পড়া ও অন্তর্ভুক্ত হওয়া প্রতিটি গল্প-কবিতা-প্রবন্ধের ব্যাপারে তাদের আপত্তির সুনির্দিষ্ট কারণও তুলে ধরা হয় বিবৃতিতে। যেমন পঞ্চম শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়া হুমায়ুন আজাদের ‘বই’ কবিতা সম্পর্কে হেফাজতের বিবৃতিকে বলা হয়, “স্বঘোষিত নাস্তিক হুমায়ুন আজাদ লিখিত ‘বই’ নামক একটি কবিতা, যা মূলত মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ পবিত্র কুরআনবিরোধী কবিতা।” লালনের গান সম্পর্কে বলা হয়েছে, “নবম-দশম শ্রেণীতে পড়ানো হচ্ছে ‘সময় গেলে সাধন হবে না’ শিরোনামে বাউলদের বিকৃত যৌনাচারের কাহিনী”। হেফাজতের আপত্তির ১৭টি লেখাই ফিরিয়ে আনা হয়েছে। আর বাদ দেওয়া হয়েছে, তাদের আপত্তির ১২টি লেখাই। তার মানে হেফাজতের দাবি একশভাগ মেনে নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াত জোট আমলের শিক্ষাক্রম আবার ফিরে এসেছে। কী মজার, হেফাজতকে এখন আর দাবি আদায় করতে হলে ১০ লাখ নিয়ে ঢাকায় আসতে হয় না। বিবৃতি দিলেই হয়। আলোচিত বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছিল, ‘স্কুল-কলেজে বিদ্যমান পাঠ্যবই বহাল থাকলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শুধুই ইমানহারা হয়ে গড়ে ওঠবে না, বরং ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদী ও হিন্দুত্ববাদী মানসিকতা নিয়ে বেড়ে উঠবে।’ কিন্তু আমাদের এখন শঙ্কা, পাঠ্যবইকে সাম্প্রদায়িকীকরণের যে ধারা শুরু হলো, তা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আরও বেশি জঙ্গি ভাবধারায় প্রভাবিত হবে।

পাঠ্যবই নিয়ে বিতর্ক ওঠার পর মন্ত্রণালয় ও বোর্ড একাধিক কমিটি গঠন করেছে। সেই কমিটি হয়তো বানানের অসঙ্গতি দূর করবে বা কুসুমকুমারী দাসের কবিতা ঠিক করবে। শিক্ষামন্ত্রী নিজেও সংবাদ সম্মেলনে এ আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু হেফাজতের যে দীর্ঘ কালো অপছায়া পড়েছে পাঠ্যবইয়ে তা দূর করা যাবে কীভাবে? আমি দাবি জানাচ্ছি, একটা তদন্ত কমিটি গঠন করা হোক, সরকারের ভিতর বসে কারা হেফাজতের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে, তাদের খুঁজে বের করার জন্য। আওয়ামী লীগ হেফাজতকে যতই তোয়াজ করুক, এটা নিশ্চিত তাদের ভোট কখনই পাবে না তারা। বরং অসাম্প্রদায়িক চেতনা থেকে দূরে সরে গেলে আওয়ামী লীগের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হতে পারে। কথায় বলে সামনে দিয়ে মশা গেলে আমরা লাফ দিয়ে ধরি, পেছন দিয়ে হাতি গেলেও টের পাই না। হেফাজতের কাছে আওয়ামী লীগের আত্মসমর্পণ দেখলে আমার সে কথাই মনে হয় বারবার।

বাংলাদেশের আল্ট্রা সেনসেটিভ নারীবাদীরা এমনকি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বীরপুরুষ’ কবিতা নিয়েও আপত্তি করছেন। আমি নারীবাদী নই, মানবতাবাদী। তাই ‘বীরপুরুষ’ নিয়ে আমার আপত্তি নেই। প্রথম শ্রেণিতে ‘ও’তে ওড়না এবং বাক্য হিসেবে ‘ওড়না চাই’ নিয়েও নারীবাদীদের প্রবল আপত্তি। তবে আমি বিষয়টিকে নারীবাদের দৃষ্টিতে দেখতে চাই না। বিষয়টিতে লুকিয়ে আছে সামগ্রিক সাম্প্রদায়িকতার বিষ।

পাঠ্যপুস্তকগুলোতে সংকলন, রচনা, সম্পাদনা, পরিমার্জনে অনেকের নাম লেখা আছে। তাদের অনেককেই আমরা চিনি না। চিনতেই হবে, এমন কোনো কথাও নেই। তারা দক্ষতার সঙ্গে তাদের কাজটা করলে আমাদের কোনো আপত্তি থাকত না। কিন্তু ইতিমধ্যেই তাদের যোগ্যতা, দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আমরা জানতে চাই, তারা কোন প্রক্রিয়ায়, কোন যোগ্যতায় নির্বাচিত হয়েছেন? বইগুলো প্রেসে পাঠানোর আগে তারা কি পড়ে দেখেছেন? নাকি সই দিয়ে, টাকা নিয়ে দায়িত্ব সেরেছেন? বিতর্ক ওঠার পর ইতিমধ্যে একাধিক ব্যক্তিকে বরখাস্ত করা হয়েছে। কিন্তু আমার ধারণা জন্মেছে, আসল দুষ্টক্ষত এখনো আড়ালেই রয়ে গেছেন। যিনি অজকে আম গাছে তোলার ছবি এঁকেছেন, সেই আর্টিস্ট বরখাস্ত হয়েছেন। কিন্তু অজকে আম গাছে ওঠার নির্দেশটা দিল কে?

এবারের পাঠ্যপুস্তক বিতর্কে আমি একটা নতুন শব্দ শিখেছি। ‘অজ’ মানে যে ছাগল, এটা আমি আগে জানতাম না। ছেলেবেলায় জেনেছি, ছাগলে কি না খায়। কিন্তু অজ যে গাছে উঠে আমও খায়, এটা জানা ছিল না।  আরেকটা বিষয় শুনে এসেছি, ছাগল দিয়ে হালচাষ হয় না। এখনকার শিশুরা অবশ্য শিখবে, অজ দিয়ে হালচাষ হয় না।  অজ দিয়ে যে সত্যিই হালচাষ হয় না, এটা আমাদের নীতিনির্ধারকরা যত তাড়াতাড়ি শিখবেন, জাতির জন্য ততই মঙ্গল।

লেখক : সাংবাদিক।

[email protected]

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর