মঙ্গলবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

মুক্তিযোদ্ধাদের কি বিড়ম্বনার শেষ নেই?

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

মুক্তিযোদ্ধাদের কি বিড়ম্বনার শেষ নেই?

সুপ্রিম কোর্টে আমাদের একটা নির্বাচনী মামলা চলছে। যতদিন চলার ছিল তার চেয়ে বেশি চলছে। তা চলে চলুক। ওসব নিয়ে কিছু বলার নেই। উম্মি মানুষ আমি। তাই এ কদিন হাই কোর্ট, সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত নয়, বরং অনেক লাভবান হয়েছি। কত পরিচিত-অপরিচিত উকিল, জজ, ব্যারিস্টারের সঙ্গে দেখা— এও কি কম কথা। কোর্টে কতরকম কথা হয়। জনাব মাহবুবে আলমকে বহু বছর জানি-চিনি, মানুষ হিসেবে কখনো খারাপ মনে হয়নি, এখনো মনে হয় না। কিন্তু এই মামলায় কেন এত অতিরিক্ত আগ্রহ দেখালেন বা দেখাচ্ছেন বুঝতে পারলাম না। প্রথম তিনি ইলেকশন কমিশনের পক্ষ নিয়েছিলেন, তারপর বলতে গেলে ব্যাংকের উকিলের মতো কাজ করেছেন। ১১ জানুয়ারি মামলাটি যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে এখন আর আমার কিংবা ব্যাংকের কোনো কাজ নেই। এখন মামলাটি একটি সাংবিধানিক ব্যাপার। এখন অ্যাটর্নি জেনারেল কী করবেন। তবে একবার তিনি হাই কোর্টে বলেছিলেন, সরকারি উকিল হিসেবে সব মামলায় তিনি অংশ নিতে পারেন। তা নিন। আমরা আপত্তি করতে যাব কেন। আমি মুখ দেখাদেখি চাই না, আমি ন্যায়বিচার চাই।

প্রকৃতপক্ষে চুলচেরা বিচার করলে ব্যাংক আমাদের কাছে ৮০-৯০ লাখ টাকা পেলেও পেতে পারে। কিন্তু আইনের বাইরে গিয়ে সুদের ওপর সুদ, চক্রবৃদ্ধি সুদ এবং দু-তিন জায়গায় ভুল হিসাব দেখিয়ে ১০.৮৮ কোটি টাকা দাবি করেছে। আমারও দু-এক বার সত্যি খারাপ লেগেছে যখন মাহবুবে আলম বলছিলেন, ‘অতগুলো টাকা’। আমাদের ১০.৮৮ কোটি তার কাছে অতগুলো টাকা, কিন্তু ৫০০ কোটি টাকা যাদের ঋণ তাদের আইন করে ১২ বছরের জন্য রেয়াত দিয়েছে। বছরও ঘোরেনি, জিনের বাদশাহদের ৫ হাজার কোটি ২৫ বছরের জন্যে ব্লক্ড করেছে— সেগুলো বেশি নয়? যেহেতু রাজনীতি করি, যেহেতু আমরা মুক্তিযোদ্ধা সেহেতু আমাদের ১০.৮৮ কোটি অনেক টাকা, আসমান ভেঙে পড়ার মতো। মাহবুবে আলমের ওসব কথা পেছনে বসে শুনছিলাম। আমাদের অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী ওভাবে বলা নিয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন। কীভাবে যেন মাননীয় প্রধান বিচারপতিও বিষয়টা লক্ষ্য করে মাহবুবে আলম সাহেবকে ওভাবে না বলতে অনুরোধ করেন। দুই পক্ষের উকিল, ব্যারিস্টার ও জজ সাহেবদের কথা কিছুটা তো হৃদয়ঙ্গম করেছি। তাতে লাভ ছাড়া ক্ষতি হয়নি। সর্বোচ্চ আদালত স্বাধীনভাবে অগ্রসর হয়, এটাই সবার কামনা বা প্রত্যাশা।

 

 

১২ জানুয়ারি লন্ডন থেকে বড় মেয়ে কুঁড়ি এসেছে। দীপ-কুশি এবং আমি আনতে গিয়েছিলাম। ছেলেমেয়ে ভিআইপি রুমে বসেছিল। আমি গিয়েছিলাম বোডিং ব্রিজের কাছে। বিমানবন্দরের বেশ কয়েকজন মাঝে মাঝেই ছুটে এসে ছবি তুলছিলেন। বিমান ব্রিজে লেগে গেলে দুজন আমায় এক জায়গায় দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘এখান থেকে অনেক দূর দেখতে পাবেন।’ সত্যিই তাই। লন্ডন থেকে সিলেট হয়ে বিমানটি এসেছিল। শতকরা ৯০ ভাগ প্যাসেঞ্জার সিলেটের। তারা সেখানে নেমে গেছেন। তাই জাহাজ ছিল প্রায় ফাঁকা। ৮-১০ জনের পরই মেয়ে আমার বেরিয়ে আসে। হঠাৎ ওর ছবির মতো মুখ চোখে পড়ায় দেহ-মনে ঝিলিক দিয়ে উঠেছিল। কুঁড়ির জন্ম ১০ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯০। ওকে নিয়ে ওর মা নাসরীন যেদিন দমদমে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোস বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন, সেদিন কাপড়ে জড়ানো এক টুকরো মাংসের মতো ছিল। হাত-পা-আঙ্গুলগুলো ছিল কলমের চেয়েও সরু, ছোট ছোট। সেদিন কাপড়ে জড়ানো ওকে দেখে যেমন মনে হয়েছিল, ১২ জানুয়ারিও প্রায় অনেকটা সে রকমই লেগেছিল। দুই বোন কাছাকাছি হলে সে কী আলাপ! বছরের কথা যেন তখনই শেষ করে ফেলবে। মেয়ের জন্য মা তো ফোনের ওপর ফোন করেছিল, ‘কোথায়, কুঁড়ি কখন আসছে, দেখেছ কিনা, মেয়েটা শুকিয়ে যায়নি তো?’ সব মায়ের মন অমনই হয়, অমনই করে। অনেক বাপের মনও মায়ের মতো করে— যা সবাই জানে না, বোঝে না। প্রায় বছরখানেক পর বাড়িটা বেশ আলোকিত, ভরা ভরা হয়ে আছে। আল্লাহ যেন সবার বাড়িঘর এমনই আনন্দে-খুশিতে হারা-ভরা রাখেন। মনে হয় নতুন বছরের প্রথম মাসটা মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বড় বেশি নাড়াচাড়া হবে। কেন এমন হয় বা হচ্ছে, তাও বুঝি না বা বুঝতে পারি না। কিন্তু হচ্ছে। ১৯৯৮-৯৯ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের ২০০০ টাকা সম্মানী ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দাবি করেছিলাম। তখন নিন্দুকেরা বোনকে দিয়ে আমাকে পাগল-ছাগল বলাতে সক্ষম হয়েছিলেন। পাগল-ছাগল গালি শুনে ‘ভ্যা ভ্যা’ করার স্বভাব দিয়ে আল্লাহ আমায় দুনিয়ায় পাঠাননি। তাই আওয়ামী লীগ ছেড়ে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ গঠন করেছি। আজ সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা ১০ হাজার। বাজারদর হিসাবে আমি যখন ২০০০ চেয়েছিলাম, সে অনুপাতে এখন ৫০-৬০ হাজার হওয়া উচিত। আমার বিশ্বাস, এ সরকারই এই বছর শেষের দিকে জাতীয় নির্বাচনের আগে আগে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা ৫০ হাজার অথবা তারও বেশি করবে। আমার কথায় নয়, তারা তাদের নিজেদের প্রয়োজনেই তা করবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা নিয়ে। আসলে মুক্তিযোদ্ধাদের এখন পর্যন্ত কোনো সঠিক তালিকা নেই। ছেলেবেলা থেকে শুনে আসছি, কাকের মাংস কাকে খায় না। কিন্তু চরম দুর্ভাগ্য, মুক্তিযোদ্ধাদের মাংস মুক্তিযোদ্ধারা খান এবং তা সব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যারা যখন সরকারে আসেন, তারাই তখন তাদের পক্ষের লোকজনকে মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত করেন। একসময় আওয়ামী লীগ সমর্থক আহাদ চৌধুরী। আহাদ চৌধুরী তেমন বড় মাপের মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। কোনো দিন কোনো যুদ্ধে অংশ নেননি। প্রধান সেনাপতি আতাউল গনি ওসমানীর বোচকা টানতেন, তার বেশি কিছু নয়। তিনি হয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান। আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়ে ধরাকে সরা জ্ঞান করতেন।

আওয়ামী লীগের শাসনামলে তার এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বাক্ষরে লক্ষাধিক সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়। পরবর্তীতে বিএনপি সরকার আসার সঙ্গে সঙ্গে স্থগিত হয়ে যায়। বিএনপি আমলে আবার শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী এবং সচিবের স্বাক্ষরে নতুন সার্টিফিকেট ইস্যু। মুসলিম লীগ ঘরানার মন্ত্রী এবং সচিবের ইস্যু করা সার্টিফিকেটও এখন বাতিল। যারা আছেন তো আছেনই, আবার নতুন করে একপ্রস্থ সার্টিফিকেট ইস্যু করার পাঁয়তারা চলছে। মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার ফরমের শর্ত দেখলে হাসিও পায়, আবার কান্নাও আসে। ‘কোথায় কার কাছে ভর্তি হয়েছেন, কোথায় অস্ত্র জমা দিয়েছেন, কয়টা গুলি ছুড়েছেন, কয়টা শত্রু মেরেছেন’— এমনি উদ্ভট নানা প্রশ্ন। ওসব নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই, আমার মাথাব্যথা কাদেরিয়া বাহিনী নিয়ে। ২৪ জানুয়ারি, ১৯৭২ টাঙ্গাইলে এসে বিন্দুবাসিনী স্কুল মাঠে কাদেরিয়া বাহিনীর অস্ত্র নিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমি সরকারি কর্মচারীদের কথা শুনব না, মুক্তিযোদ্ধারা যা বলবে তাই শুনব। তাদের যথাযথ সম্মান দেব। যারা পড়তে চায় তারা লেখাপড়া করবে, যারা চাকরি করতে চায় তারা চাকরি করবে।’ কিন্তু চাকরি-বাকরি দূরের কথা, এখন কাদেরিয়া বাহিনীর যোদ্ধারা তালিকাভুক্তই হতে পারছেন না। কাদেরিয়া বাহিনীর সদস্যদের যাচাই-বাছাই কারা করবেন, যাদের অনেকের মুক্তিযুদ্ধের সময় জন্মই হয়নি। টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, ঢাকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে কাদেরিয়া বাহিনী ছাড়া আর কোনো মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। এখন যারা জেলা, উপজেলা কমান্ডার তাদের শতকরা ৯০ জন মুক্তিযোদ্ধা নন। যারাও বা মুক্তিযোদ্ধা তারাও এত নিম্নমানের যে, তাদের সঙ্গে যারা ছিলেন তাদের ছাড়া অন্য কাউকে চেনা-জানার কথা নয়, যুদ্ধ পরিচালনা দূরের কথা। আরও সমস্যা, ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ঘাতকের হাতে নির্মমভাবে নিহত হলে তার প্রতিবাদ করায় কাদেরিয়া বাহিনীর একজনও সেই চরম সময় মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত হওয়ার সুযোগ পাননি। বঙ্গবন্ধু সমর্থকদের তখন মাটির ওপরে থাকা দুষ্কর হয়ে পড়েছিল, তার ওপর আবার কাদেরিয়া বাহিনী। কথাগুলো মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীকে বলেছি, চিঠি দিয়েছি। এতদিনে নানাভাবে কাদেরিয়া বাহিনীর ৭-৮ হাজার তালিকাভুক্ত হয়েছেন। এখনো প্রায় ১০-১১ হাজার তালিকার বাইরে পড়ে আছেন। সেদিন হঠাৎই বাসেত সিদ্দিকীর ছেলে ফোন করেছিল, ‘কাক্কা, ঘাটাইলে মুক্তিযোদ্ধা তালিকা যাচাই-বাছাই হবে। আমি কী করব?’ শুনে সত্যিই খুব হতবাক হয়েছিলাম। মুক্তিযুদ্ধে ঘাটাইলের শেওড়াবাড়ীর বাসেত সিদ্দিকীর বাড়ির লোকজনেরা যে অবদান রেখেছেন, শুধু তার পরিবার-পরিজন নয়, সে সময় তার বাড়ির জীবজন্তুকেও যদি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য করা হতো বা হয় তাহলেও কম করা হবে। জানি না, বাসেত সিদ্দিকীর ছেলেকে কারা যাচাই-বাছাই করে মুক্তিযোদ্ধা অথবা অমুক্তিযোদ্ধা বলবেন। বেঁচে থেকে এসব দেখে দেখে বড় কষ্ট হয়। বাসেত সিদ্দিকী মুক্তিযোদ্ধা নন, তার যাচাই-বাছাই কে করবেন, আমার যাচাই কীভাবে হবে আল্লাহ মালুম।

অষ্টম জাতীয় সংসদের নবম অধিবেশনের চতুর্থ বৈঠকে ১৬ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার ৭১ বিধিতে বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথ মূল্যায়ন ও সাময়িক সনদপত্র প্রদান প্রসঙ্গে একটি নোটিস গৃহীত হয়েছিল। তখন মন্ত্রী ছিলেন মুসলিম লীগ ঘরানার মোহাম্মদ রেজাউল করিম। তিনি নোটিসের উত্তরে বলেছিলেন, ‘বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা নির্ভুল ও সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্তকরণের মাধ্যমে গেজেট প্রকাশের উদ্দেশ্যে ১৯ মার্চ, ২০০২ তারিখে সরকারপ্রধানের অনুমতিক্রমে জাতীয় পর্যায়ে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করে। এ ছাড়া জেলা, উপজেলা পর্যায়েও দুটি কমিটি গঠিত হয়েছে। জাতীয় কমিটির সদস্য মোট ১৫ জন।’

হঠাৎ মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ভালোই হয়েছে। চারদিক থেকে যে বিশাল অঙ্কের টাকা যাচাই-বাছাই কমিটির লোকজন নেওয়া শুরু করেছিলেন তা অনেকটা বন্ধ হবে। কিন্তু এমপি সাহেবদের নেতৃত্বে অথবা তার মনোনীত যে কমিটি হবে তারা কী করবে। যেহেতু বেঁচে আছি, শত শত মুক্তিযোদ্ধা ছুটে আসেন, তারা কীভাবে তালিকাভুক্ত হবেন। একেবারে নিচে থেকে ৫-১০ হাজার করে নেওয়া শুরু হয়েছিল। আবার হয়তো নতুন করে শুরু হবে। আরও এক সমস্যা দেখা দিয়েছে, যারা বছরের পর বছর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে ভাতা পেয়ে আসছেন, তারাও  ছোটাছুটি করছেন তাদের নতুন করে যাচাই-বাছাই হবে কিনা। এখন তো দেখছি মুক্তিযোদ্ধা হওয়া এক মস্তবড় বিড়ম্বনা। স্বাধীন দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের এত লাঞ্ছিত হতে হবে ভাবাই যায় না। জাতির পিতার প্রতিশ্রুতি এভাবে মাঠে মারা যাবে কেউ কল্পনা করতে পারে। অথচ তাই হচ্ছে। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের আজকাল যাচাই-বাছাই করবেন অমুক্তিযোদ্ধা অথবা মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের সন্তান-সন্ততিরা। কারণ, সরকারি অফিসার হলে তার মর্যাদাই আলাদা। ডিসি, ইউএনও হলে তো আর কোনো কথাই নেই। কবে জাতি এবং জাতির কল্যাণে মুক্তিযোদ্ধারা এই বিড়ম্বনার হাত থেকে মুক্তি পাবেন ভেবে পাই না। মাঝে মাঝে কেন যেন চিন্তার দুয়ারে আঘাত হানে, মুক্তিযুদ্ধ করা কাদেরিয়া বাহিনীর সদস্যরা, আমি বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ প্রতিরোধ করায় বঞ্চিত হলাম, এখনো তালিকাভুক্ত হতে পারলাম না। ’৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিরোধযোদ্ধা জাতীয় মুক্তিবাহিনীর সদস্যরাও শুধু আমার কারণে সরকারের কুনজরে পড়ে সর্বস্বান্ত হলেন। তাহলে কি আমি সবার জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ালাম? ’৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিরোধ গড়ে না তুললে হাজার হাজার সীমান্তবাসী তাদের ঘরবাড়ি হারা হতেন না, সে সময় সরকার সমর্থক টাউট-বাটপাড়রা উপজাতিদের বিষয়-সম্পত্তি দখল করে নিতে পারতেন না, হামলা-মামলা করে তাদের ঘরছাড়া করতে পারতেন না। আশা করেছিলাম, বঙ্গবন্ধুর জন্য যারা জীবনপাত করেছেন বঙ্গবন্ধুর কন্যার সরকারের সময় তারা বিচার পাবেন, তাদের লুটপাট করে নেওয়া বিষয়-সম্পত্তি ফেরত পাবেন এবং সম্মানের সঙ্গে মাথা উঁচু করে বাঁচবেন। কিন্তু সবকিছুতেই যখন বাধা তখন কিছুটা হতাশ না হয়ে পারি না। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছি মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্তি এবং ’৭৫-এর প্রতিরোধ সংগ্রামীদের যথাযোগ্য মর্যাদা কীভাবে দেওয়া যায়, তার একটা যুক্তিযুক্ত পদক্ষেপ নিতে। অপেক্ষায় আছি, কবে আসবে সেই শুভদিন।

     লেখক : রাজনীতিক।

সর্বশেষ খবর